শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘করোনা’ জ্বালাতে পারে আলো

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার’ শিল্পী জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ১৯৭৪ সালে গেয়েছিলেন। গানটি রেকর্ডের সাড়ে চার দশক পর এখন পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রতিটি সকল শুরু হচ্ছে ‘রাতের চেয়েও অন্ধকার’ করোনাভাইরাস আতঙ্ক দিয়ে।

প্রশ্ন হচ্ছে করোনা মানবজাতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে ঠিকই; কিন্তু কিছুই দিচ্ছে না! ডোনাল্ড ট্রাম্প আর একজন নৌকার মাঝিকে কি করোনা এক কাতারে নিয়ে যায়নি? করোনা ঠেকাতে মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন ও সংক্রমন পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছে; সেই উদ্ভাবনে কি বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সামিল হয়নি?

গণস্বাস্থ্য টেস্টিং কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট বন্ট’ উদ্ভাবন করেছে। ওয়ালটন কোম্পানি বিশ্বমানের পিবি ৫৬০ মডেলের স্পেসিফিকেশনে িব্লিউপিবি ৫৬০ ভেন্টিলেটার উদ্ভাবন করেছে। এটা কি জাতি হিসেবে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠার সুযোগ নয়?

‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন’ (ভারতচন্দ্র রায়)। সত্যিই প্রাণঘাতী করোনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। করোনা অন্ধকার যুগের মধ্যেই আমরা চেষ্টা করলেই খুঁজে পেতে পারি নতুন আলোর দিশা। বাংলাদেশের মানুষ পারে না এমন কাজ কি আছে?

আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। তলাবিহনী ঝুড়ি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছি। ক্ষুধা-দারিদ্র-পুষ্টিহীনতাকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের দরবারে মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হতে পেরেছি। মানুষ তার প্রয়োজনে এগুলো করেছেন।

রাজনৈতিক হানাহানি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যেই দেশের কামার-কুমার-তাঁতী-জেলে-ক্ষেতমজুর-কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা মিলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছি। বিশ্ব অর্থনীতিতে নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত দেশের তালিকায় উন্নীত হচ্ছি। প্রতিটি সেক্টরের মানুষ নিজ উদ্যোগেই দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পেলে আরো এগিয়ে যেত দেশ। করোনার অন্ধকার যুগে এখন সবকিছু বন্ধ। ঘরে বসে থেকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে সময় পার করছি। এই সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত।

স্প্যানিশ দার্শনিক ব্যালটাজার গার্সিয়ান বলেছেন, ‘যার হাতে কিছুই নেই, তার হাতেও সময় আছে। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় সম্পদ’। আবশ্যই করোনায় ঘরে বসে থাকা সময়কে আমরা জীবনের সম্পদে পরিণত করতে পারি। জাতি হিসেবে আমরা পারি না এমন কোনো কাজ নেই।

এক সময় আমরা গোশতের জন্য ভারতের গরুর ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। চায়ের ক্ষেত্রেও তাই। এখন আমাদের কৃষকরা নানান পন্থায় গরু প্রতিপালন করে দেশের গোশতের চাহিদা মেটাচ্ছেন। তেঁতুলিয়ায় ধানের জমিতে চা উৎপাদন করছেন। দুধ এবং আমিষের অভাবে লাখ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগতেন। এখন দুধ, ডিম, মাছ উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে।

আমাদের হ্যান্ডিক্র্যাফট, সতরঞ্জি সারাবিশ্বে সমাদৃত। এখনো কিছু কিছু পণ্যের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল; সে জন্য দায়ি রাজনৈতিক বিরোধ এবং আমলাতন্ত্র। গত বছর বিশ্ব বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। আমরা পেঁয়াজের বিকল্প চিভ আবিস্কার করেছি।

ওষুধ শিল্পে সমৃদ্ধ হচ্ছি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু বিদেশে যায় না; সাথে যায় ওষুধ, হস্তশিল্পসহ রকমারিপণ্য। মসলিম কাপড় তৈরি বন্ধ করতে ইংরেজরা শ্রমিকদের হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছিল বটে; মেধাকে ধ্বংস করতে পারেনি। আমাদের তৈরি জামদানি এখন সারাবিশ্বে সমাদৃত। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে করোনার অন্ধকার যুগের সময়কে কাজে লাগানো উচিত। যে যার অবস্থান থেকে সময়কে কাজে লাগানো যায়। ব্যস্ততার কারণে এতোদিন কর্মজীবী পিতামাতা সন্তানদের সময় দিতে পারেননি। এখন ঘরে বসে সন্তানকে কোয়ালিটি সময় দিতে পারেন।

দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর মোবাইল গেইমে আসক্ত। নিজে বই পড়ে সন্তানদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে মোবাইল গেইম থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করতে পারেন। শিল্প সাহিত্যে আমরা সমৃদ্ধ। কিন্তু ইদানিং কিছু পরমুখাপেক্ষী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী দেশজ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার বদলে কোলকাতার সাহিত্য চর্চার প্রতি বেশি আশক্ত।

রাজধানীর শাহবাগের মোড় আর আজিজ সুপার মার্কেটে সন্ধ্যার পর আড্ডা আর চারুকলার ভিতরে ছিঁলিম ফুঁকিয়ে নিজেদের মেধা-প্রতিভাকে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে এক ঝাক কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিসেবি। দেশের সন্তান হয়েও তারা গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে দূরে। করোনায় ছিঁলিম ফুঁকানো বন্ধ। কবি-সাহিত্যিকরা ঘরে ঘরে।

এ সময় নিজেরা ভাল ভাল বই পড়ে ক্ষুরধার লেখনির জন্য সমৃদ্ধ হতে পারেন। বড় পড়লে স্ট্রেস কমা ছাড়াও জ্ঞানের ভান্ডার বৃদ্ধি, শব্দভান্ডার বিস্তার, স্মৃতি উন্নয়ন, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার দক্ষতা বৃদ্ধি, চিন্তার উৎকর্ষতা বাড়বে। এতে শুদ্ধ করে, সুন্দর শব্দ চয়নে লিখার দক্ষতা তৈরি হবে। মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি নিজেও শব্দহীন নির্মল বিনোদন পাবেন। আবার দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে। সিনেমা-নাটকে কোলকাতা কেন্দ্রিকতা কমে যাবে।

আইরিশ লেখিকা মারিয়া এজগ্রোথ বলেছেন ‘আমরা যদি সময়ের যত্ম নিই, তবে সময় আমাদের জীবনের যত্ম নেবে’। যে জাতি ভাষার জন্য যুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে; সে জাতি করোনাভাইরাসের অন্ধকার যুগে হতোদ্যম হতে পারে না। ভয়াবহ এই করোনাভাইরাসে ঘরে বসে থাকা সময়গুলো কাজে লাগালে আগামী দিনের জীবনে জ্বালাতে পারে আলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
আবীর চৌধুরী ৪ মে, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
এই কথার উপর বিশ্বাস করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে আল্লাহর পক্ষে থেকে রহমত আশা করা যায়
Total Reply(0)
Md Shirajul Islam ৪ মে, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
আল্লাহ সারা বিশ্বের মানুষকে রক্ষা কর আল্লাহ
Total Reply(0)
Ala Uddin Khan ৪ মে, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
আমার,দৃষ্টিতে অবশ্যই করোনা আলো জ্বালছে
Total Reply(0)
Md. Sohel Rana ৪ মে, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
আমি মনে করি,করোনা ভাইরাস একটি আশীর্বাদ!!! করোনারভাইরাসকে ঘৃণা করবেন না এটা মানবতা ফিরিয়ে এনেছে মানুষকে তাদের স্রষ্টার কাছে এবং তাদের নৈতিকতায় ফিরিয়ে এনেছে এটি বার, নাইট ক্লাব, পতিতালয়, ক্যাসিনো বন্ধ করে দিয়েছে এটি সুদের হারকে কমিয়ে এনেছে পরিবারের সদস্যদের একসাথে নিয়ে এসেছে অশ্লীল আচরণ বন্ধ করেছে এটি মৃত এবং নিষিদ্ধ প্রাণী খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এখনও পর্যন্ত এর কারণে সামরিক ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যসেবাতে স্থানান্তরিত হয়েছে আরব দেশগলোতে শিশা নিষিদ্ধ করেছে করোনাভাইরাস মানুষকে দুআ করতে বাধ্য করছে এটি স্বৈরশাসক এবং তাদের ক্ষমতাকে তুচ্ছ করেছে মানুষ এখন উন্নতি এবং প্রযুক্তির চেয়ে আল্লাহ/ইশ্বরের কাছে উপাসনা করছে এটি কর্তৃপক্ষকে তার কারাগার এবং বন্দীদের দিকে নজর দিতে বাধ্য করছে এটি মানুষকে শিখিয়েছে কীভাবে হাঁচি এবং কাশি দিতে হয়, যেমনটি আমাদের নবী সাঃ ১৪০০ বছর আগে শিখিয়েছিলেন, করোনাভাইরাস এখন আমাদের ঘরে সময় কাটানো, সহজ জীবনযাপন করা, অহেতুক প্রতিযোগিতা না করতে শিখিয়েছে। একই সাথে আমাদের চেতনা জাগ্রত করার জন্য এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে শুকর জানাচ্ছি। যারা জ্ঞানী তাদের জন্য এতে একটি দুর্দান্ত মুল্যবান শিক্ষা রয়েছে।
Total Reply(0)
মোঃ আনোয়ার আলী ৪ মে, ২০২০, ৩:৪৮ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা বলে, ´´ আল্লাহ তায়ালা কাবো ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না সে তার ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হয় ´´।
Total Reply(0)
Abdur Rafi ৪ মে, ২০২০, ৭:৩৪ এএম says : 0
কৃষিকে যান্ত্রিক করন, সৌর বিদুতের ব্যবহার বিনা শূল্কে সৌর প্যানেল ভুর্তকি দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে দিতে হবে। যে সৌর পেনেল ভারত পাকিস্তানে ৭০০০ টাকা সেই পেনেলই বাংলাদেশে ২১০০০ টাকা এটা কেমন দেশ।
Total Reply(0)
Abdur Rafi ৪ মে, ২০২০, ৭:৩৪ এএম says : 0
কৃষিকে যান্ত্রিক করন, সৌর বিদুতের ব্যবহার বিনা শূল্কে সৌর প্যানেল ভুর্তকি দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে দিতে হবে। যে সৌর পেনেল ভারত পাকিস্তানে ৭০০০ টাকা সেই পেনেলই বাংলাদেশে ২১০০০ টাকা এটা কেমন দেশ।
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ৪ মে, ২০২০, ৭:৪৭ এএম says : 0
স্টালিন সরকারের লেখা বলতে গেলে নিশ্বাস বন্ধকরে একটানে পড়েফেলি এটা ঠিক। তবে পড়তে পড়তে একটু হোচটও খেতে হয় ভাববার জন্যে। অন্যান্য সংবাদ পড়তে পড়তেই ভেবে নেয়া যায় কি বলতে চাচ্ছেন আর ইনার লিখা পড়ার সময় বুঝেনেয়ার জন্যে পড়ায় হোচট খেতে হয়। যাইহোক লিখাটা খুবই সুন্দর, শিক্ষামূলক, ভাবুক ও তথ্যবহুল এক প্রতিবেদন। এই লিখাটা পড়ার পর সবাই একবার নিজেকে নিয়ে ভাববেন এটাই সত্য। আর যদি পড়ার জন্যে কেহ পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্য কিছুই পাবেন না এটাও সত্য। তখন শুধু করোনাকেই এই লিখার বিষয় বস্তু ভেবে পড়া শেষ। আমি সাংবাদিক স্টালিনকে তাঁর এই লিখাটার জন্যে আমাদের অর্জিত লাল সবুজের সুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আল্লাহ্‌ ওনাকে লিখার শক্তি দিয়েছেন বটে... আল্লাহ্‌ যেন ওনারমত করে আমাকে সহ আমরা যারা লিখার জগতে আছি আমাদের সবাইকে এই জ্ঞান দান করেন। আমিন
Total Reply(0)
শওকত আকবর ৪ মে, ২০২০, ৯:৩৯ এএম says : 0
অনেক পরে হলেও ষ্টালিন সরকারকে ধন্যবাদ।ইনকিলাব এর একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে লিখনির মাধ্যমে বেশ কয়েক জন লিখককে চিনি।মোবায়েদুর রহমান সাহেবের লেখা আমার মনে দোলা দেয়।সকল লিখকদের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন