শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে ড্রেনেজের কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর। এবার বর্ষার আগেই সেসব কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। সাধারণ ছুটির ফাঁদে সব কাজই এখন আটকে আছে। রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে রাখা খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে সেগুলো এখন ডেঙ্গু মশার বংশবৃদ্ধির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, আগারগাঁও, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, পল্টনসহ বহু এলাকার অসমাপ্ত কাজ এখন ডেঙ্গুর জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি। 

অন্যদিকে, রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় দুই বাড়ির মাঝের সার্ভিস লেন যেন ময়লার ভাগাড়। আর এতেই জমে থাকা পানি ভয়াবহ করোনার মাঝে যোগ করেছে ডেঙ্গুর শঙ্কাও। এই ময়লা ফেলার দায় কেউ নিতে চায় না। নগরবাসীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন নগরবিদরা।
রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় আবর্জনার কয়েক ফুট উঁচু স্তূপ রয়েছে। সেগুলো সবই গৃহস্থালি বর্জ্যের। মোহাম্মদপুর এলাকায় তিন থেকে ১০ ফুট প্রশস্ত এমন সার্ভিস লেন রয়েছে প্রায় ৮০টি। কোথাও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন সরাসরি জুড়ে দেয়া সেখানে। ফলে জমছে পানি, তৈরি হচ্ছে এডিসের প্রজননস্থল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত বর্জ্যগুলো না সরানোয় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত মৌসুমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ১০ শতাংশই ছিল মোহাম্মদপুর এলাকার। এবারও সেই শঙ্কায় এলাকাবাসী।
রাজধানীর পল্টন এলাকায় দেখা গেছে, ড্রেনেজের কাজ কিছু অংশ করে বহুদিন যাবত ফেলে রাখা হয়েছে। একদিন আগে বৃষ্টিতে ড্রেনেজের জন্য খোঁড়াখুড়ি ও সৃষ্ট গর্তে পানি জমে আছে। সেগুলোতে এডিস মশা অনায়াসে বংশ বিস্তার করবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশেও এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কায় নেওয়া হচ্ছে নানাবিধ প্রতিরোধী পদক্ষেপ। অথচ গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এ বছরের তিন মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্বও বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগাম পদক্ষেপ নেয়ার সময় এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। করোনার কারণে সব ‘ফোকাস’ সেদিকে চলে গেছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের দিকটা দুর্বল হওয়ার শঙ্কা তাদের।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, গতবারের তুলনায় চলতি বছর রোগী ভর্তির সংখ্যা বেশি ঠিকই, তবে গতবার কিছুটা ইনফরমেশন গ্যাপ ছিল। তথ্যগুলো সেভাবে শুরুর দিকে আসেনি। আবার গত মাসে প্রকাশিত পোস্ট মনসুন সার্ভে অনুযায়ী এবারে আবাসিক এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব কম, কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেশি। তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় এডিস মশা কম মানে হচ্ছে মানুষ সচেতন হয়েছে। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবন, ড্রেন, পরিত্যক্ত মোটরযানসহ পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে এডিস পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡বিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, চলতি বছরের প্রথম এই তিনমাসে এডিস মশার যে ঘনত্ব পেয়েছি সেটা অনেক বেশি। এবারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেশি। অর্থাৎ ডেঙ্গুর সিজনে রোগীর সংখ্যা বাড়বে যদি কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সব ‘ফোকাস’ চলে গেছে সেদিকে। তাই শঙ্কা হচ্ছে ডেঙ্গুর দিকটা দুর্বল না হয়। তিনি আগাম পদক্ষেপ হিসেবে এডিস মশা নিধনে এবং এডিস মশার প্রজননস্থল কমানোর ওপর জোর দেন।
এদিকে, ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশক নিধনের জন্য একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় বিভাগ বা সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের করণীয় নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা সরকারি পত্র প্রেরণ করা হবে। সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসাবে দুই সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভবন, লেক, পার্ক, খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা কর্তৃপক্ষ কিন্তু মশা মারার কাজ করবে সিটি করপোরেশন। দীর্ঘ ছুটির সময় বন্ধ থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো থেকে এডিস মশার উৎপত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৩১ মার্চ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মশা কানের কাছে ‘সংগীতচর্চা’ করছে। মশার প্রাদুর্ভাবটা আস্তে আস্তে শুরু হবে। তারপর আসবে ডেঙ্গু। এ ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের। ওই সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীও ওই ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। এরপরই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বসেন মন্ত্রী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন