শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো নিয়ন্ত্রিত

কক্সবাজার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৬:০৭ পিএম

করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে এই ধরনের আতঙ্ক বা আশঙ্কাই বেশী ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোকে ঘিরেই। একদিকে ৩৪ টি ক্যাম্পে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের শৃঙ্খলায় আনা ছিল দুষ্কর। অন্য দিকে দেশী-বিদেশী এনজিও কর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এতে করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো বেশী ঝুঁকিপূর্ণ মনে করাটাই ছিল স্বাভাবিক। গত ২ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়ায় ক্যাম্পে অনেটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এনজিও কর্মীদের যাতায়াতও।

এপ্রসঙ্গে অতিরিক্ত আরআরআরসি মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে যারা খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনা ভাইরাস জনিত সচেতনতা কার্যক্রম এবং অত্যাবশ্যকীয় জরুরি কাজে নিয়োজিত শুধুমাত্র তারাই ক্যাম্পে আসা যাওয়া করতে পারে। প্রয়োজন হলে তারা তাদের গাড়িও ব্যবহার করতে পারে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হলেও এখন সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান গ্রহন করায় সামাজিক যোগাযোগ দূরত্ব বজায় রাখায় বিষয়টি অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

এছাড়া জাতিসংঘের অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থা ও জরুরি কাজে জড়িত এবং যেসব বিদেশি গত মার্চের আগে থেকেই কক্সবাজারে বা এদেশে অবস্থান করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছেন, তারাই আরআরআরসি অফিস থেকে পাস নিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে আসা যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এর বাইরে কোন দেশী বিদেশী নাগরিক রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে কোন অবস্থাতেই আসা যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে প্রতিদিন শত শত গাড়ি নিয়ে দেশী বিদেশীরা চলমান করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে অবাধে আসা যাওয়া করছে বলে যে গুরতর অভিযোগ উঠেছে, তার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত আরআরআরসি মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থীকে খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, করোনা ভাইরাস জনিত সচেতনতা ও অত্যাবশ্যকীয় কাজের যোগান দিতে কি পরিমাণ মানুষকে নিয়োজিত থাকতে হয়, সেটা সবাই বুঝেন। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে উল্লেখিত কার্যক্রম ছাড়া আর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সীমিত করা হয়েছে জরুরি কার্যক্রমও। যে কার্যক্রমগুলো রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে করোনা ভাইরাসজনিত সংকটকালে সীমিত আকারে চালু আছে, সেগুলো বন্ধ করে দিলে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা নাখেয়ে, চিকিৎসাবিহীন হয়ত মারা যাবে।

অতিরিক্ত আরআরআরসি মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা আরো বলেন, একজন বিদেশী নাগরিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর তাঁকে কক্সবাজার আসার জন্য আবারো অনুমতি নিতে হয়। সে অনুমতি নেওয়ার প্রামাণ্য ডকুমেন্টস সহ শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ে নিয়মমাফিক রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে প্রবেশের জন্য আবেদন করে থাকে। সে আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে আরআরআরসি অফিস প্রয়োজন মনে করলে উক্ত বিদেশীকে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে নির্ধারিত সময়ে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশে নভেল করোনা ভাইরাস (COVID-19) রোগী প্রথম সনাক্ত হওয়ার পর থেকে ভিন্ন দেশ থেকে সদ্য আসা কোন বিদেশীকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের কোন পাস এ পর্যন্ত ইস্যু করা হয়নি। আরআরআরসি অফিসের ইস্যুকৃত এরকম পাশ ছাড়া কোন বিদেশী উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। যারা রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে আগে থেকেই কর্মরত বিদেশিরা রয়েছেন, তাদের ইস্যুকৃত পাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অতি প্রয়োজন ছাড়া সেগুলোর মেয়াদও খুব একটা বাড়ানো হচ্ছেনা।

তাছাড়া, বিভিন্ন তথ্য চেয়ে আরআরআরসি অফিসের নির্ধারিত ফরম রয়েছে। দেশী-বিদেশী সকলেই সেই ফরম পূরণ করে কর্তৃপক্ষকে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর করোনা ভাইরাস ((COVID-19) নামক বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষিতে বিদেশীরা নিজেরাই এখন বাংলাদেশে খুব একটা আসেন না। তারপরও উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে সদ্য আসা নতুন কোন বিদেশি যেতে চাইলে তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে থাকতে হবে।

হোম কোয়ারাইন্টানে থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের দৃষ্টিতে আশংকা মুক্ত হলেই ওই বিদেশি আরআরআরসি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে যেতে পারবেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আরআরআরসি অফিস এ বিষয়ে গত মার্চের প্রথম সপ্তাহেই এরকম কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। নতুন কোন বিদেশি নাগরিক রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের কার্যক্রমে না আসার জন্যও আরআরআরসি অফিস থেকে অনেক আগে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও পত্র দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে সর্বোচ্চ সর্তকতা ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করায় ইনশাআল্লাহ ৩ এপ্রিল জুমাবার পর্যন্ত কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী ক্যাম্পে সনাক্ত হয়নি।

এদিকে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের জটলা অনকেটা কমেগেছে। ক্যাম্পের ভেতরে ১০ টিসহ বাইরে চেক পয়েন্ট বসানোর কারণে রোহিঙ্গাদের বাইরে যাতায়াত ও বাইর থেকে যে কারো যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হয়েগেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন