আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতবা (সা.)-কে খেতাব করে ইরশাদ করেছেন : “আপনি কি দেখেননি, আপনার পরওয়ারদিগার আদসম্প্রদায়ের প্রতি কী আচরণ করেছেন? সুউচ্চ প্রাসাদ মালিক ইরাম সম্প্রদায়ের প্রতি, যার তুল্য শক্ত প্রাসাদ কোনো দেশেই তৈরি হয়নি এবং সামুদ সম্প্রদায়ের প্রতি, যারা পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল এবং শিবিরাধিপতি ফেরাউনের প্রতি, যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল; সেখানে অশান্তি বাড়িয়ে দিয়েছিল; অতঃপর আপনার প্রতিপালক তাদের ওপর শাস্তির কসাঘাত চালনা করেছিলেন, নিশ্চিয়ই আপনার প্রতিপালক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা ফাজর : আয়াত ০৬-১৫)।
উল্লিখিত আয়াতসমূহে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, যে সকল জাতি বা সম্প্রদায় এই পৃথিবীতে অশান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং সীমালঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল, পরম কৌঁসুলী ও বিজ্ঞানময় আল্লাহপাক তাদের ওপর শাস্তির দন্ডারোপ করে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় তাদের কাহিনী যত্ম সহকারে সংরক্ষিত আছে। ঠিক একই রকমে বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তির অধিকারীগণ সাধের পৃথিবীতে অশান্তির জোয়ার বইয়ে রেখেছেন এবং নিজেরা শ্রেষ্ঠ সীমালঙ্ঘনকারী রূপে আত্ম প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, ন্যায় ও কল্যাণের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে চলেছেন। পরম কৌঁসুলী ও বিজ্ঞানময় আল্লাহপাক যে, তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন এ কথাটি বেমালুম ভুলে গেছেন। বিস্মিত হয়েছেন মহান স্রষ্টার অমোঘ নিয়ম নীতির কথা। তার শাসনতান্ত্রিক প্রয়োগ বিধির কথা। তাই আজ বিশ্বজুড়ে অজানা, অচেনা, অদৃশ্য করোনাভাইরাস আল্লাহপাকের শাস্তি দন্ড হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে। দন্ডাঘাত কতদিন চলবে, তা কেইবা জানে?
তবে এই দন্ড হতে মুক্তি লাভের একটি মাত্র পথ খোলা আছে। আর সেটি হলো নিঃশর্তভাবে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহপাকের কাছে আত্মসমর্পণ করা ও এর ওপর সুদৃঢ় ও অবিচল থাকা। কোনো অবস্থাতেই আত্মসমর্পণের রজ্জু হতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন না করা। এই শ্রেণীর আত্মসমর্পণকারীদেরকে আল্লাহপাক ফিরিশতাদের মাধ্যমে সাহায্য করেন, মুক্তি ও নিষ্কৃতির আশ্বাস দান করেন। কোরআনুল কারিমে এই বিশেষত্বটি অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাণ স্পর্শী ভাষা ও ব্যঞ্জন সহকারে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : “নিশ্চয়ই যারা বলে আল্লাহ আমাদের পরওয়ারদিগার এবং তাতে অবিচল থাকে তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং বলে তোমরা ভীত হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি জান্নাতের জন্য আনন্দিত হও। আমরা পার্থিব জীবনেও তোমাদের মিত্র ছিলাম এবং পরকালেও (মিত্র থাকব)। সেথায় তোমাদের আত্মা যা কামনা করবে তাই পাবে এবং তোমরা যে সকল বস্তুর দাবি জনাবে তাই লাভ করবে, ইহা হচ্ছে ক্ষমাশীল করুণাময়ের আতিথেয়তা।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ বা সাফ্ফাত : আয়াত ৩০-৩২)।
এই পৃথিবীর বুকে এমন কোনো মানুষ নেই, যারা জানে না যে, আল্লাহ আছেন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা (সা.) তাঁর রাসূল এবং কোরআনুল কারীম সর্বশেষ আসমানি কিতাব। সুতরাং যে বা যারা জেনে বুঝে আল্লাহকে অস্বীকার করে, নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ ও জীবনাদর্শের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে এবং কোরআনুম মাজিদের বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করে না, তারা যদি মনে করে যে, এমনিতেই ছাড়া পেয়ে যাবে এবং তাদের জীবন তরুর পাতা কখনোও ঝরে পড়বে না, এমনটি তো আল্লাহপাক হতে দেবেন না। এতদসম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পূর্বাহ্নেই ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) মানুষ কি মনে করে যে, কখনোও তার হাড়-মজ্জা একত্র করা হবে না? (সূরা কিয়ামাহ : আয়াত-২)। (খ) মানুষ কি মনে করে যে, এমনিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে? (সূরা কিয়ামাহ : আয়াত-৩৬)। (গ) মানুষ কি মনে করে যে, তার ওপর কোনো শক্তিশালী নেই? (সূরা বালাদ : আয়াত-৫)। (ঘ) মানুষ কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখে না? (সূরা বালাদ : আয়াত-৯)। (ঙ) মানুষ কি মনে করে যে, তার শক্তি সম্পদ তাকে চিরস্থায়িত্ব দান করবে? (সূরা হুমাযাহ : আয়াত-৩)।
সূতরাং এত সব দম্ভ, অহমিকা, বাহাদুরী ও অবিমৃষ্যকারিতার জবাব পরম শক্তিশালী অবিনশ্বর বিজ্ঞানময় আল্লাহপাক অত্যন্ত সহজ সরলভাবে প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : জেনে রেখ! আল্লাহপাকই সর্বময় হুকুম দাতা এবং তিনি অতিসত্বর হিসাব গ্রহণকারী’। (সূরা আনয়াম: আয়াত-৬২)। তাই আজ বিশ্বজোড়া নির্যাতিত, নিপীড়িত, রোগাক্রান্ত, দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম মিল্লাতের প্রতি একান্ত আহ্বান এই যে, মাহে রমজানের এই পবিত্র পরিবেশে কায়মনে আল্লাহর সকাশে আত্মসমর্পণ করুন; সর্বশেষ নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর জীবনাদর্শকে অবলম্বন করুন এবং আল কোরআনের বিধি-নিষেধকে সর্বোত্তভাবে পালন করুন। তবেই অতিসত্বর মুক্তি ও নিষ্কৃতির প্রভাব সূর্যের কিরণ সমুদ্ভাসিত হওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় নয়। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ’!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন