শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সোনালী ব্যাংকের ২২টি নিরীক্ষা আপত্তি, ক্ষতি ৬৫৬ কোটি

প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অনিয়মের কারণে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৬৫৬ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অডিট অধিদপ্তরের ২২টি অনিষ্পন্ন নিরীক্ষা আপত্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে গতকাল মঙ্গলবার এসব নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি দ্রুত এসব নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি এবং দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে ঋণ পুনঃ তফসিল করায় খুলনার দৌলতপুর শাখা সোনালী ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ৬১ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ঋণের গ্রাহক ইস্টার্ন ট্রেডার্সের আসল ঋণ ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ঋণের সুদের পরিমাণ ২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঋণ হিসাবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং গ্রাহকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দিয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদীয় কমিটি এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অপসারণের সুপারিশ করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পুনরায় ঋণ গ্রহণ না করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্যান্য ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করার সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ব্যাংকে দায়বদ্ধ মালামাল ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিক্রি এবং ঋণ হিসাবে জমা না করায় খুলনার দৌলতপুরের কলেজ রোড শাখার ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি ১২ লাখ ৭৪৬ টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান আকবর আলী অ্যান্ড সন্স ও মিতালি ট্রেডার্স।
ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ মালামাল ব্যাংকের অগোচরে বিক্রি করায় এবং অনাদায়ী পিএসসি ঋণ আদায় না করে ঋণ পুনঃ তফসিল করায় ঢাকার বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখার ১১ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান অ্যাজাক্স জুট মিলস। এপেক্স উইভিং এন্ড ফিনিশিং মিলসের মালামাল রপ্তানির মাধ্যমে সমন্বয়ের শর্ত আরোপ না করে মেয়াদি ঋণে পরিণত করা এবং ঘাটতি মালের মূল্য আদায় না করে ঋণ পুনঃ তফসিল করায় ক্ষতির পরিমাণ ৭০ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে এইচ এস ফ্যাশন লিমিটেড ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং মালামাল রপ্তানি না করে ঋণের টাকা অন্য খাতে বিনিয়োগ করায় ব্যাংকের ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রপ্তানির সামর্থ্য যাচাই না করে নাসের গার্মেন্টস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিপুল পরিমাণ ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং ঋণের টাকা যথাযথভাবে আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুনঃ তফসিল করার পরও কিস্তির টাকা নিয়মিত আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ১৪৩ কোটি ৪৫ টাকার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নাম মুন্নু ফেব্রিকস। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা না নিয়ে জালালাবাদ ফার্মাসিউটিক্যালসের ঋণ দফায় দফায় পুনঃ তফসিল করায় ব্যাংকের ৩৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জাস গার্মেন্টস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বিলের দায় এবং ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে ঋণ পুনঃ তফসিল করায় রমনা করপোরেট শাখার ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহিলা শাখার ব্যবস্থাপক ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে জিহাদ গার্মেন্টসের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন করায় ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ শাখায় বন্ধক থাকা সম্পত্তি ব্যাংকের অগোচরে বিক্রি করে ঋণ হিসাবে জমা না করায় ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ফেইম লেদার। কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুস শহীদ, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, পঞ্চানন বিশ্বাস, আফসারুল আমীন, রেবেকা মমিন, মঈন উদ্দীন খান বাদল, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ও রুস্তম আলী ফরাজী উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন