বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনপ্রতিনিধিরা কোয়ারেন্টিনে!

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

জনপ্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধি হবার দৌড়ে যারা সর্বদা ব্যস্ত ছিলেন এবং জনগণের বিপদ-আপদে পাশে থাকার ওয়াদা করেছিলেন সেসব নেতাদের বেশির ভাগকেই কাছে পাচ্ছে না জনগণ। করোনার সঙ্কট চলাকালে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিকে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও দেখেননি। কোয়ারেন্টিনের নামে নিজ নিজ এলাকার জনগণ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তারা।

করোনাভাইরাসের সঙ্কট মোকাবেলায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। তবে মাঠ পর্যায় থেকে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে যতটুকু সক্রিয় ভূমিকা পালনের দরকার ছিল তা পালন করছেন না জনপ্রতিনিধিরা। তাই জনপ্রতিনিধিদের স্থানে সরকারি আমলাদের উপর নির্ভর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে চার হাজারের বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। একটি আসনে সর্বোচ্চ পঞ্চাশটি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে ৫ থেকে ১০জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর বাইরেও এলাকায় অনেকেই জনপ্রতিনিধি হবার কথা জানান দিয়ে ব্যানার পোস্টার করেছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সঙ্কট মোকাবেলায় এই নেতাদের বেশির ভাগকেই পাশে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

এর মধ্যে অনেক জনপ্রতিনিধি সাধারণ অসহায়দের সাহায্য করার পরিবর্তে সরকারি ত্রাণের চাল, তেল চুরি করেছেন। তবে আশার দিক হলো, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের অনেক নেতা ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন, গরীবদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করছেন। এছাড়া কৃষকদের পাশে থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধান কাটার উদ্যোগ রীতিমতো প্রশংসনীয় হয়েছে।

কিন্তু জেলাগুলোতে জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতার কারণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে রাজনীতিকদের অংশগ্রহণ প্রায় নেই বললেই চলে। কাজ করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা (ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার)। তারা হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও অসহায়-কর্মহীন মানুষদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিটি জেলায় একজন সচিবকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।

এই নির্দেশনা মেনেই দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ জেলায় অবস্থান করছেন। কেউ কেউ ঢাকায় বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলাগুলোর প্রশাসক, পুলিশ ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করছেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন দায়িত্ব পালনের।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, জনপ্রতিনিধিরা রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তা প্রমাণিত হয়েছে। আর যারা জনপ্রতিনিধি হতে চেয়ে সারাবছর প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের দৌড়ও জনগণ বুঝতে পেরেছে। কারা জনগণের পাশে থাকবে আর কারা নেই তা আওয়ামী লীগের নেতারাও প্রমাণ পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ডের মতে, ‘দলের নেতাদের জনবিচ্ছিন্নতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় নেতারাও জনবিচ্ছিন্ন এমনটা লক্ষ্য করা গেছে। আগামী দিনে দলের নেতৃত্ব বাছাই করতে এই করোনা সঙ্কট সহায়তা করবে।’ সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা যিনি সংসদ সদস্যও তার বিরুদ্ধে এলাকায় মিছিল হয়েছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্লে-কার্ডও বানানো হয়েছে। ঢাকার দুই মেয়রের কর্মকান্ড নিয়েও সন্তুষ্ট নয় নগরবাসী।

তবে এই সঙ্কটের মাঝে কোনো কিছু চিন্তা না করেই ব্যক্তি উদ্যোগে মাঠে কাজ করছেন অনেক নেতাই। করোনায় আক্রান্ত হবারও ভয় করছেন না। ৭৬ বছর বয়সী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি প্রতিদিনই অসহায় নিম্নবিত্ত মানুষদের সহায়তায় রাস্তায় রাস্তায় কাজ করছেন। ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করছেন। সেচছাসেবকলীগ, যুবলীগও কাজ করছে। দেশের বাইরে কুয়েতে আটকে পড়া লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল নিয়মিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। কিন্তু অনেক এমপি, মন্ত্রীকেও এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বর্তমানে সামাজিক দূরত্বের দিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। আমরা ঘরে বসে, সামাজিক দূরত্ব ঠিক রেখেই কাজ করছি। আমাদের যখন প্রয়োজন হবে তখন মাঠে নেমেও কাজ করব। তেমন সব ধরনের প্রস্তুতিও আমাদের আছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরও নির্দেশনা দেয়া আছে, আমরা মাঠে নামলে তারাও নেমে পড়বে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের বিত্তবান নেতাকর্মী ও সাধারণ ধনী মানুষদের অসহায়দের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
MD Rashadul Hasan ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বিপদের দিনে টাকাওয়ালাদের বেশিরভাগই পাশে নেই। নামিদামি এনজিও, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক ও ট্রাস্ট, মোবাইল কোম্পানি এবং ব্যাংকিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সিংহভাগই দেশবাসীর অসহায় দিনগুলোতে কোনো মানবিক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেনি।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
অনেক বিত্তশালী ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও এখনো পর্যন্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
দেশের মানুষের দুর্দিনে পাশে নেই অনেক জনপ্রতিনিধি। যার মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এমনকি অনেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই মাঠে অনুপস্থিত।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
জনপ্রতিনিধিদের এখন সবচেয়ে আরাম-আয়েশের জীবন কাটছে। বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে ওদের ভালোই মাস্তি চলছে। যত কষ্ট সাধারণ মানুষের।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
সব স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। আপাতত জনগণের খোঁজ নেওয়ার মতো সময় নেই।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
ওদের এখন ‘নিজে বাঁচলে বাপ-দাদার নাম’ এই অবস্থা।
Total Reply(0)
শওকত আকবর ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৫১ এএম says : 0
এই দুর্দিনে যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন তারা এক অজানা করোনায় আক্রান্ত হয়ে অজানা কোয়ারেন্টাইনে আছেন।বাঘা বাঘা নেতা জনপ্রতিনিধিরা যে কোথায় তা ও বলা মসকিল।অবস্থার উন্নতি হলে এরা ধরাচুড়া পড়ে জনসমখ্খে উপস্থিত হবে....।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন