বিএনপির প্রতীক হলো ধানের শীষ। নির্বাচন এলেই ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে নেতার আবির্ভাব ঘটে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারের নামে এক ঝাঁক নেতা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হন। বিএনপির তিনশ’ প্রার্থীর মধ্যে সর্ব প্রথম ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় সুলতান মুহাম্মদ মনুসরকে। করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় ঘরে বসে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষকে ত্রাণ দেয়ার বিএনপির আহŸানে সাড়া দেয়নি ধানের শীষের ওই প্রার্থী। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো করে ত্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু সুলতান মুহম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী, আবদুল মালেক রতনসহ অর্ধ শতাধিক প্রার্থীর কোনো খবর নেই। দলের আহবানে বিএনপির পরীক্ষিত নেতারা এগিয়ে এলেও নির্বাচনের সময় বসন্তের কোকিল খ্যাত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের অধিকাংশরই দেখা নেই। এলাকায় ত্রাণ চাওয়া নিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়া সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের ‘এলাকায় গিয়ে কি তোর বোনকে বিয়ে করব’ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে।
নির্বাচন এলে বিরোধীদলের প্রার্থী হতে চাওয়া নেতাদের অভাব হয় না। যে কোনো নির্বাচনেই প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু হয় আগ্রহী নেতাদের। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তো কোনে কথাায় নেই। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রতিটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১৫ জনেরও বেশি বিএনপি নেতা ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেন। যাদের মধ্য থেকে ৩০০ জনকে বেছে নেয় দল। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের দীর্ঘদিনেও দলীয় কর্মসূচিতে খুঁজে পাননি নেতাকর্মীরা। এখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সঙ্কটের মধ্যেও তাদেরকে খুঁজে পাচ্ছেন না নিজ নিজ এলাকায়। দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগÑ নির্বাচন এলেই প্রার্থী হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন সকলে। কিন্তু দেশ, দেশের মানুষ, দল ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্কটে, দুঃখ-দুর্দশায় তাদের বেশিরভাগকেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা দেশ এখন স্থবির। দিশেহারা দিনমজুর, খেটে খাওয়া, অসহায়, দুস্থ মানুষেরা। এসব মানুষ এবং দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামর্থবান নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। অনেকেই নির্দেশনা মেনে প্রতিদিনই ঘরে ঘরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু যারা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই নিরব থাকায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীদের সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে নামার নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। নির্দেশনা মেনে দলটির নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালন করেন। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর বিপাকে পড়েন কর্মহীন, খেটে খাওয়া মানুষ। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশন দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান। বিশেষ করে যেসব নেতাদের বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসাথে যারা আগামীতে মনোনয়ন চান তাদেরকেও এই নির্দেশনা দেয়া হয়। দলটির একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সঙ্কটময় মুহূর্তে সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করছেন। কোন নেতা কোথায় কি করছেন তার খোঁজ-খবর রাখছেন। কারা মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, কারা দূরে থাকছেন। কোন নেতা সহযোগিতার নামে ফটোসেশন করছেন তাও স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমেই খোঁজ নিচ্ছেন তারেক রহমান। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে নিচ্ছেন সার্বিক কার্যক্রমের খবর।
বিএনপির অন্যতম একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল তারা যেনো নিজ নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ায়, আগামীতে যারা মনোনয়ন চান তাদেরকেও একই কাজ করতে হবে। যতদিন করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ থাকবে ততদিন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান।
দলটির বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কিছু কিছু এলাকায় প্রার্থীরা নিজে কিংবা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে উপহার ও খাদ্যসমাগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। আবার প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন কিংবা কোনো নির্বাচনেই প্রার্থী হননি এমন নেতারাও ছুটে যাচ্ছেন অসহায়-দুস্থ মানুষদের দ্বারে দ্বারে, তুলে দিচ্ছেন সাধ্যমতো সহযোগিতা। বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে দলটির পক্ষ থেকে প্রায় ৫ লাখ পরিবারের হাতে সহযোগিতা তুলে দেয়া হয়েছে। ডাক্তার ও হাসপাতালের জন্য পিপিই, মাস্কসহ চিকিৎসকদের চিকিৎসাসামগ্রী তুলে দিচ্ছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল নিয়মিতই দেশের বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধানের শীষের ৩০০ প্রার্থীর মধ্যে অন্তত: ২০০ জনকেই এলাকায় খুঁজে পাচ্ছেন না এই দুর্যোগকালে। খোঁজ নিচ্ছেন না তাদের হয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেতা বিপদগ্রস্ত নেতাকর্মীদেরও। তবে নির্বাচনে প্রার্থিতা না পেলেও অন্যান্য সময়ের মতো করোনা সঙ্কটকালে মানুষের পাশে রয়েছেন উদীয়মান ও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা। তাদের মধ্যে- ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, এমরান সালেহ প্রিন্স, সোহরাব উদ্দিন, মীর সরাফত আলী সপু, অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, মাহমুদুর রহমান সুমন, মামুন বিন আব্দুল মান্নান, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ফজলুর রহমান খোকন। প্রতিটি উপজেলায় তৃণমূল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা মানুষের পশে দাঁড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের পক্ষ থেকে সারাদেশেই নেতাকর্মীরা অসহায়, দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। যতদিন করোনাভাইরাসের প্রকোপ থাকবে ততদিন যার যার সাধ্যমত মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে ৫ লাখ পরিবারের হাতে সহযোগিতা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এটি চলমান থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন