শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

শিক্ষার্থীদের ঈদ আনন্দ

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে আনন্দময় দিন। হ্যাঁ প্রতিবছর খুশির বরাত নিয়ে ঈদ আসে আমাদের মাঝে। কিন্তু এবারের ঈদটা ছিল শোকসাগরে ভরপুর। তবুও ধনী-গরিব, ছোট-বড় সকলে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আনন্দময় পরিবেশে পালন করে নিয়েছে ঈদুল ফিতর। যে যতটুকু পেরেছে সে ততটুকু আনন্দকে লুফে নেয়ার চেষ্টা করেছে। কেনইবা নেবে না? বছরের দুটি ঈদের মধ্যে ঈদুল ফিতরকে ঘিরেই থাকে মানুষের মাঝে বেশি আনন্দ আর উদ্দীপনা। আর এ দিনটিতে পরিবারের সাথে আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছুটে গেছে গ্রামের বাড়ি। পিতামাতা আত্মীয়স্বজনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো নিয়ে ‘ঈদ আয়োজনে’ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো শিক্ষার্থীদের ঈদের স্মৃতি। তাহলে চলুন আমরা জেনে আসি কেমন কাটল তাদের ঈদের দিন। স মাহবুব আলম।

সাইফুল ইসলাম সজীব, লোক-প্রশাসন বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ
ঈদ সবসময় মুসলিম উম্মাহর কাছে একটি বিশেষ দিন। এবারের ঈদটা বাবা-মায়ের সাথে করতে পেরে একটু বেশিই আনন্দিত। আর সেইসাথে সবাইকে নিয়ে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করা, ফটোসেশন, সেলফি এসব যেন অন্য সময়ের ঈদের চাইতে একটু বেশিই আনন্দিত করেছে। আর বিকেলে গ্রামের পুরাতন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় কাটানো ছিল অন্য রকম আরেকটি ভালোলাগা।

শান্ত সেতু, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ
ঈদের দিন যদি কারো জন্মদিন হয় তবে সেই ভালোলাগা কেমন হয় আজ বুঝলাম। ০৭.০৭ তারিখটা আমার জন্মদিন ছিল। ৯ বছর পর এবার সেইদিনে আমি বাড়িতে। রাত ১২টায় পরিবারের সাথে কেক কাটলাম। প্রায় সারারাত দেশের এবং দেশের বাইরের অনেকে আমাকে শুভ কামনা জানালেন। সকালে আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক আমাকে বাড়িতে এসে চমকে দিলেন। দুপুরে আমার থিয়েটারের মানুষজন দেখা করতে আসলেন। একটানা ঝুম বৃষ্টির পর গ্রামের বাইরে বের হলাম। আমার জীবনে এই প্রথম ঈদে বাড়ি থেকে বের হলাম। বিকাল থেকে রাত অবধি পুরো চুয়াডাঙ্গা শহর বাইকে চড়ে ঘুরলাম। বৃষ্টিতে ভিজে পাগলের মতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। চুয়াডাঙ্গার সন্তান যারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে আছি সবাই একত্রিত হলাম। তারপর আলো আঁধারি রাতে আকাশের চাঁদ আর তারা দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরলাম।

আশিকুর রহমান রুশো, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ
আমার কাছে এবারের ঈদের আমেজে যোগ হয়েছে ‘‘ভয়’’। ‘‘জঙ্গি হামলা’’ একটা নতুন আতঙ্কের নাম। ভাবতে অবাক লাগছে ঈদের নামাজেও হামলা। গুলশান হামলার পর সাধারণ মানুষ বড় অসহায় হয়ে গেছে। এর প্রভাব দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, ঈদের দিনেও সবাই বাসায় থাকছে, বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে অনিশ্চয়তার। সন্ধ্যা হতেই সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। গাইবান্ধার মতো মফস্বল শহরেও যখন পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব টহল দিচ্ছে। সবকিছু বাদ দিয়ে আমারা বন্ধুরা যখন আড্ডা দিতে প্রস্তুত তখন পুলিশের বাধা, ‘‘থাকা যাবে না, সিকিউরিটি দিতে পারবে না। নেহায়েত চেনা মুখ ছিল তাই আমরাও চলে গেলাম। ভয় আমাদের মনে খুব ভালোভাবেই আছে। বাসা থেকে ফোনের পরিমাণ আরো বেশি। সবকিছুর উপর একটা কালো ছায়া পড়েছে। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সবাইকে যেন তিনি নিরাপদে রাখেন।

জাহিদুল ইসলাম শোভন, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ, ৪৪তম ব্যাচ
অনেক ভালো কেটেছে ঈদের দিন। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে মজার সব খাবার খাওয়া। নানা-নানিদের সাথে দেখা করা। বাসায় ফিরে আবার বন্ধুর সাথে দেখা করতে মগবাজার গেলাম, আড্ডা দিলাম, সেলফি তুল্লাম। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরা।

খান মুনতাসির আরমান, আইন ও বিচার বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ
মায়া ও মমতায় জড়ানো শৈশবকে খুঁজে পাওয়া এখন বেশ কষ্টসাধ্য। এলোমেলো পরিচর্যাহীন রঙিন সময় হয়তো এখন ঈদের অনুভূতি হয়ে উঠে না। মধ্যবিত্ত পরিবারে ২২টি ঈদকে পার করে এখন আমি সত্যিই ঈদকে আনন্দের সাথে মেলাতে পারি না। বরং আমার কাছে ঈদ মানসিক অস্বস্তি আর ব্যস্ত সময় থেকে নিজেকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য বাছাই করা একটা দিন এবং হ্যাঁ, আমি নিশ্চিতভাবে সব চিন্তা-ব্যস্ততা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো একটা দিন কাটিয়েছি।

হাবিবুর রহমান মিরন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ৪৪তম ব্যাচ
ভালোই কেটেছে দিনটি। নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম আর এলাকায় ঘোরাঘুরি। অনেকদিন পর সবাই একসাথে। তবে সবাই ছিল একটু চিন্তিত। কারণ দেশের এহেন পরিস্থিতিতে আমরা অনেক বেশি ঝুঁকিতে আছি বলে মনে হচ্ছে। পরপর দুইবার দেশের দুই জায়গায় হামলা! ঈদের দিনেও বিস্ফারণ! এখন নিরাপদ থাকাটাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। আজকে আমি হয়তবা হামলার শিকার হইনি, আমার এলাকায় কোনো নাশকতা ঘটেনি। কিন্তু কালকে যে ঘটবে না তার কি নিশ্চয়তা! ঈদের নামাজ পড়ে এসে যখন এরকম ঘটনা শুনি তখন আসলে অনভূতি ব্যক্ত করার মতো কিছুই থাকে না।

জুলফিশাহ রাবেয়া মুমু, চারুকলা বিভাগ, ৪৪তম ব্যাচ
ঈদ মানে সকালবেলা মেহেদী রাঙানো হাত, আব্বুর হাতের সেলামি, আম্মুর হাতের রান্না, ছোট ভাইয়ের সাথে সেলফী, আর বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি, আর ক্লান্তিভরা রাতের ঘুম। কিন্তু এবার ঈদটা একটু ব্যতিক্রম ছিল। সবকিছুর মাঝে কাজ করছিল আতঙ্ক। আতঙ্ক নিয়ে ঈদ কাটানো আর পায়েস সেমাই খাওয়া যায়, কিন্তু ভালো থাকা যায় না। যাই হোক, আগামীতে ভীতিহীন নিরাপদ ঈদ কাটাতে চাই। চাই মনখোলা হাসি দিয়ে খুশির দিন ঈদকে আরো ভালোবাসতে। রিমঝিম বৃষ্টি আর নতুন জামা সাথে করে ঘরে বসে কাটানো এই ব্যতিক্রমী ঈদটা তেমনটাও খারাপ ছিল না। বছর ঘুরে ফিরে আবার আসুক ‘শুভ দিন’।

তরিকুল ইসলাম বাপ্পি, ইতিহাস, ৪৩তম ব্যাচ
আমার জীবনের এবারের ঈদটা কেটেছে অন্য এক অনুভূতির মধ্যে। প্রচ- বুকের ব্যথায় ছিলাম হাসপাতালে ভর্তি। বাড়ির মাটিতে ঈদের নামাজ পড়ার ছিল প্রবল ইচ্ছা। তাই ভালো লাগছে বলে ডাক্তারকে মিথ্যা কথা বলে বাড়িতে চলে আসি। ভাবছিলাম মারাই যাব আর কোনোদিন ঈদ পালন হবে না। আমি রাতে জানি না কাল ঈদে যেতে পারব কিনা? তবুও স্বপ্ন দেখে বুকের খুব ব্যথা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠতে একটু দেরি হলো কারণ কেউ আগে ডাকেনি। কিন্তু অলৌকিক ব্যাপার সকালে উঠে আমার একটুও ব্যথা অনুভব হলো না। আমার এরকম দেখে সবার চোখে সরিষা দেখার মতো। আমার ইচ্ছাশক্তি আমাকে আমার মাতৃভূমির মাটিতে ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগ করে দিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন