আমদানি পণ্যসামগ্রী ভর্তি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে একমুখী খালাসই শুধু হচ্ছে। ডেলিভারি পরিবহন প্রায় বন্ধ। বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে বেসামাল পণ্যজট। এ অবস্থায় অচলের মুখোমুখি রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে পণ্যভর্তি কন্টেইনার ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে গেছে।
বর্তমানে ৪৯ হাজার ৪১০ টিইইউএস কন্টেইনারের স্তুপ জমে গেছে। আর স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৪৯ হাজার ১৮ ইউনিট। বন্দরে কন্টেইনার রাখার জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার খালাস হচ্ছে কয়েক হাজারে। আর ডেলিভারি হচ্ছে মাত্র কয়েক শতে।
বন্দরে মজুদ বা আটকে থাকা কন্টেইনারে রমজান মাসে অধিক চাহিদার খাদ্যশস্য, নিত্য ও নিত্যপণ্যের ডেলিভারি পরিবহন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণেই দিন দিন জট বৃদ্ধি পায়। রোজার নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, গম, ছোলা, ভোজ্যতেল, মসুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল, গুঁড়োদুধ, আদা, পেঁয়াজ-রসুন মিলিয়ে লাখ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী।
তাছাড়া আপেল, মাল্টা, আঙ্গুরসহ দুই হাজার ফ্রোজেন কন্টেইনার ভর্তি তাজা ফল-মূলের বিশাল ভাণ্ডার বন্দরে আটকে আছে। সেই সাথে আমদানি চালানে একের পর জাহাজের খালাসকৃত কন্টেইনারে নামছে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কাঁচামাল এবং হরেক যন্ত্রপাতি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে সবধরনের পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বন্দর থেকেও পণ্য ডেলিভারি শূন্য প্রায়।
গার্মেন্টসহ অধিকাংশ শিল্প-কারখানা বন্ধ। একের পর এক রফতানির অর্ডার বাতিল হওয়ায় আগের স্টকও জমে আছে প্রচুর। তাই শিল্প মালিকগণ বন্দর থেকে শিল্প-কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে এ মুহূর্তে আগ্রহীই নন। আবার গত বৃহস্পতিবার সরকার কর্তৃক সমগ্র দেশ করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সবধারনের চলাচল বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত থাকায় বন্দর থেকে ডেলিভারি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বন্দরজট সঙ্কটের এখানেই শেষ নয়। বরং তা আরও জটিল হচ্ছে। ইয়ার্ডগুলো যথন কন্টেইনারে পরিপূর্ণ, আর কোথাও ফাঁকা জায়গা নেই, এখনও আমদানি চালান নিয়ে আগের সিডিউল অনুযায়ী বিদেশি জাহাজ আসছে একের পর এক। এখন মূল জেটি-বার্থে আমদানি কন্টেইনারবাহী ১০টি জাহাজে হ্যান্ডলিং কাজ চলছে। তাছাড়া বহির্নোঙরে অলস অপেক্ষা করছে কন্টেইনারের ৩৬টি জাহাজ। এ
রফলে চট্টগ্রাম বন্দরে এবার অলস জাহাজের জট সৃষ্টি হচ্ছে। কন্টেইনার জটের সঙ্গে জাহাজজটের সমস্যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। অলস বসে থাকা জাহাজগুলোকে দৈনিক হাজার হাজার কোটি ডলার ডেমারেজ দিতে হবে।
এদিকে বন্দরজট নিরসনে আমদানি পণ্যসামগ্রী দ্রুত খালাস ডেলিভারি পরিবহন, সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে এক পত্রের মাধ্যমে ৬টি প্রস্তাব দিয়েছেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি। এতে তিনি জরুরিভিত্তিতে বন্দর-কাস্টমস-শিপিং, ব্যাংকসহ বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সরকারী দপ্তরসমূহ খণ্ডকালীন খোলা রাখার জন্য আহŸান জানান।
একই সঙ্গে চেম্বার বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ভোগ্যপণ্য আমদানি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সহায়তার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ নির্বিঘœ রাখার ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় তা ফলপ্রসু হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিডিউলে অবস্থানরত এবং অপেক্ষমান থাকা জাহাজসমূহের বাড়তি কন্টেইনার মজুদ রাখার জন্য বেসরকারি ডিপোসমূহ (অফ ডক) এবং এর বাইরেও কিছু খালি জায়গা দ্রুত ব্যবহার করতে চায়। যাতে কন্টেইনার ও জাহাজজটে বন্দর সম্পূর্ণ অচল হয়ে না পড়ে। তবে এরজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদন প্রয়োজন। সেদিকেই তাকিয়ে আছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবহারকারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন