বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চলবে পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন

এক মাসে রেলের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২০, ১২:০৬ এএম

আজ থেকে চট্টগ্রাম জামালপুর ও যশোর রুটে কৃষিপণ্য পরিবহনের সিদ্ধান্ত

করোনা সঙ্কটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের এক মাসে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২০০ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ে প্রতিদিন সারা দেশে টিকেট বিক্রি করে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা আয় করে। এ হিসাবে গত এক মাস যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় ১২০ থেকে ১৫০ কোটি লোকসান হয়েছে। এর সাথে পণ্য পরিবহন যোগ করলে তা দাঁড়ায় কমপক্ষে ২০০ কোটি।

তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য কৃষিপণ্য পরিবহনে ‘পার্সেল এক্সপ্রেস’ নামে বিশেষ লাগেজভ্যান ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আজ শুক্রবার থেকে চালু হচ্ছে এ পার্সেল এক্সপ্রেস নামের লাগেজ ভ্যান ট্রেন। যা দিয়ে ঢাকায় আনা হবে কৃষিপণ্য।
সামনে ঈদ। রেলের যাত্রী পরিবহনের সবচেয়ে বড় মৌসুম। ঈদ মৌসুমে রেল যাত্রী পরিবহনে সবচেয়ে বেশী আয় করে থাকে। এবার আর তা হচ্ছে না। ঈদের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও আগের মতো বিপুল সংখ্যক যাত্রী আর রেলওয়ে পরিবহন করতে পারবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ মের পর থেকে সীমিত আকারে বাস ও ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যেই অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে বা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। সেক্ষেত্রে ৫ মের পর ট্রেন চলাচল শুরু হলেও আগের মতো যাত্রী পাওয়া যাবে না। এতে করে বিপুল অঙ্কের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। রেলওয়ের পরিচালন শাখার কর্মকর্তারা জানান, একমাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী, মালামাল, পার্সেলসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয়বঞ্চিত হয়েছে রেলওয়ে। বছর শেষে এটি রেলওয়ের মোট আয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা রেলের লোকসানের পরিমাণকে আরও বাড়িবে দেবে।

রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ট্রেন পরিচালনা বাবদ আয় হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে যাত্রী পরিবহন করে আয় হয়েছিল ৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মালামাল ও পার্সেল পরিবহন করে আয় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বাকি প্রায় ৪২ কোটি টাকা আয় হয়েছিল বিবিধ খাত থেকে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি অর্থবছর ৮ কোটি যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করেছিল রেলওয়ে। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩২ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যাত্রী, মালামালসহ রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর যাত্রী পরিবহন বাবদ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। একইভাবে মালামাল পরিবহনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থবছরে একাধিক নতুন ট্রেন চালুও নতুন কোচ সংযোজনের কারণে রাজস্ব আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির আশায় ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। কিন্ত করোনা পরিস্থিতিতে সবই পাল্টে গেছে।

এখন গত ২৬ মার্চ থেকে বিগত এক মাসেরও বেশি সময়ে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণের হিসাব নিকাশ চলছে। এমতবস্থায় আজ শুক্রবার থেকে চালু হচ্ছে বিশেষ পার্সেল ট্রেন। সবজি ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার এক জরুরি সভায় এই ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গণপরিবহন যতদিন বন্ধ থাকবে যাত্রীবাহী ট্রেন ততদিন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু রুটের সবজি ও কৃষিজাত পণ্য যাতে ঢাকায় আসতে পারে সেজন্য এই ট্রেনগুলো চলবে। আগে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে ভ্যান যুক্ত থাকত। এখন যেহেতু যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ সে কারণে শুধু লাগেজভ্যান যুক্ত থাকবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-জামালপুর-ঢাকা ও যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে লাগেজ ট্রেন বা বিশেষ পার্সেল ট্রেন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সপ্তাহে সাতদিন ও যশোর রুটে সপ্তাহে তিনদিন লাগেজ ট্রেন চলবে। চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছবে বিকেল ৪টায়, আবার ঢাকা থেকে রাত ১০টায় ছেড়ে পথে গুরুত্বপূর্ণ সব স্টেশনে বিরতি দিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে পৌঁছাবে এ পার্সেল ট্রেন।

অন্যদিকে, ঢাকা-জামালপুর-ঢাকা রুটের পার্সেল ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে বিকেল ৪টায় দেওয়ানগঞ্জ পৌঁছবে। আবার দেওয়ানগঞ্জ থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে গুরুত্বপূর্ণ সব স্টেশনে বিরতি দিয়ে ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ৪টায়। তবে যশোর-ঢাকা-যশোর রুটের ট্রেনের সময়সূচি এখনও জানা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান বলেন, করোনা শুধু রেল নয় সব সেক্টরকেই লোকসানে ফেলেছে। যেহেতু যাত্রী পরিবহন করতে পারছি না, আমরা পণ্যবাহী ওয়াগন চালানোর প্রতি মনযোগী হয়েছি বেশী। আমরা অতিরিক্ত তেল, খাদ্য ও কন্টেইনার পরিবহন করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন তেল, খাদ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছি যাতে আমরা পণ্য পরিবহন থেকে আয় বাড়াতে পারি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন