সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার ১১টি থানার স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলো এখন করোনা আতঙ্কে রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে এখন মাত্র ১৮ জন রোগী ও কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ১০০ শয্যা ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ২২ জন রোগী। এমন অবস্থা থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্সগুলোর। ফলে ডাক্তার ও নার্সরা অলস সময় পার করছেন। জনাকীর্ণ হাসপাতালগুলোতে চলছে নিস্তব্ধতা।
জানা গেছে, ভয়াবহ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে জেলার উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতাল গুলোর বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীরা ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ সর্দি-কাশি হলে ভয়েই হাসপাতালে আসতে ভয় পাচ্ছে। আবার এসব হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার নার্সরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় রোগী ভর্তিতে তারা উৎসাহ দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েকদিন পূর্বেও যেখানে হাসপাতাল আঙিনায় রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যেত এখন যেন শুনসান নীরবতা। সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) মাত্র ১৮ জন রোগী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১০ টি আইসোলেশন বেড তৈরি করে রাখলেও কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষার জন্য সনাক্তকরণ কীট এখন পর্যন্ত হাসপাতালে পৌঁছেনি।
এসময় মেডিসিন ওয়ার্ডে সিনিয়র নার্স সাংবাদিককে জানান, এখানে ২৯ টি বেড থাকলেও করোনা আতঙ্কে সব রোগীর ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। বর্তমানে একজন রোগী রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা যায়, এই ওয়ার্ডে সব সময় ৪০-৫০ জন রোগী থাকতো কিন্তু করোনার ভয়ে অনেক রোগী চলে গেছে। মাত্র ৪ জন রোগী আছে। গাইনি ওয়ার্ডে ১১ জন ও সিসিইতে ২ জন ভর্তি আছে।
জেলার কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিকে করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে হাসপাতাল মুখী হচ্ছেনা রোগীরা। এ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ ও বহিঃ বিভাগ রোগী শুন্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ২ জন ও মহিলা ওয়ার্ডে কোন রোগী দেখা যায়নি। হাসপাতালে যেসব রোগী আছে তাদের আত্মীয়-স্বজন আসতে না পারায় তারাও ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিনিয়ত যেখানে হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতো, সেখানে রোগীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই হাসপাতাল মুখী হচ্ছে না।
কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা মোমেনা পারভীন জানান, করোনা আতঙ্কের ভয়ে বাড়ি থেকে কেউ বের হতে না পারলেও আমাদের স্থানীয় ডাক্তারদের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এটা সত্য যে, এখন করোনা আতঙ্কে রোগী শুন্য হয়ে পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। একই অবস্থা থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্স গুলোর।
সেই সাথে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে না গিয়ে তাবিজ-কবজ, পানি পড়া, কিংবা কবিরাজি ওষুধ খেয়ে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এতে করোনা ছাড়াও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষদের মৃত্যু মিছিলে যোগ দেবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাই তাদের ব্যাপারে পৃথক স্থানে চিকিৎসা করা উচিত বলে তারা মনে করেন।
এব্যাপারে সিরাজগঞ্জে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা রঞ্জন কুমার দত্ত বলেন, গত কয়েকদিন যাবত মানুষ আতঙ্কে হাসপাতালের আউটডোরে ভিড় করলেও ভয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের সব ওয়ার্ড গুলোই বর্তমানে খালি হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষায় ১০০ সেট সরঞ্জাম হাসপাতালে পৌঁছেছে বলে তিনি জানান।
নীলফামারী সংবাদদাতা : করোনা আতঙ্কে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও যেখানে রোগীর চাপে হিমসিম খেতে হতো চিকিৎসকদের, রোগী আর রোগীর স্বজনদের ডাকডাকে মুখরিত থাকত কমপ্লেক্সটি।সেখানে এখন সুমসাম নিরবতা। আগে সামান্য জ্বর, সর্দি হলেই মানুষ হাসপাতালে আসতো চিকিৎসা নিতে এখন ভয়ে আর কেউ আসছেনা। নার্সরা জানান, প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হতো এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখন ২০/৩০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ী চলে যাচ্ছে। ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, করোনা আতঙ্কের কারনে রোগী ভর্তি নেই বললেই চলে। আগে সামান্য সর্দি, কাশি নিয়ে মানুষজন হাসপাতালে ভর্তি হতো, এখন আর সেইসব রোগীরা আসছেন না। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোন লক্ষন দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন