একটি রহস্যজনক নতুন ভাইরাস বিশ্বজুড়ে তার প্রাণঘাতী পদযাত্রা শুরু করার ৪ মাস পর একটি প্রতিষেধকের অনুসন্ধান তীব্র আকার ধারণ করেছে। মরিয়া হয়ে প্রতিষেধক অনুসন্ধানে চিকিৎসা গবেষণাসহ জনস্বাস্থ্য, বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
ভূ-রাজনৈতিক বিরোধ, সুরক্ষা সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং কোটি কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জের মধ্যেই বিভিন্ন্ সরকার, সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারগুলো তাদের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে অগ্রগতির জন্য ক্রমাগতভাবে চাপ বাড়িয়ে চলছেন এবং ওষুধশিল্পে বড় ধরনের সম্ভাব্য লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে নির্মাতা এবং গবেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা অসম্ভব গতিতে এগিয়ে চলছেন। তবে, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমাধান পাওয়ার পরেও প্রতিষেধক উৎপাদন ও বিতরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
গতি বনাম সুরক্ষা :
টিকাগুলোতে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর গবেষণা এবং পরীক্ষার সময় লাগে এবং বিজ্ঞানীরা যে প্রকল্পগুলো চালু করেন তার মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশই সফল সমাপ্তিতে পৌঁছায়। কোভিড-১৯’র মুঠিতে অবরুদ্ধ বিশ্বের জন্য সময়ে এই হিসাবটি দুঃস্বপ্ন। কেউ কোনো ভ্যাকসিনের জন্য ৪ বছর অপেক্ষা করতে চায় না, ততক্ষণে কয়েক কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এবং অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায়।
বর্তমানে কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আগামী বছরের শুরুতে উল্লেখযোগ্য সময়ে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ প্রস্তুত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিছু বিজ্ঞানী সতর্কতা করে দিয়ে বলেছেন যে, এমনকি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এখনো ভাইরাসটির সমস্ত প্রভাব সম্পর্কে জানেন না।
যারা আরোগ্যলাভের আশায় মানব গবেষণার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে হাজির হয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এমনকি প্রতিষেধকের প্রায়োগিক ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা ছাড়াই, ত্বরান্বিত গবেষণা সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
জাতীয়তাবাদ বনাম বিশ্বততত্ব:
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্যান্ডি ডগলাস বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বাস্তবতা হ›ল, যেকোনো দেশের পক্ষে নিজেরা বড় সমস্যা থাকা অবস্থায় তাদের নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন রফতানি করার অনুমতি দেওয়া খুব কঠিন হবে।’ তিনি বলেন, ‘এর একমাত্র সমাধান হ›ল বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ভ্যাকসিন তৈরি করা।’
ঐতিহ্যগত বনাম নতুন পদ্ধতি:
৯০টিরও বেশি ভ্যাকসিন বিভিন্ন পদ্ধতিতে গবেষণাধীন রয়েছে। কিছু ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে এবং বাকিগুলো জিন ভিত্তিক কৌশল ব্যবহার করে। তবে জিন পদ্ধতি এতোটাই নতুন যে তারা এখনো কোনো ধরনের অনুমোদিত ভ্যাকসিন উপহার দিতে পারেনি।
পরিকল্পনা বনাম প্রক্রিয়াকরণ:
উল্লেখযোগ্য সময়ে একটি প্রতিষেধকের ডিজাইন করা এক জিনিস। আর, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে লাখ লাখ পরিমাণে, বিশেষত শূন্যের নীচে তাপমাত্রায় মোড়কজাত এবং পরিবহন করা, এমন বিপুল পরিমাণে উৎপাদন এবং বিতরণ করা সম্পূর্ণ আলাদা একটি চ্যালেঞ্জ। সুতরাং মৌলিক উৎপাদন ক্ষমতা থেকে শুরু করে মেডিকেল গ্লাস এবং স্টপার্সের ঘাটতি পর্যন্ত প্রচুর উপকরণ ও সরবরাহ সমস্যা পার হয়ে একটি প্রতিষেধক পর্যন্ত পৌছানোর তীব্র যুদ্ধ জারি রয়েছে।
ভ্যাকসিন বনাম চিকিৎসা:
ম্যালেরিয়া ড্রাগ হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন, ট্রাম্প যা উৎসাহের সাথে প্রচার করেছেন এবং করোনাভাইরাস রোগীদের ব্যবহারের জন্য জরুরি অনুমোদনো পেয়েছিলেন, সেটির ফলাফল মানুষের মধ্যে স্বল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ গবেষণাতে এখন পর্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, করোনার জন্য কোনো যাদুর বড়ি নেই। বরং তারা বাড়তি বিষয়গুলোতে অগ্রগতির আশা করছেন যা সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করবে।
বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদেরকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের থেকে প্লাজমা নিয়ে চিকিৎসা করছে এই আশায় যে, বেঁচে যাওয়াদের অ্যান্টিবডিগুলি রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। যদি আরো পরীক্ষায় কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে রেমডেসিভির ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। ১ বা ২ বারের অ্যান্টিবডি চিকিৎসাও সহজলভ্য হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন ছাড়াই প্রাথমিকভাবে হাতে গোনা এই ধরনের কয়েকটা চিকিৎসা এমনকি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন