করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখে কুষ্টিয়ায় জোরালো হয়েছে সরকারের খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির কর্মসূচি (ওএমএস)। এই কর্মসূচির আওতায় সরকারি বিশেষ বরাদ্দের চাল বুধবার থেকে জেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন তাঁর কার্যালয়ের সভাকক্ষে পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণজমায়েত এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাড়ি বাড়ি চাল পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যদি কেউ দুর্নীতি বা অনিয়মের চেষ্টা করেন, তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ফুড ডিসি মোঃ মনোয়ার হোসেন জানায়, কুষ্টিয়া পৌরসভায় ২১টি ওয়ার্ডে ১৮ জন ওএমএস ডিলার রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে প্রত্যেক ডিলার এক সপ্তাহের জন্য ১ হাজার ৩৫০ কেজি চাল উত্তোলন করতে পারবেন। একজন মানুষ একবারে সর্বোচ্চ এই চাল কিনতে পারবেন ৫ কেজি। সপ্তাহে কেনা যাবে একবার। আর চাল কেনার সময় দেখাতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। অসহায় গরিব, দিনমজুর ও শ্রমিকেরা এই চাল কিনতে পারবেন।
মঙ্গলবার থেকে এ চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলদের মাধ্যমে গরিব অসহায় ২২৯ জনকে খুঁজে বের করে বিশেষ কার্ড তৈরি করে দিয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া চাল নিতে গিয়ে গণজমায়েত সৃষ্টি হওয়ায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার ঝুঁকি আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন ওই জরুরি সভা ডাকেন। সভায় কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডাকা হয়। এ ছাড়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, প্যানেল মেয়র মতিয়ার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দীন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক সবার উদ্দেশ্যে বলেন, কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা, ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে চাল পৌঁছে দিতে হবে। যদি কেউ এই ৫০ দিতে সক্ষম না হন, সে ক্ষেত্রে ওই টাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক পরে ডিলারকে দিয়ে দেবেন। তবু কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন।
পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, প্রত্যেক এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দারা আছেন। যদি কেউ বিন্দুমাত্র অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির চেষ্টা করেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা তো হবেই, আরও অনেক কিছু হবে। কে কার (নেতা) কাছের মানুষ সেটা দেখা হবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন দূনীতি করলে কাওকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, প্রকৃত অসহায় ব্যক্তিদেরই এই চাল দিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন