বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সম্পর্ক শেষ করে দেয় যে চারটি কারণ

প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : কোন দম্পতি বিবাহ-বিচ্ছেদে যাচ্ছে কিনা তার ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারেন বৈবাহিক স্থিতিশীলতা বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীর অধ্যাপক জন গোটম্যান।
১৯৯২ সালের এক সমীক্ষায় একথা বলা হয়েছে। কেবল আন্দাজের উপর নির্ভর করে তিনি এটা করেন না বরং তিনি দম্পতিদের পর্যবেক্ষণের সময় সেই সব সুনির্দিষ্ট সূচকগুলো বিবেচনা করেন যা সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করে বা তাদের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যার কারণেই বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদে গড়ায়। জন গোটম্যান তার ‘দি সেভেন প্রিন্সিপলস ফর মেকিং ম্যারেজ ওয়ার্ক’ বইতে দাম্পত্য সুখ ও বিচ্ছেদ নিয়ে যারা ভাবছে তাদের উদ্দেশে তার পূর্বাভাসের রূপরেখা তুলে ধরেন। বইটি ১৯৯৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।
গোটম্যান এই চারটি সূচককে ‘রহস্য উদ্ঘাটনের চার ঘোড়সওয়ার’ হিসেবে অভিহিত করেন। এই সূচকগুলো দাম্পত্য সম্পর্ককে অস্থিতিশীল করে তোলে। সম্পর্কের মধ্যেকার সংঘাত সমাধানে এই চার ঘোড়সওয়ার নিশ্চিত প্রতিবন্ধক। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দম্পতিরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আর এটাই স্বাভাবিক। তবে তারা সমাধানের চেষ্টায় ক্ষান্ত দিলে সমস্যা সংকটে রূপ নিতে পারে।
সমালোচনা
সমালোচনা হচ্ছে অভিযোগ। তবে সঙ্গীর খুঁত খুঁজে বের করার জন্য যখন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয় তখনই তা সমস্যার সৃষ্টি করে। ‘থালা-বাটিগুলো পরিষ্কার নয় এবং আমি ক্ষুধার্ত’ এবং ‘এর জন্য জরিমানা হতে পারে’ উদাহরণ হিসেবে এসব উক্তির উল্লেখ করা যেতে পারে। অথবা ‘তুমি একেবারেই অপদার্থ। তুমি খাবার তৈরির তোমার পালার দায়িত্ব আবারো ভুলে গেছ’ সব সময় এ ধরণের অভিযোগ-সমালোচনা সম্পর্কের ভিতকে দুর্বল করে ফেলে। মনে রাখতে অহেতুক সমালোচনা কেবল সংকটই ডেকে আনে।
নির্বিকার থাকা
আপনি নির্বিকার থাকার কৌশল নিলে তা আপনার সঙ্গীকে এই বার্তাই দেয় যে সে যা বলছে তাতে আপনি গুরুত্ব দেন না এবং আপনার সঙ্গী কি মনে করছে তা নিয়ে একেবারেই ভাবেন না। কোন সমালোচনা বা উদ্বেগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া আপনার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ এটা হচ্ছে এক ধরণের দায়িত্বহীনতা।
গোটম্যান তার বইতে লিখেছেন, আপনি হয়তো বলছেন, ‘এটা আমার নয়, তোমার সমস্যা।’ কিন্তু এ ধরণের দায়িত্বহীনতা দাম্পত্য জীবনে সমস্যাই ডেকে আনে। নির্বিকার আচরণ অব্যাহত থাকলে তা সমাধানের বদলে সংঘাতকেই বাড়িয়ে তোলে।
পাষাণ প্রাচীর
নিজেদের মধ্যে কখনো পাষাণ প্রাচীর সৃষ্টি করবেন না। কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন না। খোলামেলা কথা বলতে হবে। কথা বলা থেকে বিরত থাকা সমস্যা সৃষ্টি করে। এমনকি অনেকে শারীরিক প্রয়োজনের সময়ও কথা বলেন না। কখনো কখনো মানুষের মন খারাপ হতে পারে, উদ্বিগ্ন হতে পারে এবং হতাশাগ্রস্তও হতে পারে। এ সময় মানুষ দীর্ঘক্ষণ বা মনোযোগ দিয়ে অপরের আলোচনায় অংশ নেয় না। কিন্তু এগুলো যখন স্থায়ীরূপ নেয় তখন তা সম্পর্কের মাঝে কঠিন দেয়াল সৃষ্টি করে। এ ধরণের আচরণ সংকট সমাধানের চেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে। গোটম্যানের ভাষায় ক্রিকেট খেলায় আউট হওয়া থেকে রক্ষা পেতে একজন ব্যাটসম্যান যেমন সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করেন তেমনি দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখতেও সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করতে হবে।
অবজ্ঞা
সুস্থ সম্পর্কে অন্য তিনটি বিষয় স্বাভাবিক হলেও অবজ্ঞা খুবই ক্ষতিকর। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বদঅভ্যাসটি পরিত্যাগ করতে হবে, না হলে দাম্পত্য জীবনে এরজন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে। অবমাননাকর সম্পর্কের উপসর্গ হচ্ছে অবজ্ঞা। অবজ্ঞা একজন মানুষকে অনেক নিচে নামিয়ে দিতে পারে। এটা আপনাকে একজন বুদ্ধিবৃত্তিক বা সাধারণ বিচারবোধেরও নিচে নামিয়ে দিতে পারে। অকারণে সঙ্গীর সঙ্গে মজা করাও একধরণের অবজ্ঞা বা সঙ্গীকে অবমাননা করা। আন্তরিকতার অভাব ঘটলে অনেক সময় ভালো জিনিসটিও খারাপ লাগে। এধরণের সিম্পটম অবজ্ঞারই নামান্তর।
অবজ্ঞা বা অবমাননা দাম্পত্য সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলে কারণ এটা সঙ্গীর প্রতি বিতৃষ্ণা ডেকে আনে। গোটম্যান বলছেন, এটা কার্যতো সঙ্গীর সঙ্গে সমস্যার সমাধানকে অসম্ভব করে তোলে।
গোটম্যানের ভাষায় সংঘাত সমাধানে বাধা ‘চার ঘোড়সওয়ার’ বা চারটি কারণ হচ্ছে মূল। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এসব বাধা অতিক্রম করতে হবে। অবশ্য এটা বলা যাবে না যে দাম্পত্য জীবন একেবারেই সমস্যা ও সংকটমুক্ত। প্রতিটি সম্পর্কের মাঝেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকেই। এই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক চেষ্টা চালানোই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে সমস্যা বেশী জটিল ও সঙ্গীর সঙ্গে মতপার্থক্য খুব বেশী হলে তাতে কখনো সমাধান হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বিবাহিত জীবন টিকিয়ে রাখা কঠিন। প্রতিটি মানুষের জীবনধারা, ব্যক্তিত্ব বা মূল্যবোধ আলাদা। এই আলাদাবোধ যখন গভীর শিকড় গেড়ে বসে তখনই দেখা দেয় সংঘাত।
পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে এধরণের মতপার্থক্যের বিষয়গুলো খুব গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এবং সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে একসঙ্গে বসবাস করার উপায় বের করতে হবে।
সুখী দম্পতি ও সাধারণ দম্পতির মধ্যেকার পার্থক্য হচ্ছে সমস্যা সমাধানে সামর্থের অভাব। গোটম্যানের ভাষায় আগ্রহ, আন্তরিকতা, সক্ষমতা বা সামর্থই হচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূল অস্ত্র।
এই সম্পর্ক ফের আন্তরিক করে তোলার চেষ্টা অনেক ধরণের হতে পারে। শান্তি ও সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টায় যুক্তি তুলে ধরার সময় আপনি অন্তর্গত কৌতুক উপস্থাপন করতে পারেন। আপনার সঙ্গীর মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টার সময় নিজেকেও হাসিমুখ করে তোলার মতো কিছু করতে পারেন অথবা আন্তরিকতার সঙ্গে বলতে পারেন, ‘আমি দুঃখিত।’
কোন দম্পতির বন্ধুত্ব দৃঢ় হলে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে তারা রীতিমত বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন। এই অবস্থায় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় তারা একে-অপরের আন্তরিকতা উপলব্ধি করতে পারেন এবং একে অপরের মনের কথা সহজেই বুঝতে পারেন। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আন্তরিকতা দম্পতিকে সুখী করে তোলে। সূত্র : নিউজ রিপাবলিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন