মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সদিচ্ছা জরুরি

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম রওনক : সারা দেশে উদ্বেগজনক হারে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বিশেষ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ঘন কুয়াশার মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে গাড়ি চালানো যাবে না। তাছাড়া মহাসড়কে প্রতিটি গাড়িকে ফগ লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হবে- যাতে বিপরীত দিক থেকে আগত গাড়ির চালকরা দূর থেকেই দেখতে পারেন। অন্য এক সিদ্ধান্তে কুয়াশা বেশি হলে গাড়ি থামিয়ে চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অনেক বিলম্বে নেয়া হলেও আমরা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বস্তুত বাস্তব অবস্থার কারণেই এমন উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল।
বিগত মাত্র কয়েকদিনের তথ্য-পরিসংখ্যান উল্লেখ করলেও এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে। যেমন গত ১০ জানুয়ারি যমুনা সেতুর পূর্বপাড়ে ১৫টি গাড়ি একটির ওপর আরেকটি আছড়ে পড়েছে এবং ভয়াবহ সে দুর্ঘটনায় ভূমিমন্ত্রীর পুত্রসহ আটজনের মৃত্যু ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৩৭ জন। সেদিনই দেশের অন্য কয়েকটি এলাকায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আরো সাতজন। এসব দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা ৩২। খবর শুধু এটুকুই নয়। যাত্রী কল্যাণ পরিষদ নামের একটি সংগঠন সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছে, গত এক বছরেই দেশে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। সংগঠনটির উপস্থাপিত পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৮০ জন ছাত্রছাত্রী, ৩০৫ জন শিক্ষক, ১৩৩ জন সাংবাদিক, ১০৯ জন চিকিৎসক, ১ হাজার ৬৭৭ জন নারী, ১০৬ জন প্রকৌশলী, ৫৩৫ জন পরিবহন শ্রমিক এবং ৪১৯ জন চালক রয়েছেন। নিহত অন্যদের সংখ্যা ৪ হাজার ২৭৮। আহত হয়েছিলেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি মাত্র বছরে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি বেদনাদায়কই শুধু নয়, নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আশঙ্কাজনকও। অথচ বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই মর্মে অঙ্গীকার করেছে য, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে দুর্ঘটনা উল্টো বেড়েই চলেছে। যেমন ২০১৪ সালেও দেশে ৫ হাজার ৯২৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছিল ৮ হাজার ৫৮৯ জনের। আহতদের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৫২৪। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে, সরকারের অঙ্গীকার যেখানে ছিল কমিয়ে আনার, সেখানে দুর্ঘটনার সঙ্গে হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। এমন অবস্থা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ প্রতি বছর এত বেশি প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করার মতো অবস্থা ও ক্ষমতা বাংলাদেশের জনগণের নেই। মানতেই হবে, সরকারের পক্ষ থেকে আগে থেকে যদি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হতো, তাহলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমানো যেতে অনেকাংশে।
আমরা মনে করি, বর্তমান পর্যায়ে বেশি দরকার দুর্ঘটনার কারণগুলো লক্ষ্য করা এবং তার ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। প্রথমত, সড়ক-মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন কেউ যাতে চালকের আসনে বসতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রয়েছে- ত্রুটিযুক্ত ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এসবই চলাচল করতে পারছে উৎকোচের বিনিময়ে। দুর্ঘটনা কমাতে চাইলে এ ধরনের কোনো যানবাহনকে চলাচল করতে দেয়া যাবে না। একই কথা লঞ্চ-স্টিমার এবং জাহাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই ব্যবস্থা নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি সামগ্রিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে- যার মধ্যে বাস-ট্রাক-ট্রেন তো বটেই; লঞ্চ, স্টিমারসহ সব ধরনের নৌযানকেও অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে দেশের সড়ক-মহাসড়কের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। কারণ সংশিষ্ট মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা মুখে কথার খই ফোটা এবং টিভি ক্যামেরার সামনে জোর তৎপরতা দেখালেও কাজের কাজ কিন্তু এখনো তেমন হয়নি; দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক ঠিকঠাক হয়নি। নিরাপদে চলাচলেরও উপযোগী হয়নি। এজন্যই দু-একদিনের বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ছে সড়ক-মহাসড়ক। এসবের বহুস্থানে সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের। এবড়ো-থেবড়ো হয়ে পড়েছে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক। দুর্ঘটনাও ঘটছে এসব কারণেই। বলাবাহুল্য, অবস্থা এতটা শোচনীয় ও ভয়ঙ্কর হতে পারতো না; মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য সরকারের যদি সত্যি সদিচ্ছা থাকতো। সরকারকে বুঝতে হবে- জনগণ শুধু আশ্বাস ও মিষ্টি কথা শুনতে চান না। তারা কাজ দেখতে চান।
ষ লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, এলডিপি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন