বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুর্কি রাজনীতিতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ইতিবাচক প্রভাব, সব দল একাট্টা

সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা তুরস্কের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা-পরবর্তী সময়ে তুরস্কের সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য দেখা যাচ্ছে, তা খুবই বিরল একটি ঘটনা এবং এতে এরদোগান সরকারের হাত আরও শক্তিশালী হবে। সংসদের এক বিবৃতিতে শনিবার বলা হয়, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে ও বাইরে যে ঐতিহাসিক সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা তুরস্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ঐক্য দেশ ও জাতীয় স্বার্থকে আরও শক্তিশালী করবে। এটাও ভাবা হচ্ছে, তুরস্কের বর্তমান অবস্থা আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে।
সর্বদলীয় এই একাত্মতা দেশটিতে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে সমর নায়কদের বেশ ভাবাবে। ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে ‘আল্লাহর দান’ বলে অভিহিত করে এরদোগান সব বিরোধী পক্ষকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আপনারা দেশকে বড় ধরনের একটি পতনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ আমার শত্রুদের বরদাশত করেননি।
এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় এরদোগান যদি সংবিধানে আরও পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করেন, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য সুফল বয়ে আনবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবেও আরও অনেকটা এগিয়ে যাবে।
সংসদ সদস্য ও বামপন্থি কুর্দিস পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র হিজিয়ার ওজাই বলেন, এরদোগান দেশে গণতান্ত্রিক দ্বার আরও উন্মুক্ত করবেন, আমরা সেটাই চাই। গত বছরের নির্বাচনে এইচডিপির অপ্রত্যাশিত সাফল্য এরদোগানের সাংবিধানিক উচ্চাশার ক্ষেত্রে বাধা হয়েছিল। তখন থেকেই এরদোগান কুর্দিদের ওপর সংসদে আক্রমণ বন্ধ করেন এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ওজাই বলেন, এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা তুরস্কের রাজনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দেবে।
ব্যর্থ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এরদোগান অভিযুক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইসলামী চিন্তাবিদ ফেতুল্লাহ গুলেনকে। ওই ঘটনার পর ৬ হাজারেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। তুরস্কের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী সাংবিধানিক আদালতে এদের বিচার করা হবে।
সাংবিধানিক আদালতের দুজন বিচারককে অপসারণ করা হয়েছে। এরদোগান এর আগে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের দায়ে দুজন প্রখ্যাত সাংবাদিকের পক্ষে আদালত এ বছর যে রায় দিয়েছিল, তা তিনি গ্রহণ করবেন না।
এদিকে, ইস্তাম্বুলভিত্তিক সাংবাদিক ও তুরস্কে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সমর্থনকারী গ্রুপ পি২৪-এর প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ফিনকেল বলেন, আমরা যদি ভুলও করে থাকি, তবুও আদালত যে রায় দিয়েছে, তার অন্যথা হবে না।
সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে এরদোগানের একে পার্টিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হবে। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা সিনান আলজেন বলেন, এখন রাজনৈকি দলগুলো একাত্মতা প্রকাশ করছে। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত তা থাকবে কিনা, সেটাই কথা। ক্ষমতাসীন দলকে যদি তারা সমর্থন করে, তাহলে তা ভালো ফল বয়ে আনতে পারে, নচেৎ নয়।
তিনি বলেন, মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন এই নির্বাচন। এটা কি শুধু এরদোগানের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিকে সুসংহত করার জন্য? সে ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থার পক্ষে কম সমর্থনই পড়বে। তুরস্কের শ্রমমন্ত্রী বলেছেন, এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। ইনকিরলিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের যৌথ বিমান ঘাঁটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার যদি ইনকিরলিক ও গুলেনের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করে, তাহলে তা তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের চরম সংকট তৈরি করবে বলে আলজেন জানান। দ্য গার্ডিয়ান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন