শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চাল বিতরণে হরিলুট, চার হাজার ভুয়া কার্ড!

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫০ পিএম

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ১০টাকা কেজি দরের ফেয়ার প্রাইস কার্ডের অন্তত চার হাজার দরিদ্র ব্যক্তির চাল কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। ডিলাররা মার্চ মাসের চাল উত্তোলন করে এ পরিমান চাল ভুয়া কার্ড তৈরী করে বিক্রি করে দেয়। কার্ডধারী তিন সহ¯্রাধিক মানুষ জানেন না তার নামে এ চালের বরাদ্দ রয়েছে। সাধারণ দরিদ্র মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুবিধার চাল নিয়ে চলছে হরিলুট।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে কার্ডধারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৫৩ জন। যারা বছরের মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে প্রত্যেককে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতি বছরে ৩২ ডিলার এ পাঁচ মাসে অন্তত তিন সহ¯্রাধিক কার্ডধারীর প্রায় ৬০ টন চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। এর সঙ্গে তদারকি কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বাঁধ ভাঙ্গা এলাকা লালুয়ায় ফেয়ার প্রাইস কার্ডের সুবিধাভোগীর নাম রয়েছে ১৫৯৬ পরিবারের। নিয়ম রয়েছে দরিদ্র মানুষ এ সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু তালিকা তৈরিতে করা হয়েছে চরম দুর্নীতি আর অনিয়ম। লালুয়ার পশুরবুনিয়া গ্রামের জেলে সেলিম ফরাজীর তালিকায় নাম থাকলেও তিনি জানেন না। অথচ মাসের পর মাস তার চাল উত্তোলন দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। সেলিম ফরাজিকে কোন কার্ড পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
ইউপি মেম্বার ইউনুচ ফরাজি জানান, এভাবে তার ওয়ার্ডের অন্তত ৪০ জনের নামে ১০ টাকা কেজির চালের নাম থাকলেও তারা জানেন না। আর কোনদিন চাল তোলেননি। এছাড়া একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়। একাধিক সুবিধা প্রাপ্ত ব্যক্তির নামও এ তালিকায় রয়েছে। ছয় নম্বর ওয়ার্ডে যাচাই-বাছাইতে অর্ধশতাধিক নাম বেরিয়ে আসছে। এভাবে লালুয়ার একটি ইউনিয়নে কার্ড দেয়া হয়নি এমন নাম রয়েছে প্রায় কমপক্ষে ৩০০ জন। বছরের পাঁচটি মাস এ চাল উত্তোলন দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছে।
একই অবস্থা মিঠাগঞ্জ, নীলগঞ্জ, চাকামইয়া, টিয়াখালী, ধুলাসার, বালিয়াতলী, চম্পাপুর, ধানখালী, মহিপুর, লতাচাপলীসহ সকল ইউনিয়নের। ১২টি ইউনিয়নে এ তালিকার কার্ডধারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৫৩ জন।
ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে ডিলারের দোকানে কার্ডধারীর নামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হবে। কিন্তু এটি দৃশ্যমান পাওয়া যায়না। আর ডিলাররা অধিকাংশ ব্যবসায়ী নয়। সবচেয়ে বেশি অরাজকতা হয়েছে মার্চ-২০২০ মাসের ফেয়ার প্রাইস কার্ডের চাল বিতরণে। পুর্বের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমানের বদলী এবং নবাগত নির্বাহী কর্মকতা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হকের যোগদানের ব্যস্ততার মধ্যে করোনার আঘাতের কারনে ৩২ ডিলার তাঁদের ইচ্ছেমতো এচাল নিয়ে চালবাজি করেছেন। তদারকি কর্মকর্তাদের উদাসীনতা রয়েছে।
অনুসন্ধান করে আরো জানা গেছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের মাখন লাল বিশ^াসের নাম রয়েছে এই তালিকায়। এ দরিদ্র মানুষটি মার্চ মাসের ১০ টাকা কেজির কোন চাল পায়নি। তার কার্ডটি পর্যন্ত নেই। কবে চাল পেয়েছেন তা তার মনেও নেই। অথচ নীলগঞ্জের ২৭৬৭ জনের সকলের বিতরণের মার্চ মাসের চাল তিনজন ডিলার তুলে নিয়ে বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে। একই দশা মিঠাগঞ্জের ৬৫০ নম্বর তালিকার ব্যক্তির। ১২টি ইউনিয়নের একই অবস্থা। মোট কথা সরকারের গরীব দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো দুর্নীতিবাজ একটি সিন্ডিকেটের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিএম শফিকুল ইসলাম জানান, অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে তালিকা সংশোধন করা হয়। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বর্তমানে নতুন করে তালিকা দ্রুত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ৭ এপ্রিল, ২০২০, ৮:৫৪ পিএম says : 0
এগুলি যারা করে তারা আসলে কাজটি ভাল করেনি। আর সব চেয়ে বড় কথা হল, যারা এ-ই মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন, তারাই আসলে ঠিক নেই। কারন,তারা ভাল এবং সৎ মানুষকে এইসব কাজের ভার দেয়না। যারা ভুরি ভুরি টাকা ঘুষ দিতে পারবে তাদেরকেই এ-ই ডিলারসিপ দিবে। তাই অনিয়ম তো হবেই। কিছুই করার নেই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন