বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চট্টগ্রামে করোনাজয়ীর কথা ঘাবড়াবেন না, লড়াই নিজের

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৫ পিএম

ঘাবড়ে যাবেন না একদম। লড়াইটা কিন্তু আপনার নিজের। অন্যরা সহযোগী। মনের সাহস শক্ত রাখুন। আমার করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছিল। হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। তাতে আমি কিন্তু ঘাবড়ে যাইনি। এমনিতেই আমার মনোবল শক্ত। এখন আল্লাহর রহমত ও চিকিৎসকদের সেবায় সুস্থ হয়েছি।
কথাগুলো বলছিলেন সদ্যমাত্র করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরা করা চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের এক ব্যক্তির। পেশা তার কাঠ ব্যবসা। বয়স ৫৫ বছর। তার বেশ স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছিল। যেগুলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য বেশ সহায়ক বলা যায়।

তিনি বলতে চাইছেন, মনোবল মজবুত রেখে ধৈর্যের সাথে চিকিৎসা শেষে আজ তিনি সুস্থ। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর ফরিঙ্গিবাজারের বাড়িটিতে যখন তিনি ফিরলেন পরিবারের সদস্যদের মাঝে বাঁধভাঙা আনন্দাশ্র“। আর শুধুই স্বাভাবিক হাসি ছড়িয়ে চারপাশ দেখছেন সেই করোনাজয়ী। খুশি আর পরিতৃপ্তি তার চেহারায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ জানান, নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের এই ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তা টেস্টে শনাক্ত হয় গত ১০ এপ্রিল। ডাক্তারের পরামর্শে তার আগের দিন চট্টগ্রাম ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর টানা সেখানে চলে তার চিকিৎসা। চিকিৎসায় তারা করোনা রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।
চট্টগ্রামে এ যাবৎ করোনায় আক্রান্ত ৪৩ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১০ জন। আর এই ব্যবসায়ী সেই দশ জনেরই একজন সৌভাগ্যবান। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী জানান, পরপর দুটি করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে রোগীকে সুস্থ হিসেবে বিবেচনা করছেন তাঁরা।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা রোগী মারা গেছেন ৫ জন। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার আগেই মারা যান তিন জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের কারও শরীরে করোনা পজিটিভ হয়নি।

চট্টগ্রাম ফিরিঙ্গিবাজারের করোনাজয়ী ব্যবসায়ী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বললেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার খবরটি শুনে প্রথমে বোগাস বলেই মনে হয়েছে। মনে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি কাজ করেনি। ডাক্তাররা তখন বলেন, হাসপাতালে থাকতে হবে। এখানেই আপনার চিকিৎসা চলবে। আমিও তাদের বললাম, হাাঁ, থাকতে হলে তো থাকব। তখন তারা সাহস দিলেন।

ব্যবসায়ী আরও জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছিলেন। এই ধরনের রোগীদের করোনায় আক্রান্ত এবং অসুস্খ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

কীভাবে আক্রান্ত হলেন? এর কুলকিনারা করতে পারছেন না ওই ব্যবসায়ী। কেননা গত দুই বছরের মধ্যে দেশের বাইরে যাননি তিনি। ভাই ও ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। তবে তারাও এরমধ্যে দেশে আসেননি। তাই সামাজিক সংক্রমণের মাধ্যমে তিনি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
হাসপাতালে ভর্তির এক সপ্তাহ আগে থেকে তার শরীরে জ্বর আসে। দৈনিক জ্বর ৯৯ থেকে ১০২ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছিল। এ অবস্থায় একটি বেসরকারি ল্যাবে গিয়ে রক্ত ও প্রশ্রাবের নমুনা পরীক্ষা করান। তবে তাতেও সমস্যা কিছু মিলেনি।

জ্বর যাচ্ছে না দেখেই একজন চিকিৎসকের কাছে যান। প্রথমে তিনি অবশ্য দেখতে চাননি। পরে আরেকজনের রেফারেন্স দিলে দেখতে রাজি হন। তিনি তখনই সরাসরি ফৌজদারহাটের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে রোগী এরজন্য তেমন আগ্রহী ছিলেন না। কারণ করোনার যেসব উপসর্গ- যেমন কাশি, হাঁচি, শরীর ব্যথা এসব কিছুই ছিল না। তবুও চিকিৎসকের কথায় সায় দিয়ে ফৌজদারহাট হাসপাতালে চলে যান।

হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে ইনজেকশন দেয়া হয়। এরপর নমুনা সংগ্রহও করা হয়। নমুনার ফলের জন্য হাসপাতালে অপেক্ষা করেন। ইনজেকশন দেয়ার পর ওইদিন আর জ্বর আসেনি। আর পরদিন সন্ধ্যায়ই চিকিৎসক করোনার ফল পজিটিভ আসার বিষয়টি তাকে জানান।
হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যায় সন্তুষ্ট বলে তিনি জানান। করোনাজয়ী রোগী বললেন, করোনার কথা শুনে সবাই পালায়। আর ডাক্তার-নার্সগণ রোগীর পাশেই থেকে যান। তাদের সম্মান প্রাপ্য।

তিনি সবার উদ্দেশে বলতে চান, মানুষ মনে করেছে করোনা মানে মৃত্যু। করোনা মানে ভয়। করোনা থেকে বাঁচতে হলে নিজ নিজ বাড়িঘরে থাকতে হবে অবশ্যই। সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। করোনার উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথমেই ঘরে থাকতে হবে। অবস্থার অবনতি হলেই হাসপাতালে চলে যেতে হবে।
আরও বেশি বেশি হারে করোনা টেস্ট হওয়াটা প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন