চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া এক নম্বর গলির সেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর বাসভবনটি গতকাল রাতে প্রশাসন সম্পূর্ণ লকডাউন করে দিয়েছে। তাছাড়া আশপাশের আরও ৬টি বাড়িতে সংক্রমণরোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশ সেখানে লোকজন যাতায়াত বন্ধ রাখতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির সাতকানিয়ায় মেয়ের বাড়িটিও স্থানীয় প্রশাসন গতরাতে লকডাউন করে দিয়েছে।
দামপাড়া নগরীর কেন্দ্রস্থল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে এ নিয়ে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্তের খবরটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই সবখানে এ নিয়ে জনমনে ভয়-শঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। দেশে এ পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া ৯টি জেলার একটি চট্টগ্রাম। তদুপরি প্রবাসী অধ্যুষিত দেষের প্রধান এলাকা হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিশেষজ্ঞদের মতে চট্টগ্রাম করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকির এলাকা।
চট্টগ্রামে এই প্রথম কোন রোগীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পজেটিভ পাওয়া নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ৬৭ বছর। তার বাসা নগরীর দামপাড়া এক নম্বর গলিতে। তিনি বর্তমানে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। এরজন্য একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এবং চট্টগ্রাম করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির চেয়ারম্যান আ জ ম নাছির উদ্দীন ইনকিলাবকে জানান, করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তি বিদেশফেরত নন কিংবা নে ধরনের কারও সঙ্গে বসবাস করেননি বলে জানিয়েছেন। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ জানান, ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার বিদেশ সফরের কোন ইতিহাস প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবুও কারণ জানতে সবকিছুর খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ঘোরাঘুরির (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) কারণে ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত কোন না কোন লোকের ছোঁয়ায় এসে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য শুধু জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি-ঘরেই থাকতে হবে। কিন্তু অনেকে তার ব্যত্যায় ঘটাচ্ছেন। তিনি জানান, প্রসাশন এর বিষয়ে আরও কঠোর কঠিন হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় সদ্য ভারতফেরত এক লরি চালকের বাড়িসহ আশপাশের চারটি বসতঘর নজরদারিতে রেখেছে মাঠ প্রশাসন। জানা গেছে, চন্দ্রঘোনার বাসিন্দা লরি চালক অরুণ মল্লিক (৩৮) বাংলাদেশ-ভারত নেপালসহ সার্কভুক্ত দেশে মালামাল পরিবহণ করেন। তিনি চন্দ্রঘোনা মশন এলাকা সংলগ্ন সুকুমার মল্লিকের ছেলে। তার সদ্য ভারত ফেরত এবং হোম কোয়ারেন্টাইন না মানার খবর পেয়ে গতকাল উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন গিয়ে তার সাথে কথা বলেন। তিনি ভারত ও নেপাল থেকে এসে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে সর্দি-কাশি-জ্বরের জন্য চিকিৎসাও নেন বলে জানা গেছে।
এরপরই লরি চালক অরুণের বাড়িসহ আশপাশের ৪টি বাড়ির লোকজনকে শতভাগ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। আজ শনিবার চালক অরুণ মল্লিকের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন