করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন, দফায় দফায় সরকারী ছুটি বৃদ্ধি, তারপরেও বসে নেই কৃষক, কৃষি শ্রমিক, কৃষি কর্মকর্তা কর্মচারীগণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সবুজ আর সোনালীর সংমিশ্রণে ইরি বোরো আধাপাঁকা ধান বিকালে হালকা বাতাসে দুলছে ধানের শীষ আর সে সাথে দুলছে বরেন্দ্রের এলাকা কৃষকের মন। কৃষকের চোখে মুখে শুধু হাসির ঝিলিক। তার দিনের পুরোটা সময় মাঠে তীক্ষ দৃষ্টি রাখছেন। চৈত্র মাসের তপ্ত হাওয়ার মধ্যেও সোনাঝরা ধানের শীষগুলো উঁকি দিচ্ছে বার বার।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা মাড়াই। এবার ইরি বোরো ধানের সরকার অগ্রিম মুল্য নির্ধারণ করাই খুশি গোদাগাড়ীসহ রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বাজারে ধানের দাম কিছুটা কম হলেও বাড়বে বলে মনে করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। সেই আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। কিন্তু সেই আশায় গুডে বালি একশ্রেণীর প্রভাবশালী কৃষক সেঁজে ধান দিয়ে খাদ্য গুদাম ভরে দেয়ার নজীর রয়েছে এখানে।
কিন্তু তাদের মধ্যে আতংক কাজ করছে প্রতিবছর প্রভাবশালী মহল কৃষক সেঁজে রাতারাতি গম ধান দিয়ে খাদ্যগুদাম ভর্তি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপক অভিযোগ কৃষকদের। এবার যেন এ অবৈধ কারবারটি কথিত প্রভাবশালীরা করতে না পারে সেদিকে সরকারের প্রধান মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন কৃষকেরা।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়াতন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমান ৩৫ লাখ ৭শ হেক্টর, ব্ল¬¬কের সংখ্যা ২৭ টি, মৌজার সংখ্যা ৩শ ৯৪ টি, গ্রাম ৪শ ৩০টি, সেচ যন্ত্র গভীর নলকূপের সংখ্যা ৭১৯ টি, অগভীর নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৪শ ৫০ টি, লোক সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার, ৫৫ জন (প্রায়), পুরুষ ১ লাখ, ৬৫ হাজার ৬৬জন এবং মহিলা ১ লাখ ৭২ হাজার ৯শ ৮৯ জন। শিক্ষার হার ৫২ দশমিক ২৭ ভাগ। কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৭২ হাজার ২শ ৮০ জন। চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০১৯ -২০২০ ইং অর্থ বছরে লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫শ হেক্টর, এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৮শ ৮৫ হেক্টর বেশী জমিতে ইরি ধান চাষ হয়েছে। চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর জমিতে।
গোদাগাড়ীর পৌরসভা এলাকার আদর্শ কৃষক হিসেবে পরিচিত যিনি ধান বীজ রোপন, চারা গাছ লাগানো থেকে এখন পর্যন্ত ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে কৃষক সমাজকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন, কৃষকদের সমস্যাগুলি নিয়ে কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রেখেছে তিনি হলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, ৮ বিঘা জমিতে ইরি ধান আবাদ করেছি, প্রতি বিঘাতে সার, বীজ, নিড়ানী, কীটনাশক, সবসহ আনুমানিক ৯ হাজার ৫ শত করে খরচ হয়েছে, বর্তমানে ভাইরাসে কারনে শ্রমিকের অভাব হবে না মনে হচ্ছে আর আল্লাহ যদি আসমানি বালা মশিবত না দেয় তাহলে কৃষক বাঁচবে ইনসাল্লাহ।
ভাজনপুর এলাকার কৃষক শ্রী দুলু দেব বলেন, আবহাওয়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, সময়মত সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক প্রয়োগ করতে পাওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হবে আশা করচ্ছি, তবে ধানের দাম ও ধান কাট নিয়ে শঙ্কায় আছি, প্রতিবছর সরকার ধান কিনলেও আমাদের ভাগ্যে জুটেনা কৃষকসেঁজে ধান দিয়ে খাদ্য গুদাম ভর্তি করেন একটি প্রভাবশালী কুচক্রীমহল। একই মন্তব্য করেন গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী এলাকর কৃষক আব্দুল মাতিন, শামসুল হক, আলাউদ্দিন, রাজাাবাড়ী এলাকার আজিজার রহমান, আলতাফ হোসেন, হরিনবিংসা এলাকার আব্দুর রহমান মাষ্টার।
গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিগত দিনে খাদ্য গুদামে ধান গম ক্রয়ে অনিয়ম, দূর্নীতি হয়েছে। আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে আমরা এখন কোন অনিয়ম, দুর্নীতি হতে দিব না। প্রকৃতকৃষকগণ তাদের নায্য অধিকার ফিরে পাবেন, তারই তাদের উৎপাদিত পুন্য বিক্রি করতে পারবেন।
আমারা চাল চোর আলাল উদ্দিন স্বপনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি, তাকে দল থেকে বহিস্কার করেছি। সরকারের পাশাপশি এমপি মহোদয়ের নির্দেশে হট লাইনের মাধ্যমে গরীব, দুস্থ্য, শিশুদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি সেখানে যে অনিয়ম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আছি কঠোর অবস্থানে ।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নাজমুল ইসলাম সরকার বলেন, ৫০ ভাগ সরকারী বরাদ্ধে ও ৫০ ভাগ দ্যোক্তা কৃষকদের অর্থে ৫ টি ধান কাটার জন্য ধান কাটার কম্বাইন হার্ভেস্টার ক্রয় করা হয়েছে। এগুলি স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে ভাড়ায় চালিত হবে। এছাড়া ৩টি রিপার মেশিন রয়েছে। ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা করা হচ্ছে কৃষকদের ধান কাটার জন্য, এ তালিকায় স্থান পাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র, স্কাইড, রোভার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক। শিক্ষকদের ধান কাটা নিয়ে কোন সমস্যা হবে না ইনসাল্লাহ। আমি এখানে সরকারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, কোন অনিয়ম, দুর্নীতি দেখলে আমি সামান্যতম পিছনে সরে আসবো না।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে আমন ধানের তেমন রোগ-বালাই ছিল না। আবহাওয়া ছিল অনুকুলে থাকায় এবং সময়মত সার, কীটনাশক নিড়ানী দিতে পরায় এবার ইরি ধানের বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। তবে করোনা দীর্ঘসময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খরার কারণে এবং করোনা ভাইরাসের কারণে যন্ত্রাংশের দোকানপাট বন্ধা থাকায় সেচ কাজে একটু সমস্যা হয়েছে। আর ধানের দাম পেয়ে কৃষকরাও লাভবান হবেন। তিনি আরও জানান করোনা পরবর্তী সময়ে প্রধান মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশে খাদ্য আমরা সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে পরামার্শ দিয়ে যাচ্ছি, খাদ্য সংকট মোকাবেলায় নির্বিঘেœ বোরো ধান কাটার জন্য ধান কাটার ৬টি কম্বাইন হার্ভেস্টার, ৩টি রিপার মেশিনসহ সবধরণের প্রস্তুতি চলছে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন