শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অসহায় মানুষের সহযোগিতায় সরকারের উদ্যোগ আরো বাড়াতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

বিশ্বের কাছে ‘রোল মডেল’ হয়ে ওঠা দেশের অর্থনীতি ভূলুণ্ঠিত হওয়ার মতো ধাক্কা খাবে, তা মাস দেড়েক আগেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি। বিগত এক দশক ধরে সরকারের উন্নয়নের কথা মানুষ প্রতি মুহূর্তে শুনেছে। সরকারের সমালোচকদের ভাষায় উন্নয়নের জোয়ারের কথা শুনতে শুনতে ‘কান ঝালাপালা’ হয়ে গেল। সরকার এসব সমালোচনার ধার না ধেরে তার কাজ চালিয়ে গেছে। একের পর এক বড় বড় প্রজেক্টের কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা তুলেছে, আর বিনিয়োগ করেছে। এই টাকার আবার বেশ বড় অঙ্ক ঋণ, কুঋণ, খেলাপী ঋণের মাধ্যমে যেমন লোপাট হয়েছে, তেমনি বিদেশে ধারাবাহিকভাবে পাচারও হয়েছে। কোনো কোনো হিসাব মতে, বিগত দশ বছরে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি পাচার হয়েছে। এই অর্থ যারা পাচার করেছে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সুবিধাজনক সময়ে দেশ ছেড়ে বিদেশ গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান-শওকতে জীবন কটিয়ে দেয়া। এজন্য মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকায় বাড়ি-ঘর করে রেখেছে, যাকে বলে সেকেন্ড হোম। এই যে এক লম্বা ছুটি যাচ্ছে, তাদের নিশ্চয়ই আফসোস হচ্ছে, ইশ্, যদি করোনার কারণে ছুটিটা না হয়ে স্বাভাবিক ছুটি হতো, তাহলে কত না সুখে হলিডে কাটানো যেত! আর শুধু বাংলাদেশে করোনা হলে অনেক আগেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়ে থাকা নিজের বাড়ি-ঘরে আরামে থাকা যেত। এখন সেই উপায়ও নেই। সেকেন্ড হোম থেকে শুরু করে বিশ্বের সব দেশই করোনায় আক্রান্ত। এটা দেশের একটি শ্রেণির জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তবে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য বিষয়টি শুধু দুঃখের নয়, এটা তাদের অস্তিত্ব বা বাঁচা-মরার বিষয়। তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে, সামনে তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ও দুর্দিন অপেক্ষা করছে। তারা এটাও বুঝতে পারছে, সরকার যেসব প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তাতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সময়কে সহজ করে দেবে, এমন সম্ভাবনা কম। আর ত্রাণ নিয়ে চুরি-চামারির মতো যেসব কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে, তাতে তাদের কপালে কী জুটবে, তা এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে। আবার এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বেই ত্রাণ বিতরণ কমিটি করা হয়েছে। যদি এমন দেখা যায়, ত্রাণ মেরে দেয়া নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ কমিটি গঠন করাকে অনেকে ‘শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেয়া’র ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, ত্রাণ কারা পাবে, তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। 

নিকটতম সময়ে দেশের অর্থনীতির চেহারা কেমন হবে, তার আগাম ধারণা এখন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ জিডিপি’র হিসাব বুঝুক আর না বুঝুক, এ নিয়ে সরকারের গর্বের সীমা নেই। অর্থনীতিবিদরা এক ধরনের হিসাব করলে সরকার করে আরেক ধরনের। তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। সরকার চলতি অর্থ বছরের জিডিপি ৮.১৫ শতাংশ হবে বলে ধরেছে। এ নিয়েও অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভিন্নমত রয়েছে। জিডিপি কম হবে বলে তারা বলেছে। ভগ্নাংশের হিসাব-নিকাশ নিয়ে তর্কযুদ্ধ চলেছে। সাধারণ মানুষ এসব কেবল শুনেছে। তবে যা নিয়ে এত তর্ক, তার হিসাব এখন পুরোপুরি উল্টে গেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটসহ অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা যে হিসাব দিয়েছে, তা গড় করলে দেশের জিডিপি হবে ২ থেকে ৩ শতাংশ, যা বিগত চল্লিশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভাবা যায়, কোথায় ৮.১৫ শতাংশ, আর কোথায় ৩ শতাংশ! এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আগামী দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের জন্য কী দুর্দিন অপেক্ষা করছে! যারা জনগণের টাকায় অসাধারণ হয়েছে, তাদের মোটেও সমস্যা হবে না। জিডিপি যদি শূন্য বা তার নিচেও চলে যায়, তাতেও তাদের কিছু যাবে আসবে না। কারণ তাদের নিজস্ব জিডিপির কোনো হেরফের হয় না। ফলে জিডিপি কম কিংবা বেশি, যাই হোক না কেন, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সাধারণ মানুষকেই ভুগতে হয়। এ সময়ে সরকারকেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হয়। স্বাভাবিক সময়ে তো বটেই, কঠিন পরিস্থিতিতে আরো বেশি করে দাঁড়াবে, এটাই সরকারের কাজ। কারণ জনগণের জন্যই সরকার। সরকারের যা কিছু আছে, সবই জনগণের। এখানে কার্পণ্য করার সুযোগ নেই। করোনার এই কঠিনতম সময়ে কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অর্থকড়িসহ ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমের সাড়ম্বর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের ক্রেডিট নেয়ার কিছু নেই। কারণ, এটা সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্ব। বরং সরকারের ক্রেডিট হচ্ছে, চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে দেয়া এবং টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অবিরাম কাজ করে যাওয়া। মানুষ কষ্টে আছে, এ কথা তাকে যাতে শুনতে না হয়। বুঝিয়ে দেয়া, সরকার সক্ষম এবং বিগত একযুগ ধরে বাস্তবিকই মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করেছে। সরকারের উন্নয়নের স্লােগান যে ঠুনকো নয়, টেকসই ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে, তা প্রমাণ করা। সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ মানুষের জীবন রক্ষায় ব্যয় করা হবে। এটি খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ এই মুহূর্তে ইট-পাথরের স্থাপনার উন্নয়নের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখাই বেশি জরুরি। মানুষই যদি না থাকে, তবে সুন্দর সুন্দর দালান-কোঠা, বড় বড় ব্রিজ, রোডের দুই পয়সারও মূল্য নেই। কাজেই মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এই সময়েই সরকারকে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। পৃথিবীর সব সরকারই তা করে। এ পর্যন্ত সরকার যেসব সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কর্ণসুখানুভূতি সৃষ্টি করেছে। সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে কঠিনতম পরিস্থিতিতে পড়া মানুষের টিকে থাকা সহজ হয়ে যাবে। সমস্যা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে। আমাদের দেশে অনেক সুন্দর সুন্দর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে ভেস্তে যেতে দেখা গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক শঠতাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা হয়, ’৭৪ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তা যতটা না সম্পদের অভাবে হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, ত্রাণের সিংহভাগই তারা লোপাট করে দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সে সময়ে বঙ্গবন্ধুকে পর্যন্ত আক্ষেপ করে বলতে হয়েছে, আমি আনছি ভিক্ষা করে, আর চাটার দল সব খেয়ে ফেলছে। এমনকি ডেসপারেট হয়ে তাঁকে বলতে হয়েছে, আমার কম্বল কই। রাজনৈতিক এই দুর্বৃত্তদের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষকে আরও কঠিন করে তুলেছিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ থাকা সত্তে¡ও মানুষকে না খেয়ে মরতে হয়েছে। এবারও ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম দুর্যোগের সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ’৭৪ সালের মতো নয়। খুবই ভালো অবস্থা। আবার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং দীর্ঘ মেয়াদের সরকারও ক্ষমতায়। ফলে দেশের মানুষের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ভালো ভালো কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, অল আউট পাওয়ারফুল এই সরকার ঘোষিত কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন করে। আবার এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, সরকারের চাটার দল এখন আরো শক্তিশালী এবং সংখ্যায়ও বেশি। ইতোমধ্যে তার নজির তারা দেখিয়েছে। আরও দেখার বিষয়, যে আমলাদের সরকার সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছে এবং দেশের সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি, এই ক্রুশিয়াল টাইমে তারা তার প্রতিদান কীভাবে দেয়। তবে বিএনপিকে এ ব্যাপারে ক্রেডিট না দিলে কিছুটা অবিচার করা হবে। কারণ দলটি একেবারে শুরুর দিকেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনামূলক তহবিল গঠন করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করে। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভীষণ নাখোশ হয়ে বিএনপি মহাসচিবকে এক হাত নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী প্রথমে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, তারপর প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা পরে তা আরো বাড়িয়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। আল্টিমেটলি বিষয়টি এই দাঁড়ালো, জাতির ক্রান্তিকালেও ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলের কোনো কিছুই ভালো চোখে দেখে না।
এখন বিচার্য বিষয় হচ্ছে, সরকার ঘোষিত সহায়তামূলক প্রণোদনার গুণগত মান কতটুকু। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সহায়তায় সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল এবং বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় নতুন কিছু নেই। কারণ ভিজেএফ ও কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে এ প্রণোদনার বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। প্রকল্পটির ওপর শুধু জোর দেয়া হয়েছে। নগদ অর্থ বিতরণ কর্মসূচিটিও পুরনো। বয়স্ক ভাতার মাধ্যমে অনেকেই মাসিক ভিত্তিতে এ অর্থ পেয়ে থাকে। এসব কর্মসূচির জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ থাকে। ফলে নতুন করে অর্থ দেয়ার বিষয়টি উহ্য থেকে যাচ্ছে। রেশনিং ব্যবস্থাও পুরনো। এক্ষেত্রে ৫০ লাখের জায়গায় এক কোটি করার কথা বলা হয়েছে। এর বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে ব্যাংকিং পদ্ধতিতে তিন মাসে তিন হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণ সুবিধার সুদে সরকারের ফিফটি পার্সেন্ট সুবিধা এবং স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মোট কথা, সরকারের এসব প্যাকেজ ঘোষণা মূলত পুরনো কাসুন্দি নতুন করে ঘেঁটে দেয়া এবং ঋণভিত্তিক। অথচ শুনলে মনে হয়, সরকার সব টাকা এমনি এমনি দিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। প্রকৃত অর্থে, এই দুর্দিনে সরকারের নতুন বরাদ্দ ও সহযোগিতার পরিমাণ বড় জোর তিন-চার হাজার কোটি টাকা। তার মানে হচ্ছে, এই প্রণোদনামূলক প্যাকেজে যেমন শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে, তেমনি ‘কইয়ের তেলে কই ভেজে’ বাহবা নেয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে সরকার যদি এ প্রক্রিয়ায় মানুষের অভাব-অনটন দূর করতে পারে, তাহলে খুবই ভালো কথা। অবশ্য এর ফলাফল পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। সরকার বলতে পারে, টাকা-পয়সা কি এমনি এমনি দিয়ে দিতে হবে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, হ্যাঁ, অসহায়, কর্মহীন মানুষকে কর্মে ফেরা না পর্যন্ত তাদেরকে এমনি এমনি দিতে হবে। কারণ, সরকারের টাকার মালিক জনগণ। জণগণের কাছ থেকেই সরকার এই টাকা নিয়েছে। এখন তাদের এই দুর্দিনে তাদের টাকাই সরকারকে দিতে হবে। এতে খুব বেশি টাকা যে সরকারকে দিতে হবে, তা নয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে যে প্রায় ৬ কোটি মানুষ জড়িত এবং এখন বেকার হয়ে পড়েছে, তাদের প্রত্যেককে যদি মাসে ৫ হাজার টাকা করে তিন মাস দেয়া হয়, তবে সরকারের খরচ হবে মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকা। দরিদ্র ও হতদরিদ্র মিলিয়ে আরও ৬ কোটি মানুষকে যদি একইভাবে নগদ টাকা দেয়া হয়, তবে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কি সরকারের কাছে খুব বেশি? যেখানে মাস-বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, ঋণ খেলাপীরা হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে, এ তুলনায় উল্লেখিত টাকা কোনোভাবেই বেশি নয়। অথচ এ সময়ে অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলো সরকারের কাছ থেকে এই সহায়তা পেলে তাদের জীবনযাপন যেমন সহজ হয়ে যাবে, তেমনি দুঃসময় অতিক্রম করে নতুন করে পথ চলা শুরু করতে পারবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না’ এমন প্রতিশ্রুতিরও বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। আবার সরকার তার ঘোষিত দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার বা ১৩ হাজার টাকা (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে), এ হিসেবেও সহযোগিতা করে প্রমাণ দিতে পারে, তার এ ঘোষণা ভিত্তিহীন নয়। অর্থাৎ সরকারের একার পক্ষে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো অসম্ভব ব্যাপার নয়। সরকার হয়তো ভাবতে পারে, তার তহবিলে টান পড়বে, ভবিষ্যতে দেশ চালাতে কষ্ট হবে, তবে তার এ আশঙ্কা ধরে নিয়েও বলা যায়, সরকারের মোটেও কষ্ট হবে না। এ দুঃসময় কেটে গেলে এই মানুষগুলোই তখন নিজ তাকিদে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন সরকারের সহযোগিতার খুব একটা প্রয়োজন পড়বে না। এখন তো তারা কোনো ধরনের নড়াচড়াই করতে পারছে না। ফলে এ সময়েই রাষ্ট্র পরিচালকদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর সময়। সরকারের সহযোগিতামূলক উদ্যোগ দেখে মনে হচ্ছে, কৃচ্ছসাধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিপেটিপে টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। আর সবকিছুর পেছনে শর্ত জুড়ে দিচ্ছ। অথচ সরকারের কৃচ্ছসাধন করা ও কঠোর হওয়া প্রয়োজন কমগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং বড় বড় প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স হওয়া। ঋণ খেলাপী, অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের পাকড়াও করা। ইতোমধ্যে ঋণ খেলাপীর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। ভাবা যায়, এত টাকা নিয়ে একটা শ্রেণি মহানন্দে আছে, সরকার এদের টিকিটি ধরতে পারছে না, অন্যদিকে দেশের খেটে খাওয়া কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে! এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো নিয়েই রাষ্ট্রের যত কিপ্টেমি। এসব মানুষ রাষ্ট্রের কাছে কোনো ভিক্ষা চায় না। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন চায়। তারা শুধু তাদের এই অচল সময় ও দুর্গম পথটুকু কারো হাত ধরে পার হতে চায়। তাদের পার করে দেয়ার এই কাজটি করতে পারে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং তা করার দায়িত্বও তার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১২ পিএম says : 0
What ever you mentioned in your article, government don't bother. They are enjoying nice food, living in palace like accommodation. we the public are dying of hunger. Days are numbered because Allah is recording everything's. Top to Bottom of the government and their supporter will be held responsible in front of Allah {SWT}. Allah will throw them into hell. This is the rewards for them.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন