মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তৈরি পোশাক খাতের চেয়ে অভিবাসী খাতের অবদান বেশি-গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই শ্রম অভিবাসন খাতে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তৈরি পোশাক খাতের চেয়ে অভিবাসী খাতের অবদান বেশি। গত ৪০ বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাসহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলা এ খাতটি কখনোই গুরুত্ব পায়নি আমাদের জাতীয় বাজেটে। যথোপযুক্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতটি আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে। বিশ্ব শ্রমবাজারে এই খাত থেকে আরো বেশি উপার্জনের জন্য অধিক পরিমাণে প্রফেশনাল ও দক্ষ কর্মী প্রেরণ করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারিভাবে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাতকে আরো বেশি গতিশীল করা দরকার। গতকাল শনিবার রাজধানীর স্প্রেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বাজেট ও শ্রম-অভিবাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারপার্সন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. মো. নুরুল ইসলাম, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পরিচালক ড. এস এম মোরশেদ, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান, ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার পারভেজ সিদ্দিকী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিরাপদ অভিবাসন জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অপরিহার্য। টেকসই লক্ষ্যমাত্রার ২৩০টি সূচকের মধ্যে ৪টি সূচক মাইগ্রেশন সম্পর্কিত। এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভাল করার বড় একটা ব্যাটল গ্রাউন্ড হলো অভিবাসন খাতে ভাল করা। দেশ থেকে প্রতি বছর ৬-৭ লাখ লোক বিদেশ যাওয়ার ফলে বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হচ্ছে। তবে গড় রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের গড় রেমিটেন্স ভারতের চেয়ে আড়াই গুণ কম। তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল ২০২০ সালের মধ্যে ৩ মিলিয়ন ও ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন দক্ষ লোক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে যা প্রবাসে শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
অধ্যাপক রহমান পেশা বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভিবাসন খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ ব্যক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ এবং অভিবাসন খাতে যথাযথ পরিবীক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি জাতীয় অভিবাসন নীতির আলোকে বিধিমালা তৈরি ও এর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং অভিবাসন বিষয়ে সরকারী উদ্যোগে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ ব্যক্ত করেন।
মূল প্রবন্ধে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা বলা হলেও জাতীয় বাজেটে অভিবাসন খাত খুবই অবহেলিত। এবারের বাজেটে অভিবাসন খাতের জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র ০.১৬ শতাংশ। অথচ অভিবাসন খাতকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এককভাবে এ খাতের অবদানই বেশি। বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতের মাধ্যমে ২০১৫ সালে রফতানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বলা হলেও তুলা, সুতা, কাপড়, কাঁচামাল ইত্যাদির খরচ বাদ দিলে নীট রফতানি আয় দাড়ায় ১৩ বিলিয়ন। আর একই অর্থবছরে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স-এর পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার। সেই বিবেচনায় সর্বদিক থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই আমাদের বৈদেশিক আয়ের প্রধান খাত বলে উল্লেখ করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরো বলেন, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ লাখ লোক বিদেশে গেলেও এদের প্রায় ৯০ ভাগই বৈশি^ক চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ প্রশিক্ষিত নয়। অথচ বিশ^মানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে বিদেশ পাঠানো হলে একদিকে যেমনি বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বাড়বে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও অনেক বেশি অর্জিত হবে। তিনি বলেন, ফিলিপাইনের ৩৫ লাখ লোক দেশের বাইরে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে, যে সংখ্যা বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকের অর্ধেকের চেয়েও কম, অথচ ফিলিপাইন প্রতি বছর রেমিটেন্স হিসেবে আয় করছে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। এটি সম্ভব হয়েছে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের কারণে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন