বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পরশুরামের মুহুরীর চর নিয়ে ভারতের পিছুটান

প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ছাগলনাইয়া থেকে : প্রায় ৭০ বছর ধরে বিরোধপূর্ণ বিলোনিয়ার মুহুরীর চর সমস্যা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা হলেও হঠাৎ করে ভারতের পিছুটানের কারণে সীমান্তে পাকা পিলার স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সমঝোতা হওয়া ৯২.১৪ একর ভূমির সীমানা নির্ধারণ আবারও ঝুলে গেল। সূত্র জানায়, ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মহুরীর চর অবস্থিত। মুহুরী নদীর ভাঙনের ফলেই বাংলাদেশের বৃহৎ অংশে মুহুরীর চরের সৃষ্টি হয়। দেশ বিভাগের পর থেকেই এ চর নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অনেকে আহত ও নিহত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত উভয় দেশের জরিপ বিভাগ বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় যৌথ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সীমান্তের প্রধান পিলার ২১৫৯ (৩এস) থেকে ৪৮ এস পিলার পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালিত হয়। যৌথ জরিপ দল সীমানা নির্ধারণ করে সাময়িকভাবে ৪৪টি কাঠের সাব-পিলার স্থাপন করে। পরবর্তীতে এসব পিলারের পরিবর্তে পাকা পিলার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে দু’দেশের জরিপ দল। যৌথ এ জরিপের পর মুহুরীরর চরের ৭১.৯৪ একর ভূমির মালিকানা ফিরে পায় বাংলাদেশ। অপরদিকে ভারত পায় ২০.২০ একর ভূমি।
এদিকে জরিপের ফলে চিহ্নিত হওয়া বাংলাদেশের মালিকানাভুক্ত ৭১.৯৪ একর ভূমির সীমানা নির্ধারণী ৪৪টি কাঠের সাব-পিলারের স্থলে পাকা পিলার স্থাপনের চেষ্টা করা হলে আপত্তি জানায় ভারত।
জানা গেছে, ত্রিপুরার রাজস্ব বিষয়ক মন্ত্রী বাদল চৌধুরীর আপত্তির কারণে সীমানা পিলার স্থাপন করা যাচ্ছে না। তিনি আরেক দফা মুহুরীর চরে জরিপ চালাতে চান। তার দাবি, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জরিপ দল যে জরিপ করেছে তাতে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর ফল হিসেবে মুহুরী নদীর উজানের জমি বাংলাদেশের বলে চিহিৃত করা হয়েছে। এ অবস্থায় ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এবং তাই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান করেছেন। মুহুরীর চর সীমান্ত সমস্যা হলেও তিনি একে ত্রিপুরার দক্ষিণাঞ্চলে মুহুরীর চর হিসেবে পরিচিত ছিটমহল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও দু-দেশের বৈঠকে কখনো মুহুরীর চরকে ছিটমহল হিসেবে দেখানো হয়নি ।
সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দু-দেশের যৌথ জরিপের মাধ্যমে অস্থায়ী সীমান্ত পিলার স্থাপন করে দু-দেশের সীমানা নির্ধারণের পরও বাংলাদেশের প্রাপ্ত জমিতে বিএসএফর বাধায় চাষাবাদ করতে পারছে না বাংলাদেশীরা। সীমানা নির্ধারণের পর বাংলাদেশীরা মুহুরীর চরে আবারো চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকার সংস্থান করবেন এবং নিজেদের হারানো জমিতে ভোগদখলের অধিকার ফিরে পাওয়ার আশায় আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ এবং ভারত সরকার স্থায়ী পিলার নির্মাণ না হওয়ায় জমির অধিকার ফিরে পাচ্ছে না। এখনো পূর্ণতা পায়নি তাদের সে আশা। মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে ভারতের এ পিছুটানে হতবাক হয় বাংলাদেশের মুহুরীর নদী ও চর সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষ।
মুহুরীর চরে জমি আছে এমন একজন কামাল উদ্দিন ধনু মিয়া। তিনি বলেন, এ চরের জন্য আমরা বহু বছর ধরে কষ্ট করেছি। যৌথ জরিপের ফলে বাংলাদেশ যতটুকু ভূমি পেয়েছে তাতে আমরা খুশি। দু’দেশের সম্পর্ক জোরালো হওয়ার পাশাপাশি এ জায়গায় ফসল ফলাতে পারবে মানুষ। দ্রুত সীমান্তে পাকা পিলার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
ফেনীস্থ ৪ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল শামীম ইফতেখার জানান, যৌথ জরিপের ফলে সমাধান হওয়া সীমান্তে ভারতের আপত্তির কারণে পাকা পিলার স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন