যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সংগঠনগুলো রমজানে জামাত আদায় ও কমিউনিটি ইফতারের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়ে রোববার নির্দেশনা জারি করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে রমজান মাসে করোনভাইরাসের বিধিনিষেধ শিথিল না করার আহŸান জানান।
হোয়াইট হাউসে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আহŸান জানানোর সময় দাবি করেন, করোনাভাইরাস মহামারীর বিধিনিষিধে অন্যায়ভাবে শুধু খ্রিস্টানদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে যেখানে কি না মুসলিমদের রমজানে হয়তো একই নিয়ম গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কিছু মানুষ মসজিদ ভালোবাসেন। আমি এর বিপক্ষে নই। কিন্তু আমি বলবো, এই দেশে অনেক অসমতা আছে। বিরাট অসমতা। আমরা সবাই দেখবো সামনে কী হয়’।
ট্রাম্প রক্ষণশীল লেখক পল স্পেরির একটি টুইট রিটুইট করেন। ওই টুইটে পল স্পেরি লিখেছিলেন, ‘দেখা যাক কর্তৃপক্ষ ইস্টারের সময় যেভাবে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম আরোপ করেছিল ঠিক সেভাবে রমজানের সময় মসজিদেও করা হয় কি না।’
হোয়াইট হাউসে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক এই টুইটের বিষয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইমামরা সামাজিক দূরত্বের নিয়ম অগ্রাহ্য করবেন এটি ট্রাম্প বিশ্বাস করেন কি না। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার নিজস্ব একটি বিশ্বাস আছে। আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী সেটি কোন বিষয় নয়, কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা ধর্ম নিয়ে ফারাক করেন। আমি মনে করি খ্রিস্টান ধর্মকে এই দেশে খুব অন্যায্যভাবে দেখা হয়।
প্রসঙ্গত, ইস্টার সানডেতে যুক্তরাষ্ট্রের কেনসাস, কেনটাকিসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্য করোনা ছড়ানোর আশঙ্কায় চার্চের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইতোমধ্যে ঘরে থাকার নির্দেশ অমান্য করায় ফ্লোরিডা ও লুইজিয়ানায় দুই চার্চের যাজজকে গ্রেফতার করা হয়। রিপাবলিকানরা বলছেন, ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছেন।
মি. ট্রাম্পের প্রেস কনফারেন্সের কয়েক ঘণ্টা পর উত্তর আমেরিকার ফিকহ কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যদি বর্তমান পরিস্থিতি একই রকম থাকে তবে ফিকহ কাউন্সিল লোকদেরকে তারাবীতে তাদের ঘরে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করবে’।
২৩ এপ্রিল উত্তর আমেরিকায় রমজান শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানকার বেশিরভাগ মুসলমান মসজিদগুলিতে কমিউনিটি ইফতার আয়োজনকে পছন্দ করেন, তারাবির সময়ও পূর্ণ থাকে। তবে এ বছর, বেশিরভাগ মুসলিম সংগঠন ঘরে বসে নামাজ আদায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং সরকারের নিষেধাজ্ঞাগুলি অনুসরণ করার আহŸান জানিয়ে আসছে।
পাকিস্তানসহ বিশ্বজুড়ে মুসলিম পÐিতদের সমন্বয়ে গঠিত এই কাউন্সিলটি রমজানের সময় দ্রæত ও অন্যান্য ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পালন করার সময় কীভাবে মুসলমানরা করোনভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে সে সম্পর্কে নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যগুলো আশঙ্কা ছড়িয়েছে যে, মহামারীটি মুসলিমবিরোধী মনোভাব উস্কে দিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস কাউন্সিল (সিএআইআর) এই মন্তব্যগুলোকে ‘বিভাজক’ হিসাবে বর্ণনা করেছে এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, আমেরিকার মসজিদগুলি ইতিমধ্যে জামাতে তারাবি এড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
মুসলিম অ্যাডভোকেটদের একটি সংস্থা বলেছে, ‘যখন ট্রাম্পের কাছ থেকে আরও পরীক্ষা ও ভেন্টিলেটর পাওয়ার কথা ছিল, এমন সময়ে তিনি মুসলিম বিরোধী ধর্মান্ধতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা (মুসলিম) বিজ্ঞানের দিকে নজর দিয়ে নেতাদের (আমেরিকাতে) সমর্থন দিচ্ছি’।
ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা (আইএসএনএ) স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, মুসলিম পÐিতরা ইতোমধ্যে জামাতে নামাজ স্থগিত করার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আক্ষেপ করে বলেছেন যে, কিছু মার্কিন আইন প্রণেতা মুসলমানদের পক্ষে খুব বিনীত ছিলেন। তিনি টুইট করেছেনম ‘তারা খ্রিস্টান গীর্জার অনুসরণ করে, তবে তারা মসজিদের পিছনে যায় বলে মনে হয় না। আমি চাই না যে, তারা মসজিদের পিছনে যাবে। তবে তাদের গতিবিধি কী তা আমি দেখতে চাই’।
ফিকহ কাউন্সিলের এই আদেশে দলগুলির উত্থাপিত কয়েকটি বিষয়ের জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের আশঙ্কা ছিল যে, মুসলিমরা মহামারীটি রোধে নিষেধাজ্ঞাগুলি মেনে চলতে পারবে না। কাউন্সিল ব্যাখ্যা করেছে যে, রমজানে মসজিদ বা অন্যান্য জায়গায় কোনও কমিউনিটি ইফতার হবে না। লোকজনকে তারাবিহ ঘরে বসে পড়তে উৎসাহিত করে কাউন্সিল বলেছে, ‘যারা মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াত করতে জানে না, তারা হাতের মুঠোয় কুরআনের কপি ধরতে পারবে এবং তারাবিহ নামাজে কপি ধরে পড়বে’।
ঈদের জন্য কাউন্সিল মসজিদ ইমামদের সরাসরি সম্প্রচারিত একটি খুতবা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে, তবে লোকদের তাদের বাড়িতে দু’রাকা’আত নামাজ আদায়ের আহŸান জানিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন