বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দান মানুষকে রক্ষা করে

ইসলামী ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২০, ৬:৫০ পিএম | আপডেট : ৭:০৬ পিএম, ৮ এপ্রিল, ২০২০

করোনাভাইরাসে সারাবিশ্ব স্থবির। বাংলাদেশ মনে হয় একটু লম্বা সময়ের জন্য একরকম লকডাউনের শিকার। অধিকাংশ মানুষ এত লম্বা সময় ঘরে বসে থাকার যোগ্যতা রাখে না। তাদের খাদ্য ও অর্থ শেষ হয়ে তারা অভাবে পড়বে। এ অবস্থা দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের। সরকারের নিয়মিত ও বিশেষ সাহায্য অনেকেই পাচ্ছেন। চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনার, কাউন্সিলর প্রভৃতি দায়িত্বশীলরা সাহায্য পৌঁছাচ্ছেন। কিছু অনিয়ম হচ্ছে, অনেক ধরপাকড় ও মাল উদ্ধারের সংবাদ প্রতিদিন আসছে। মানুষও সচেতন। মিডিয়া সক্রিয়। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া। প্রয়োজন হলে পুলিশকে জানালে সাহায্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অনেক ডিসি, এসপি, ইউএনও প্রমুখ কর্মকর্তা যথেষ্ট তৎপর। তারা মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ঘরে ঘরে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছেন। মিডিয়ায় সন্ধান পেয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নিয়েছেন। এমন সংবাদ প্রচুর। প্রধানমন্ত্রী সব জেলার সাথে টেলিকনফারেন্সে যোগাযোগ রাখছেন। এর মধ্যে সরকারের বাইরে সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পারে মানুষকে সাহায্য করছে। এর বহু সংবাদ মিডিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টি আল্লাহ ও রাসুল (স.) পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে কঠিন অথচ অধিক সাওয়াবের কাজ বলা হয়েছে সঙ্কটের দিনে মানুষকে সাহায্য করা। [আল কোরআন, সুরা আশ-শামস-১৪]

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, জাহান্নামে দেওয়ার সময় পাপীদের জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন জিনিস তোমাদের এখানে নিয়ে এলো? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না, আর অভাবীদের খানা খাওয়াতাম না। [আল কোরআন, সুরা মুদ্দাস্সর-৪৩-৪৪] এছাড়া মৃত্যু হাজির হলে লোকেরা বলবে, আল্লাহ আমাকে একটু সময় দিন, আমি দান-সদকা করব এবং ভালো হয়ে যাবো। এ বিষয়ের আয়াতটি এমনÑ ‘আর তোমরা ব্যয় করো মৃত্যু আসার আগেই। যা কিছু আমি তোমাদের দিয়েছি তা থেকে। মৃত্যু এলে তখন বলবে, হে রব, আমাকে যদি একটু সময় দিতেন, আমি দান-সদকা করতাম এবং ভালো মানুষের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। [আল কোরআন, সুরা মুনাফিকুন-১০]
বাংলাদেশেও সবাই যদি এমন নিয়ত করে যে, আমার জানা ও আওতাধীন কোনো মানুষ খাবারে কষ্ট না করুক। তাহলে সবাই কষ্ট থেকে বেঁচে যাবে। যারা একান্ত নিঃস্ব ও ভিক্ষুক তারা হয়তো কারো কাছে হাত পেতে কিংবা প্রকাশ্যে সাহায্য নিয়ে কোনোরকম চলতে পারে। কষ্ট হয় এমন বিপদগ্রস্ত লোকের যাদের মানুষ অসহায় মনে করে না। আর তারা কারো কাছে হাত পাততে বা নিজের অভাবের কথা প্রকাশ করতে পারে না। তাদের অবস্থা আন্দাজ করে বুঝে নিয়ে সাহায্য করা সামর্থ্যবান মানুষের কর্তব্য। বিত্তশালী বা যাদের সুযোগ-সুবিধা আছে তাদের এখন সচেতন হওয়ার সময়। মানবিক হওয়ার সময়। পাশ্চাত্যের লোকেরা দানের সকল দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষেরাও এখন জীবনের সেরাটুকু পেশ করার সময়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা মহান আল্লাহ তায়ালাকে করজে হাসানাহ বা উত্তম ঋণ দেবে (আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করলে সেটি আল্লাহকে ঋণ দেয়া হয়) আল্লাহ তাকে যত ইচ্ছা গুণ দিয়ে তা ফেরত দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে উৎকৃষ্ট বিনিময়। [আল কোরআন, সুরা বাকারা-২৪৫] অপর আয়াতে আল্লাহ যেসব মানুষের দারিদ্র বোঝা যায় না তাদের কিভাবে চিনতে হয় এবং সাহায্য করতে হয় এ ব্যাপারে বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন, দুনিয়ায় ঘুরেফিরে আয়-উপার্জন করতে পারে না, তাদের অবস্থা অজ্ঞ লোকেরা জানে না। এসব মানুষের উচ্চ আত্মমর্যাদাবোধের কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদের ধনী মনে করে। কেননা তারা মানুষের কাছে খোলামেলা হাত পাতে না। তাদেরকে চেনা যায়, তাদের চালচলন ও হাবভাব দেখে। যত কল্যাণ কাজে তুমি অর্থ-সম্পদ দান করবে, সে সবই আল্লাহ তায়ালা খুব ভালো করে জানেন। [আল কোরআন, সুরা বাকারা-২৭৩]।

এখানে প্রতিটি বিত্তশালী ও সামর্থবান মানুষের ইমানী দায়িত্ব হলো নিজ নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাদ্য ও জরুরি সামান সম্মানজনকভাবে পৌঁছে দেয়া। কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস নিজের আশেপাশের মানুষকে এভাবে দেখাশোনা করা জীবনের একটি স্মরণীয় সুযোগ ও সৌভাগ্য। অর্থ-সম্পদ এর চেয়ে ভালো কোনো কাজে লাগতে পারে না। নবী করিম (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, সবচেয়ে উত্তম আমল কোনটি? তিনি জবাবে বললেন, মানুষকে খানা খাওয়ানো। তিনি বলেন, শ্রেষ্ঠ মানুষ সেই, যে মানুষের জন্য বেশি উপকারি। সহিহুল জামে-৩২৮৯, দ্বারা কুতনী-৪২৬। এখানে সমাজের নীরব একটি সেবক শ্রেণি উল্লেখ করার মতো যারা দেশের ৪ লক্ষাধিক মসজিদে আজান-নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত চালু রাখেন। তাদের বেতন-ভাতা খুবই কম। সমাজের সবচেয়ে কম বিনিময় তাদের দেয়া হয়। বর্তমানে সব মসজিদে মুসল্লিদের যাওয়া নিষেধ। কিন্তু মসজিদ সচল আছে। ইমাম-খতিব, মুয়াজ্জিন-খাদেম ও অন্য কর্মীদের ছুটি নেই। এ সময় সমাজের উচিত, তাদের বেতন-ভাতা ও সম্মানি যথাসময়ে দিয়ে দেয়া। তাদের কাছে প্রয়োজন হলে বাড়তি ত্রাণ ও সাহায্য পৌঁছে দেয়া। সামনে রমজান। দান-খয়রাতের উত্তম সময়। অনেকে যাকাত এ সময় দিয়ে থাকেন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে দেশ কঠিন সংকটে। যাকাত এখন দিয়ে দেওয়া আরো ভালো। সময় না হলে অগ্রিম যাকাতও দেয়া যায়। যারা ত্রাণ, সাহায্য, মসজিদ, চিকিৎসা, দাফন-কাফন ইত্যাদিতে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন তারা অনেক বড় সাওয়াবের কাজে আছেন। হাদিস শরিফে আছে, যারা অসহায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত তাদের আল্লাহ তায়ালা সারারাত জেগে নামাজ আদায়কারী, দিনভর রোজা পালনকারী ইত্যাদি আমলকারীদের সমান সাওয়াব দান করবেন। নবী করিম (স.) আরো বলেন, দান-সদকা বালা-মুসিবত ফিরিয়ে দেয়। দান করার জন্য অনেক ধনী হওয়া প্রয়োজন পড়ে না। ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে নিজের যতটুকু আছে তাও আরেকজনকে নিয়ে ভাগ করে খাওয়া যায়। দানের ফযিলত ও সাওয়াব শুনে দরিদ্র সাহাবিরা আফসোস করতে থাকলে আল্লাহর নবী (স.) তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের রক্ষা কর এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও। এই বিপদের দিনে আমরা সবাই অল্প কিছু দিয়ে প্রত্যেকে এক-দুইজনের পরিবারের সামান্য দায়িত্ব নিয়ে অনেক বড় সাওয়াব লাভ করতে পারি। একটু খেয়াল করে অভাবী ও নিরব মানুষগুলোকে সহায়তা করে জীবনের সবচেয়ে বড় ফযিলত অর্জন করতে পারি। জীবন ও মৃত্যু এখন খুব কাছাকাছি। শুধু এখন কেন? সারাজীবনই আমাদের প্রত্যেকের জীবন-মৃত্যু হাত ধরাধরি করে চলছে। আজ না হয় কাল আমাদের আল্লাহর কাছে চলে যেতে হবে। তখন আজকের এই দানটুকুই সঙ্গে যাবে। অন্য ধন-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, খাদ্য-পানীয়, বিলাসিতা, অপচয় কিছুই সাথে যাবে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন