বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতায় জনভোগান্তি ও ডেঙ্গুর আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশে এখন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ঝুলছে ডেঙ্গু। অবশ্য এ হুমকি বছরের শুরু থেকেই রয়েছে। গত তিন মাসে তিন শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আগাম সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডেঙ্গুর মূল উৎস এডিস মশা। এ মশার প্রজননক্ষেত্র হচ্ছে, শহরের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিগত এক বছর ধরে সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির যে তান্ডব চালিয়ে আসছে, তাই এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব খোঁড়াখুঁড়ির জায়গায় জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রেখেছে করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে, এর দায় তাদেরই নিতে হবে। 

রাজধানীর এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে রাস্তা খোঁড়া হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে সড়কে চলাচল করাই দায়। অথচ এসব খোঁড়াখুঁড়ির কাজ এই বর্ষার আগেই শেষ করার কথা। এর মধ্যেই করোনা মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে অঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে খোঁড়াখুঁড়ির কাজও বন্ধ। কাজ কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যেখানে খোঁড়ার কাজই শেষ হয়নি, সেখানে আশু সংস্কারের কথা চিন্তাই করা যায় না। স্বাভাবিক সময়েই যেখানে রাস্তা খোঁড়ার পর সংস্কার করতে মাসের পর মাস চলে যায়, সেখানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উছিলায় তা কবে শেষ হবে তা বলা যায় না। আমাদের দেশে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ যথাসময়ে শেষ না করার ক্ষেত্রে অজুহাতের শেষ নেই। এসব অজুহাত যে বাড়তি বরাদ্দ এবং টুপাইস কামানোর জন্য, তা সকলেরই জানা। যুগ যুগ ধরে এ অপসংস্কৃতি চলে আসছে। এতে জনগণের অর্থের যেমন অপচয় হয়েছে, তেমনি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার বরাদ্দকৃত অর্থও ফেরত যাওয়ার নজির রয়েছে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও এ অপসংস্কৃতির অবসান হয়নি। বরং বেড়েছে। এই যে রাজধানীতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির অসমাপ্ত চিত্র, এর অবসান কবে হবে তা অনিশ্চিত। এ নিয়ে সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়তো জবাব দিতে হবে না বলেই তারা মনে করছে। অবশ্য কোনো কালেই তাদের জবাব দিতে হয়নি। জবাবদিহিতার সংস্কৃতিই এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি। অথচ বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই সমন্বয়হীন কাজের জন্য প্রধানত দায়ী দুই সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র। এই সমন্বয়হীন কাজ, জনভোগান্তি, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং অপচয়ের জবাবদিহি তাদেরই করতে হবে। এই অবহেলা, উপেক্ষা ও দায়িত্বহীনতা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি সবার জন্যই নতুন এক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হবে। অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। ঢিমেতালে চলা যেসব প্রকল্প রয়েছে, দেখা যাবে সেগুলো নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই নগরজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ ও সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার বিকল্প নেই।
আমরা এখন যেমন অত্যন্ত সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছি, তেমনি সামনে আরও সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ডেঙ্গু চোখ রাঙ্গাচ্ছে। বিশ্লেষকরা রাজধানীর মশা নিয়ন্ত্রণে বহুভাবে তাকিদ দিলেও মেয়রদ্বয় তা আমলে নেননি। এখন পর্যন্ত মশা নিধনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। লোকবল সংকট ও নিয়োগের দোহাই দেয়া হচ্ছে। একদিকে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির অসমাপ্ত কাজ, অন্যদিকে মশা নিধনের ব্যর্থতা জনজীবন যে বিপর্যস্ত করে তুলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকেই এককভাবে দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। দেশের চলমান সঙ্কট পরিস্থিতিতেও এককভাবে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিত যে খোঁড়াখুঁড়ির চিত্র তা কেন যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না এবং মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন, আমরা আশা করি, সেটা প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে খতিয়ে দেখবেন। বলা বাহুল্য, করোনা পরিস্থিতির অবসান হবে। তখন মানুষকে একসাথে অনেক কাজ করতে হবে। সরকারকেও তার অসমাপ্ত এবং স্থগিত হয়ে পড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রæত শেষ করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এক ধরনের তড়িঘড়ি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এর ফলে সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে। আমরা আশা করবো, এখন থেকে সকল প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
M. Ashraf Hossen Tuhin ৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৩৭ পিএম says : 0
আমাদের দেশে প্রতিটি বিষয়ে সরকারী সংস্থাগুলো আক্রান্ত হওয়ার পরও সচেতন হয় না। ডেঙ্গু, চিকগুনিয়া এবং করোনা। কোনটাতেই সরকারকে সতর্ক করা যায় না। বার বার সচেতন করেও কোন সুফল হয় না। এসব মহামারী প্রতিরোধে সরকারের পূর্বপ্রস্তুতি একেবারেই নেই। সতর্ক করেও কোন লাভ হয় না। অবশেষে মহামারি হিসেবে রূপ নেয়। করোনাও ঠিক তেমনি। মহানগরীতে প্রতিটি মহল্লায় এখন ফগিং করে মশা মারা অতিব জরুরী। করোনা রোগীকে কামড়ালে সেই মশা অন্য সূস্থ্যব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেণ। কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশণের এনিয়ে কোন মাথা ব্যথা নাই। এমন একটি পরিবারও পাওয়া যাবে না,.যে এক রাত্রি কয়েল জ্বালানো থেকে বিরত থেকেছেন। প্রতিটি কক্ষে অন্তত একটি করে কয়েল হলেও প্রতিদিন এক কোটি কয়েল জ্বালাতে হয। দিনের বেলায়ও রেহাই নাই মশার আক্রমণ থেকে। দ্রুত ডিসিসি মশা থেকে নিরাময়ে কাজ করবে বলে আমার ধারণ্
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন