বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ফের রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ল নিস হামলা : শঙ্কায় ফরাসি মুসলিমরা

প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ফ্রান্সের জাতীয় সংসদ আরো ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহে নিস শহরে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটির সংসদ এ সিদ্ধান্ত নিল। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ফরারি সংসদ জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াল। ফ্রান্সের জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যরা গত মঙ্গলবার কয়েক ঘণ্টা বিতর্ক শেষে শেষ বেলায় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ভোট দেন। গত নভেম্বর মাসে রাজধানী প্যারিসের ছয়টি জায়গায় একযোগে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১৩০ জন নিহত ও ৩৫০ জন আহত হওয়ার পর ফ্রান্স সরকার দেশটিতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। উগ্র গোষ্ঠী আইএস এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল। নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর ফলে ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা শেষ হবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। জরুরি অবস্থা বহাল থাকার কারণে ফরাসি সরকার আদালতের নির্দেশ ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তিকে গৃহবন্দি করে রাখতে পারে। এছাড়া, ওয়ারেন্ট বাদেই যেকোনো ব্যক্তিকে তল্লাশি করা যায়।

এদিকে, বাস্তিল দিবসে ফ্রান্সের নিস শহরে ট্রাক নিয়ে হামলার ঘটনায় তাদের অন্যায়ভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন নিসের দরিদ্র এলাকা আরিয়ানের মুসলিম বাসিন্দারা। এ ঘটনার জেরে সামাজিক বিভেদ ও বৈষম্যের শিকার হবেন বলে অনুভব করছেন তারা। ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে নিজেদের একজন সৈনিক হিসেবে তিউনিসিয়ায় জন্ম নেওয়া হামলাকারী মোহামেদ ল্যউইজ বুলেলের প্রসংশা করেছে। গেল বৃহস্পতিবার বাস্তিল দিবসের উৎসবে আতশবাজির প্রদর্শনী উপভোগের পর হাজারো মানুষ যখন নিসের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বিখ্যাত প্রমেনেদ দেজাঙ্গলে চত্বরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার অপেক্ষায়, এমন সময় বুলেল দ্রুত গতির ২৫ টনি একটি ট্রাক জনতার ওপর উঠিয়ে দিয়ে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত চালিয়ে যান। এতে ৮৪ জন নিহত হন। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে তিনি পিস্তল দিয়ে পুলিশকে লক্ষ করে গুলিও বর্ষণ করেছিলেন। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালাস জানিয়েছেন, ৩১ বছর বয়সী হামলাকারী খুব দ্রুত উগ্রবাদী হয়ে উঠেছিল। ফ্রান্সের পাবলিক প্রসিকিউটর ফ্রাঁসোয়া মলিয়েঁ সোমবার জানিয়েছেন, আইএসের সঙ্গে বুলেলের সরাসরি সম্পর্ক থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে ইদানীং তারমধ্যে ইসলামের কট্টরপন্থি ধারার দিকে ঝোঁক লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বুলেল যেখানে বসবাস করতেন, সেই আবতোরিস আবাসিক এলাকা থেকে আরিয়ান এলাকাটি কয়েক কিলোমিটার দূরে। এখানে অনেক মুসলমানের বসবাস। কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলো দুর্বল ব্যক্তিদের বেছে নেয় জানিয়ে স্থানীয় আল ফোরকানি মসজিদের ইমাম এর জন্য হত্যাকারীর ধর্মকে দায়ী করার বিষয়ে সাবধান থাকতে বলেন। তিনি বলেন, দুর্বলরা ব্যবহৃত হল বলে তাদের ধর্মের উপর চড়াও হব, এটা উচিত হবে না। এর সম্পূর্ণ বিপরীতটাই করা দরকার। আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে এই দেশকে রক্ষা করতে হবে। ধর্ম যাই হোক, অপরাধ অপরাধই, বলেন তিনি। স্বজন ও বন্ধুরা জানিয়েছেন, খুব অল্পদিন আগেও বুলেল প্রচুর মদ্যপান করতেন, গাঁজা খেতেন এবং নারী আসক্ত ছিলেন। এসব কিছুই ধার্মিক মুসলমানের জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খায় না।
দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের অন্যতম মুসলিম নেতা এলাবেদ লোফতি বলেন, এই ব্যক্তি রোজা রাখতো না, ভাল মুসলিম বলার মতো ন্যূনতম যোগ্যতাও তার (বুলেল) নেই। ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সেই সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস। এই দেশটির আরিয়ান ও অন্যান্য এলাকার মুসলিমরা ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া মরোক্কান বংশোদ্ভূত ইউনিস বলেন, ফ্রান্সে, ইউরোপে কিছু হলেই পুরো মুসলিম সমাজকে দায়ী করা হয়। এক সময় এই বৈষম্য ছিল জাতিগত, এখন এটি ধর্মগত বৈষম্যে পরিণত হয়েছে, বলেন ইউনিস। বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন