শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সহজ উপায়

মুরগির মাংস ও ডিমে করোনা ছড়ায়-এটাই গুজব

মো: নাজমুল হাসান | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ২:৩৯ পিএম

করোনার এই দূর্যোগকালীন সময়ে আমাদের দেশের পোল্ট্রি শিল্প আজ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন অপরদিকে তাকে হানা দিচ্ছে গুজব নামে আর একটি মারাত্বক ব্যাধি। তাই বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এই সম্পর্কে আজ কিছু বলতে মনস্থির করেছি। আশাকরি এই নিবন্ধ পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।

মুরগীর মাংস ও ডিম থেকে কোনভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। অথচ করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের বাজারে। ক্রেতাদের আতঙ্কের পাশাপাশি পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ধ্বসে পড়েছে। মুরগীর মাংস ও ডিমের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে এমন গুজবে মাংস ও ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে অনেকেই। আতঙ্ক এতটাই প্রবল যে, গত এক মাসে মুরগীর বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছে এই গুজবের কারণে মুরগী মাংসের দাম হু হু করে কমছে। মুরগী বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) দাবি করেছে এ মাসের শেষ নাগাদ ক্ষতির পরিমান ৩৫৫১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

করোনাভাইরাসের এই সঙ্কট মুহূর্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি করে মুরগীর মাংস ও ডিম খাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা প্রতিনিয়ত তাদের মতামত দিচ্ছেন। প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রতিনিয়ত ব্রয়লার মুরগীর মাংস ভালভাবে রান্না করে খাওয়ার ব্যাপারে খবর প্রচার করে যাচ্ছে। অথচ, আমাদের দেশে গুজব এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, এই গুজবের কারণে পোল্ট্রি শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই আতঙ্কের বাস্তব কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করছে বাংলাদেশ প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর। মুরগীর মাংস ও ডিম নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান করেছে বাংলাদেশ প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আফ্রিকা চেক, দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া সরাসরি এই গুজবটিকে নাকচ করেছে।

ব্রয়লার মুরগী এবং ডিমের মাধ্যমে করোনা ছড়ায় সারাবিশ্বে তার একটিও স্পষ্ট প্রমাণ নেই। করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে মুরগীর মাংস ও ডিম হতে পারে করোনা মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার। ডিম ও মাংস হলো মানুষের জন্য উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন আমিষ জাতীয় খাদ্য। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের মুরগীর ডিম এবং মাংসের গুনাবলী সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।

United States Department Of Agriculture (USDA) এর তথ্যমতে প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগীতে প্রাপ্ত উপাদান ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা ৬৫ গ্রাম, প্রোটিন ২৮ গ্রাম, শক্তি ২১৫ ক্যালরী, ফ্যাট ১৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মি. গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২০ মি. গ্রাম, ফসফরাস ১৪৭ মি. গ্রাম, পটাসিয়াম ১৮৯ মি. গ্রাম, সোডিয়াম ৭০ মি. গ্রাম, জিংক,ভিটামিন বি-১,৬,১২, নিয়াসিন এবং অ্যামিনো এসিড বিদ্যমান থাকে।

ব্রয়লার মুরগীর মাংসে প্রচুর পরিমান প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন শরীরের হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই মাংস কম চর্বিযুক্ত হওয়ায় তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্রয়লার মুরগীর মাংসে ট্রাইফটোফ্যান নামে অ্যামিকো এসিড থাকে। বিষন্নবোধ করলে এক বাটি চিকেন স্যুপ এনে দিতে পারে স্বস্তি। যাহা আমাদের মস্তিষ্কে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে বিষন্নতা দূর করে। আমাদের শরীরের হেমোকিস্টাইন নামক একটি অ্যামিকো এসিড থাকে। হেমোকিস্টাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রেখে হার্টের বিভিন্ন ধরনের কার্ডিও ভাস্কুলার রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে ব্রয়লার মুরগী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মাংস ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় কিডনি, লিভার, স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। শরীরে হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে ভিটামিন বি-৬ এর ভূমিকা অতুলনীয়। তাছাড়া এই মাংসে নিয়াসিন নামক একটি ভিটামিন থাকে যাহা শরীরকে ক্যান্সারমুক্ত রাখে।

সকালের নাস্তায় ডিম না থাকলে যেন নাস্তাটাই অসম্পুর্ণ থেকে যায়। সারাদিন শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হলে সকালের নাস্তায় ডিমের কোন বিকল্প নেই। প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায় তার মধ্যে ডিম অন্যতম। অথচ ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকের পরিষ্কার ধারণা নেই। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, অ্যামিনো এসিড,আয়রন, ভিটামিন এ-ডি-ই-বি ১২,কলিন, লুটেইন, যিয়াস্যানথিন, কোলেস্টেরল এবং আরো কিছু উপাদান। পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চ মানের।

ডিমের প্রোটিন মাংসপেশী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে। ডিমে বিদ্যমান ভিটামিন ডি রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হাড় ও দাত শক্ত রাখে। ভিটামিন-এ রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমায় এবং ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডিমের কলিন গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে। আমেরিকা হার্ট সংস্থার তথ্য মতে প্রতিদিন একজন মানুষের ৩০০ মি. গ্রাম কোলেস্টেরল প্রয়োজন। যা একটি ডিমে ১৮৬ মি. গ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে। তাছাড়া ডিমে লুটেইন এবং যিয়াস্যানথিন দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই এক কথায় ডিমকে সুপার ফুড বলা হয়।

কিন্তু এই গুজবের কারণে অনেকে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো এড়িয়ে চলছে। অথচ, এত কম দামে এর চেয়ে ভাল পুষ্টিকর খাবার আছে বলে সন্দিহান। তাই আসুন এইসব অহেতুক গুজবগুলি না ছড়িয়ে বেশি করে ডিম এবং ব্রয়লার মুরগীর মাংস খাই । কম দামে উচ্চ আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।

লেখক : ব্যবস্থাপক (আফিল এগ্রো লিমিটেড) ও সাবেক শিক্ষার্থী পশুপালন অনুষদ (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Md. Mohshin Miajee ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৩৫ পিএম says : 0
সুন্দর ও চমৎকার তথ্যবহুল লেখার জন্য লেখককে ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Moshtaq Ahmad Bhuiyan ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ৪:২৭ পিএম says : 0
গুজব এর কাজই ভালোকে মন্দ আর মন্দকে ভালো বানানো, দারুণ ভাবে সবার জন্য উপকারী ও যথোপযুক্ত লিখেছো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নাজমুল।
Total Reply(0)
মোঃ মমিনুল ইসলাম ১৮ এপ্রিল, ২০২২, ৪:১১ এএম says : 0
ফাওমি মিশরীয় মুরগির বিষয়ে কিছু উপদেশ দিলে উপকৃত হইতাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন