বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গবেষণা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত ধূমপান থেকে নিরাপদ ভেপিং

ধূমপান ছেড়ে দেয়ার মাধ্যম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ৬:০২ পিএম

ভেপিং বা ই-সিগারেট প্রচলিত বা তামাকের সিগারেটের থেকে কম ক্ষতিকর। ফলে ই-সিগারেটের ব্যবহার সহজলভ্য হলে, সেটা অনেক মানুষকে তামাকের সিগারেটের ব্যবহার বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে বলে মত ব্যবহারকারী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

ই-সিগারেট ব্যবহার করে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ সফলভাবে ধূমপান ছেড়ে দিচ্ছে। গেল বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে এখন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ তামাকের সিগারেট বা ধূমপান ছেড়ে দেয়ার জন্য ই-সিগারেট ব্যবহার করছে।

ই-সিগারেট ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে, সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়, কিন্তু তামাকের সিগারেট থেকে ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর। কারণ এতে কার্বন মনোক্সাইড নেই। ই-সিগারেট খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিগারেটের ভেতরে নিকোটিন, প্রোপাইলিন গøাইকল অথবা ভেজিটেবল গিøসারিন এবং সুগন্ধী মিশ্রিত থাকে। কিন্তু তামাকের ভেতর থাকা অনেক বিষাক্ত রাসায়নিকের তুলনায় (যেমন টার এবং কার্বন মনোক্সাইড) নিকোটিন তুলনামূলক কম ক্ষতি করে।

নিকোটিনের কারণে ক্যান্সার হয় না, কিন্তু সাধারণ সিগারেটে ভেতরে থাকা তামাকের কারণে ক্যান্সার হতে পারে- যার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এ কারণেই ধূমপান বন্ধ করতে নিকোটিন গ্রহণের মাধ্যম পরিবর্তনের জন্য অনেক বছর ধরে পরামর্শ দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। যার মধ্যে রয়েছে গাম, স্কিন প্যাচেস বা মুখে স্প্রে করা।

চিকিৎসক, স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ, ক্যান্সার নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা বা যুক্তরাজ্যের সরকার, সবাই একমত হয়েছে যে, বর্তমানে যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেট সামান্যই ঝুঁকি বহন করে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বিভাগরে সাড়া জাগানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেট ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। ওই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ই-সিগারেট ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি প্রচলিত দাহ্য সিগারেটের তুলনায় শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ, ই-সিগারেট থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি নিতান্তই কম।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে, এগুলো পুরোপুরি ঝুঁকি মুক্ত। ই-সিগারেটের ভেতরে থাকা তরল পদার্থ এবং ধোঁয়া অনেক সময় এমন সব ক্ষতিকর রাসায়নিক বহন করতে পারে, যা সাধারণ সিগারেটের ভেতরেও থাকে। তবে এর মাত্রা অনেক কম।

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা এর আগে ছোট কয়েকটি পরীক্ষায় দেখেছেন, এ ধরণের ধোঁয়া গ্রহণ বা ভ্যাপিং শরীরের ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে পারে। সুতরাং এভাবে ভেপিং বা ধোঁয়া গ্রহণে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না, এটা এখনি বলা যাবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা একমত যে, প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেটে ঝুঁকির মাত্রা অনেক কম।

এনাম মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মিথুন আলমগীরের মতে, কোনো কিছু নিষিদ্ধ করতে হলে বা বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হলে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকতে হয়। তথ্য-উপাত্ত নির্ভর না হয়ে কোনো কিছু নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না।

এই চিকিৎসক সিগারেট ব্যবহারের পরিবর্তে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করে আসছেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে যেকোনো কিছু নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সরকারের আছে। তবে তা কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে সে বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

মিথুন আলমগীর বলেন, যদি সরকারের কাছে বিজ্ঞান নির্ভর তথ্য-প্রমাণ থাকে যে, ই-সিগারেট প্রচলিত তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য থেকে বেশি ক্ষতিকর, তবেই কেবল ই-সিগারেট নিষিদ্ধের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যদি এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকে তবে অন্ধভাবে অন্য দেশের অনুকরণে ই-সিগারেট বন্ধ করার কোনো মানে হয় না।

এই চিকিৎসক বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, ভেপিং প্রচলিত সিগারেট থেকে অনেক নিরাপদ। বরং প্রচলিত সিগারেট, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে মানুষের মৃত্যু হয়। ই-সিগারেট তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের মতোই ক্ষতিকর, কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ই-সিগারেট খাত নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে তা ভালোর বদলে বরং উল্টো ফল দেবে। এতে একদিকে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে ঝোঁক বাড়াবে। পাশাপাশি অধিকসংখ্যক ভোক্তা অনিরাপদ ও নিম্নমানের ভেপিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। এতে জনস্বাস্থ্য আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন