বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৪১ গার্মেন্টস খোলা

জরুরি শিপমেন্ট : মাস্ক-পিপিই তৈরি ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

জরুরি পণ্য শিপমেন্ট এবং মাস্ক ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসহ (পিপিই) করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরির কাজে নিয়োজিত ৪১টি পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। তবে সাভারে দুটি গার্মেন্টসে হঠাৎ করে শ্রমিক ছাঁটাই করায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।

বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান ছুটির সময়ে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সারা দেশে ৪১টি পোশাক কারখানা আজকে চালু আছে। এ সব কারখানার অনেকের জরুরি রফতানি ক্রয়াদেশ রয়েছে। এছাড়া বেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাস্ক, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সহ করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করছে।

এর মধ্যে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় ছয়টি, চট্টগ্রামে ১০টি, গাজীপুরে ২১টি, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪টি গার্মেন্টস খোলা রয়েছে। তবে করোনায় সম্পূর্ণ লকডাউন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে সব পোশাক কারখানা বন্ধ।
এর আগে, গত ৬ এপ্রিল পোশাক মালিকদের বড় দুটি সংগঠন- বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব পোশাক কারখানা আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এছাড়া শ্রমিক-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

যৌথ বিবৃতিতে শর্ত দিয়ে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে বলা হয়, রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাদের জরুরি রফতানি ক্রয়াদেশ রয়েছে এবং যেসব কারখানায় করোনার সরঞ্জামাদি, মাস্ক, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করছে, এমন কারখানাগুলোকে তাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রয়োজনে খোলা রাখতে পারবে।

এ ক্ষেত্রে স্ব-স্ব অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ/বিকেএমইএ), কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতর এবং শিল্প পুলিশকে খোলা রাখার বিষয়টি জানাতে হবে।
এদিকে, গার্মেন্টস খোলা রাখলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে বিশেষ প্রয়োজনে কোনো কারখানা খোলা রাখতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকরা যেন চার ফুট দূরে দূরে বসে কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর যাদের সর্দি-কাশি আছে তারা যেন কাজে যোগ না দেয়। তারা যেন বিশ্রামে থাকে।

শ্রমিক ছাঁটাই, বিক্ষোভ :
করোনার সময় শ্রমিক ছাঁটাই না করার নির্দেশনা থাকলেও গার্মেন্টস শ্রমিক ছাড়াইয়ের ঘটনা ঘটছে। এতে সামাজিক দূরত্ব এবং নিজেদের নিরাপত্তা না ভেবে শ্রমিকরা সবাই সামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদে। মহামারী নোভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলমান সঙ্কটের মধ্যেই সাভারে দু’টি পোশাক কারখানার কয়েকশ’ শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সাভারের হেমায়েতপুরে অবনী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অবনী ফ্যাশন ও ব্যাবিলন ক্যাজুয়্যাল ওয়্যারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিদেশি ক্রেতারা একের পর এক অর্ডার বাতিল করায় তারা বাধ্য হয়ে এ পরিস্থিতির মধ্যে শ্রমিকদের ছাঁটাই করেছেন। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ এখনো নিশ্চিত করে জানায়নি প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যাটি কত।

শ্রমিকরা বলছেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে কারখানা দু’টি খোলা রাখে মালিক পক্ষ। সারাদিন শ্রমিকদের কাজ করিয়ে গত মাসের বেতন তুলে দেয়া হয়। দিন শেষে তাদের একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়া হলে কারখানাজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই কাগজে শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন মর্মে জোরপূর্বক সাক্ষ্য নেয়া হয়।

ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে এসে অবস্থান নেন কারখানার সামনে হেমায়েতপুর-সিংগাইর মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে। এ সময় ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী একই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ক্রেতারা আশঙ্কাজনকভাবে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করায় এবং আগামী দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় বাধ্য হয়েই তারা শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানান, হুট করে এভাবে সিদ্ধান্ত নেয়াটা সম্ভবত ঠিক হয়নি। আমরা শ্রমিকদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। তাদের আশ্বস্ত করছি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও শ্রমিকদের ছাঁটাই না করেও বিকল্প উপায়গুলো আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন