শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লকডাউনে রাজত্ব শুধুই প্রকৃতির

আবু জাফর সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১৪ এএম

করোনা আতঙ্কে মানুষ যখন দিশেহারা তখন প্রকৃতি যেন নিজের সাজে সজ্জিত হচ্ছে। ঢাকা শহরকে দূষণের দুর্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার মহা আয়োজনের লিপ্ত হয়েছে। ১ নাম্বার স্থান থেকে হটিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে ১০৪ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ১২তম খারাপ অবস্থানে ছিল ঢাকা।

করোনার থাবায় মানবজাতির যখন চরম দুঃসময়; ঠিক তখনই প্রকৃতি মেতে উঠেছে আনন্দে। করোনাকালের একাকিত্ব! একা মানুষ, একা প্রকৃতি। বিপুল জনারণ্যের দাপটে যখন অরণ্যের মাঝে নেমে এসেছিল চরম সংকটকাল; ঠিক তখনই এলো একাকিত্বের এই আদেশ। যে মানুষ প্রকৃতির শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল পদে পদে, সে মানুষ এবার ঘরবন্দি। আর চিরকালীন বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে প্রকৃতি। মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রাণী বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেসব আচরণ করে, প্রকৃতি যেন তাই করছে এখন। এ যেন মুক্তিরই আনন্দ।

বৈশাখের তপ্ত দহনে বসন্ত শেষে গ্রীষ্মের আগমণি বারতা নিয়ে উজ্জ্বল লাল রঙের অপূর্ব মোহনীয় থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়া ফুলে ছেয়ে গেছে জাতীয় সংসদ ভবনের লেক সড়কের দু’পাশ, হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা।

অন্যদিকে জনশূণ্য নগরীতে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। গাছে গাছে রঙ্গিন পাতা আর ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে চারদিক।ফাঁকা রাস্তার পাশে বাগান বিলাসী ফুলের সমারোহে সৃষ্টি হয়েছে নান্দনিক পরিবেশ। রাজধানীর গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনি চিত্র দেখা গেছে।
ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী সামার বা গ্রীষ্মের সময় এখন। টানা ছুটি কিংবা লকডাউনে জনজীবন স্তব্দ। আর এই সুযোগে প্রকৃতি যেন রঙে, স্বরূপে, লাবণ্যে ফেটে পড়ছে। রাজধানীর যেদিকে চোখ যায় শুধু লাল-সবুজের সমারোহ।

রাজধানীর সড়ক দ্বীপে ফুটেছে বাগানবিলাস আর মোড়ে মোড়ে তীব্র লাল রঙা কৃষ্ণচূড়া। এ যেন প্রকৃতির মিলনমেলা। চারদিকে যেন নতুন জীবনের আহ্বান। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, মাত্র কদিন আগেও এই প্রকৃতি পত্র-পুষ্পবিহীন শুষ্ক-শীর্ণ-দীর্ণ ছিল।

প্রতিটি মানুষের জীবনকে যখন করোনাভাইরাস অন্ধকার করে রেখেছে।। দীর্ঘ ছুটিতে ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। তখন পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় এসব ফুরের ছবি দেখে ফুলকিত হবেন তারা। জীবনের নেগেটিভ দিকগুলোকে পজিটিভে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করবেন হয়তো।

এমন দৃশ্য দেখে কবি ফাহীম ফিরোজ বলেন, ফুলের মত হউক সবার জীবন। আমি আশা করি, একটি সুন্দর সকাল আসবেই। করোনাভাইরাসের কবল থেকে আমরা সহসাই মুক্তি পাবো।

রাজধানীর গুলিস্তান ও শাহবাগে দেখা যায় বাগান বিলাসী ফুলের সমারোহ। সড়কের ওপরে আপন মহিমায় ফুটে আছে। সুনসান পরিবেশে প্রকৃতিকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। দেখতে রঙিন কাগজের মতো বলে কাগজ ফুল বা কাগজি ফুল নামে ডাকে অনেকে। এসব গাছ ঝোপালো, শাখা-প্রশাখা শক্ত মানের এবং কণ্টকময়। ঘন পাতা, রঙে সবুজ, অগ্রভাগ সূচালো, আকারে ছোট। গাছের গড় উচ্চতা ১০ থেকে ১২ মিটার। শাখা-প্রশাখা অবনত ছাটাই না করা হলে নিচ দিকে ঝুঁকে থাকে। একটি ফুল থেকে অন্যটির দূরত্ব খুব কম। ফুলে নরম কোমল পাপড়ি তিনটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত। ফুল গন্ধহীন। এর ফুল ফোটার মৌসুম প্রায় সারা বছরই। তবে গ্রীষ্ম, বষার্, শরত ও হেমন্তে গাছে বেশি পরিমাণে ফুল ফুটে।

প্রকৃতিবিদরা বাগান বিলাসকে অনার্মন্টাল প্ল্যান্ট বা শোভাবধর্ক উদ্ভিদ হিসেবে চিহিৃত করেছেন। বাগান বিলাস তার রং রূপের বিলাসি রূপ ছড়িয়েছে চারধারে।

অন্যদিকে তপ্ত গ্রীষ্মে এই ধূসর নগরের ভাঁজে ভাঁজে এখন ডানা মেলেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। ঢাকার পার্কে–পথে আগুনঝরা এই ফুল দিয়ে নগরবাসীর আহ্লাদের সীমা নেই। সংসদ ভবনের ক্রিসেন্ট লেক–সংলগ্ন সড়কটি এখন কৃষ্ণচূড়ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। পথের দুধারে ছাতার মতো মেলে থাকা গাছগুলোর ডালপালাজুড়ে অগুনতি ফুলের অবারিত উচ্ছ্বাস। শাখাগুলো দেখাচ্ছে একেকটি সুবিন্যস্ত পুষ্পস্তবকের মতো। এ ছাড়া চন্দ্রিমা উদ্যানসহ গোটা শেরেবাংলা নগরেও এখানে-ওখানে কৃষ্ণচূড়ার আধিক্য চোখে পড়ার মতো। শুধু ডালেই নয়, কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রং শোভা পায় গাছের নিচেও। ঝরা ফুলের এই সৌন্দর্য দেখার আসল সময় ভোরবেলা। লেকের পাড়ের ফুটপাতে ভোরের মৃদু বাতাসে ঝরে ঝরে পড়ছে লাল ফুলের দল। করোনোভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি রাজধানীবাসী এই সুন্দর মুহূর্তের স্বাক্ষীও হতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার রাজধানী বয়ে যাওয়া ঝড় বৃষ্টির পর প্রকৃতি আরও সুসভিত হয়ে হাসছে। মুক্ত হাওয়ায় ভাসছে। বৃক্ষরাজির নব পত্রপল্লব ছড়িয়েছে শাখায় শাখায়। নদী-সমুদ্র আর বন্যপ্রাণীদের দল যেন মুক্তির আনন্দে আত্মহারা। তারা যেন এমন সময়েরই অপেক্ষায় ছিল। বহুকালের অবহেলা-অবজ্ঞায় ক্ষত-বিক্ষত পোশাক বদলে নতুন রূপে আজ প্রকৃতি। বদলে গেছে প্রকৃতির নৈসর্গিক চেহারা। চাপা কষ্ট থেকে বেরিয়ে মুক্তির স্বাদ নিচ্ছে যেন রাজধানীর পরিবেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন