বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কমে গেছে অনলাইন খাবার অর্ডার

করোনাভাইরাসের প্রভাব

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই চাপ বেড়েছে অনলাইন বাজারে। বিশেষ করে মুদি সামগ্রী সরবরাহ করতে গলদঘর্ম অবস্থা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। আগে যেখানে ১ ঘণ্টায় রাজধানীর মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন সেই প্রতিষ্ঠানই বিপুল পরিমাণ চাহিদা আর লোকবল সঙ্কটের কারণে এক সপ্তাহেও পণ্য পৌঁছে দিতে পারছেনা। বাড়তি অর্ডারের চাপ সামাল দিতে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝে তাদের ওয়েবসাইটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

একইভাবে লকডাউনের প্রভাবে বাজারের বড় দোকান থেকে শুরু করে গলির মুদি দোকানদারও এখন মোবাইল ফোনে অর্ডার নিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস একদিকে যেমন অনলাইন কেনাকাটায় আশির্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে অন্যদিকে সঙ্কটে ফেলেছে অনলাইন ফুড ডেলিভারিকে। খাবারের অর্ডার কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন মুদি সামগ্রী ডেলিভারি দিচ্ছে।

বিদেশী প্রতিষ্ঠান উবার ইটসের বাংলাদেশ লিড মিশা আলী বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের খাবারের অর্ডার কমে গেছে। তবে আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা পূরণে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে উবার তার উন্নত প্রযুক্তি ও ডেলিভারি পার্টনারদের সঙ্গে বিদ্যমান বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে নগরবাসীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উবার ইটসের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য গ্রোসারি চেইন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাকে সচল রাখবে এবং কোভিড-১৯ রোধে চলমান দেশব্যাপী লকডাউনকে কার্যকর করতে সহায়তা করবে।

যানজট আর সময়ের অভাবে ঘরে বা অফিসে বসেই খাবার পেতে খুব দ্রæতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন খাবার ডেলিভারি। ২০১৩ সালে অ্যাপস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গড়ে উঠা এই ব্যবসা এখন প্রায় ১ কোটি ডলারের। তবে হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সঙ্কটে পড়েছে এই ব্যবসা। দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে ছুটি, লকডাউন, মানুষের ঘরে ঘরে অবস্থান আর ভাইরাসের ভীতির কারণে কমে গেছে খাবারের অর্ডার। স্বাভাবিক সময়ে দিনে যেখানে ১২ থেকে ১৫ হাজার অর্ডার হতো, এখন সেটি ৭০০ থেকে এক হাজারে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বজুড়ে কলেবর বেড়েছে অনলাইন খাবার ডেলিভারির ব্যবসার। স্ট্যাটিসটার হিসাবে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে অনলাইনে খাবার ব্যবসায় এখন পর্যন্ত আয় ১০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১৭ শতাংশ বেশি। এতে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে চীনে। ফোর্বস ম্যাগাজিন বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ২শ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করবে এটি। বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। দেশে এখন ৫টি অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার দুটিই বিদেশি। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- হাঙরিনাকি ডটকম, সহজ ফুডস, পাঠাও ফুড, উবার ইঁস, ফুড পান্ডা।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানালেন, ঢাকায় যানজট পেরিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে পছন্দের খাবার খাওয়ার বদলে, অনেকেই অনলাইন অর্ডার দিয়ে সেই খাবার বাসায় এনে পরিবারের সাথে খেতে পছন্দ করেন। ২০১৩ সাল থেকে দেশে অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ ও সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এ ব্যবসা জমে উঠে। তবে, হঠাৎ করেই বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই ব্যবসা সঙ্কটে পড়েছে।

তারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে তাদের প্রতিদিন ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার খাবার ডেলিভারির অর্ডার আসতো। এর বেশিরভাগই ছিল বিভিন্ন অফিসে। দুপুরের খাবার, বিশেষ পার্টি কিংবা বিশেষ কোন আয়োজনে রাজধানীজুড়ে তারা এসব খাবার অর্ডার করতেন। কিন্তু এখন সেটি নেমে এসেছে ৭০০ থেকে এক হাজারে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি চলছে, মানুষ এখন ঘরেই থাকছে, নিজেরা রান্না করে খাচ্ছে। এরপরও কিছু অর্ডার অনেকেই করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন। ডমিনোস পিজা পরিচালনা করছে গোল্ডেন হার্ভেস্ট গ্রæপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রাজিব সামদানি বলেন, আমরা এই সঙ্কটকালীন সময়েও গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটি গ্রাহককেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরবরাহ করা হচ্ছে। খাদ্য প্রস্তুত থেকে শুরু করে ক্রেতার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত হাইজেনিক প্রটোকল ও নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেম অনুসরণ করা হয়। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের কারণে তাদের অর্ডার এখন অনেক কমে গেছে। দিনে ১২০-১৩০টি অর্ডার ডেলিভারি করা হচ্ছে।

ফুডপান্ডা বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বারিন রেজা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও আমরা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার চেষ্টা করছি। সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে-অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। অর্ডারও কমে গেছে। ফলে আমরা পান্ডামার্ট চালু করেছি। এই মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে গ্রাকদের মুদি ও মেডিসিন সরবরাহ করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন