শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সিয়াম সাধনার মর্মকথা

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে ঈমান, নামাজ ও যাকাতের পরই রোজার স্থান। হাদিস শরীফে এসেছে- ‘পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত : আল্লাহ তাআলাকে এক বলে স্বীকার করা, নামাজ কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমজানের রোজা রাখা ও হজ্জ পালন করা।’ (সহীহ মুসলিম : ১/৩২)।

সুতরাং রমজানের পূর্ণ মাস রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-(তরজমা) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)।

শরয়ী ওযর ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোজাও পরিত্যাগ করে সে নিকৃষ্ট পাপী। দ্বীনের মৌলিক ফরজ লঙ্ঘনকারী এবং ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে সে পরিগণিত হবে। আর এ কাজের কারণে সে ব্যক্তি রোজার যে মঙ্গল ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে তা কস্মিণকালেও পাবে না। এমনকি এ রোজার কাযা করে নিলেও তা ফিরে পাবে না। হাদিস শরীফে এসেছে ‘যে ব্যক্তি কোনো ওযর বা অসুস্থতা ব্যতিরেকে রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে সে যদি ঐ রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবুও ঐ এক রোজার ক্ষতি পূরণ হবে না।’ (জামে তিরমিযী : হাদিস ৭২৩)।

অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে অনেক সবল-সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যক্তিও অকারণে, সামান্য ছুতায় অসুস্থ হওয়ার অমূলক শঙ্কায় রোজা পরিত্যাগ করে। এতে তারা আখেরাতের কত বড় ক্ষতি নিজের ওপর টেনে নিচ্ছে তা একটু ভেবেও দেখে না।
রোজা এমন একটি ইবাদত যা বাহ্যত কষ্টকর হলেও তার প্রচলন ছিল সর্বকালে। হযরত আদম (আ.) এর যুগ থেকে শেষ নবী (সা.) পর্যন্ত সকল নবীর উম্মতের ওপরই তা ফরজ ছিল। (রূহুল মাআনী : ২/৫৬)।

অবশ্য পূর্ব যুগে রোজার ধরণ ছিল বিভিন্ন প্রকৃতির। রোজা রাখার পদ্ধতির ভিন্নতা ছাড়াও ফরজ রোজার সংখ্যাও বিভিন্ন রকম ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় উম্মতে মুহাম্মদীর ওপরও কেবলমাত্র আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজার ফরজ বিধান আসার পর আশুরার রোজা ফরজ হওয়ার হুকুম রহিত হয়ে যায়। (মাআরিফুস সুনান : ৫/৩২৩)।

উল্লেখ্য, রোজা ফরজ হয় হিজরতের দেড় বছর পর, ১০ শাবানে। রোজা ফরজ হওয়ার পর নবী কারীম (সা.) মোট ৯টি রমজান পেয়েছিলেন।
রোজার হেকমত : রোজার হেকমত তথা অন্তরনিহিত তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে একটি কথা ভালোভাবে জানা থাকা দরকার। তা এই যে, মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তাআলা ও মানুষের মাঝে সম্পর্ক হলো মহান স্রষ্টা ও ক্ষুদ্র সৃষ্টি এবং মহা মুনিব ও সাধারণ দাসের সম্পর্ক। এ সম্পর্কের সুস্পষ্ট দাবি হলো, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বিশ্ব প্রতিপালক স্রষ্টার যে কোনো নির্দেশ পালন করতে মানুষ সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। ঐ নির্দেশের হেকমত (তাৎপর্য) তার বুঝে আসুক আর নাই আসুক।

সুতরাং মহান আল্লাহ তাআলা যত প্রকার ইবাদতের নির্দেশ দিবেন সেগুলোর কোনো কারণ বা তাৎপর্যের পিছনে না পড়ে তৎক্ষণাৎ নতশিরে তা মেনে নেয়াই হচ্ছে বান্দার দায়িত্ব। বলাবাহুল্য, শরীয়ত নির্দেশিত কোনো ইবাদতই তাৎপর্যহীন বা যুক্তিবিরোধী নয়। তবে সবকিছুর যুক্তি বা হেকমতই যে বান্দার জানা থাকবে বা বান্দার জ্ঞান-বুদ্ধি তাকে স্পর্শ করতে পারবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অতি সামান্য জ্ঞানই দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমাদেরকে অতি সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।’ (সূরা আলইমরান ৮৫)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশনাসমূহে কত হেকমত, কত কারণ এবং কত উদ্দেশ্যই থাকতে পারে, বান্দার কত কল্যাণই তাতে নিহিত থাকতে পারে। অসীম জ্ঞানের অধিকারী সে স্বত্তার নির্দেশনাসমূহ তাৎপর্য সসীম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কতই বা বুঝতে পারবে! তবুও ইসলামী পÐিতগণ বিভিন্ন ইবাদতের বিভিন্ন ধরনের হেকমত বর্ণনা করেছেন। রোজার ব্যাপারেও বিভিন্ন হেকমতের কথা তাঁরা বলেছেন। যদিও শরীয়তের নির্দেশ মান্য করা এ সকল হেকমত বুঝে আসার সাথে সম্পর্কিত নয় তথাপি সম্মানিত পাঠকমÐলির কৌতুহল নিবারণের উদ্দেশ্যে নিম্নে রোজার দু’একটি হেকমত সম্পর্কেও আলোকপাত করা হলো।

‘আল্লাহ তাআলা মানুষের স্বভাবে যে ফেরেশতা সুলভ বৈশিষ্ট্য চরিত্র গচ্ছিত রেখেছেন, তার উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন এবং নফস ও প্রবৃত্তির দমন ও নিবৃত্তির অন্যতম মাধ্যম হলো রোজা। কানা’আত, আত্মশুদ্ধি, সবর ও শোকর, তাকওয়ার মতো বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্নতি ও বিকাশে রোজার গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। উপরন্তু রোজার মাধ্যমে মানুষ উদার ও প্রবৃত্তিরথ জৈবিক তাড়না হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ঊর্ধ্ব জগৎ তথা আপন স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপনে সক্ষম হয়।

তাছাড়া নিরেট চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বছরের কিছু দিন অবশ্যই পানাহার বর্জন করা উচিত। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী। তাই হিন্দু-খ্রিষ্টান সকল ধর্মেই রোজার মতো উপবাস করার প্রচলন রয়েছে। (যদিও ইসলামের রোজার সাথে সেসব উপবাসের পদ্ধতিগণ বহু পার্থক্য রয়েছে)। (আরকানে আরবাআ : ২৬৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Md. Shahadad Hossan Shapan ৮ মে, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
করোনা মোকাবিলায় সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের যে আহ্বান ইথারে অবিরত উচ্চারিত-উৎসারিত হচ্ছে তাতে আশা করা যায়, রোজাদারের জীবনযাপনপ্রণালি শৃঙ্খলাম-িত হয়ে উঠবে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৮ মে, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। কর্মফলের দ্বারা আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামতের স্থায়িত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আল কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা অনুধাবন ও উপলব্ধির মধ্যে আত্মশুদ্ধির চিন্তা-চেতনা পরিশীলিত হতে পারে। সূরা আনফালের ৫৩ নম্বর আয়াতে ঘোষিত হচ্ছে, ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তিনি তা পরিবর্তন করবেন; এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ৮ মে, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
আল্লাহর নিয়ামত স্থায়িত্বের যে নিয়ম বা মূলনীতি তা হলো কোনো ব্যক্তি বা জাতিকে যে নিয়ামত দান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় না, যে পর্যন্ত না নিজের বা নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লাহর আজাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৮ মে, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
রমজানে আমরা এক মাস রোজা পালন করলাম, বাকি এগারো মাস রোজার আদর্শ মেনে চলতে পারব কি না? রমজানে আমরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজসহ তারাবি, তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, যাওয়াল, আউওয়াবিন ও অন্যান্য নফল নামাজ পড়ি; বাকি জীবন নামাজের আদলে পরিচালিত করতে পারব কি না? রমজানে আমরা খতম তারাবিসহ বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করি; কোরআনের নির্দেশ আমার ব্যক্তিজীবন, পরিবার ও সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারছি কি না? সত্যতা, সততা ও পবিত্রতা কতটুকু অর্জন করেছি?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন