শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ঈদের অর্থনীতি এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এখনই সময়

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ১২:০৫ এএম

দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এখন কি অবস্থায় আছে, এ প্রশ্ন যদি করা হয়, তবে এর উত্তর অনেকের পক্ষে দেয়া কঠিন। অথচ এই কদিন আগেও মোটামুটি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন যে কেউ গড়গড় করে বলে দিতে পারত দেশের জিডিপি ৮-এর উপরে, মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, অর্থনৈতিক উন্নতিতে বিশ্বের বিস্ময়সহ নানা তথ্য-উপাত্ত। সরকারের তরফ থেকে এসব পরিসংখ্যান প্রতিদিন এত বলা হতো যে, মানুষের হেফজ হয়ে গিয়েছিল। এখন যদি এসব বিষয়ে কাউকে পরীক্ষা নেয়ার মতো জিজ্ঞেস করা হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই বলবে, ভুলে গেছি। অর্থাৎ বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সারাবছর মুখস্ত করে পরীক্ষার সময় ভুলে যাওয়ার মতো। এর কারণ হচ্ছে, তারা মনোযোগী ছিল না, নয়তো তাদের ঠিকমতো সরকার শেখাতে পারেনি কিংবা শেখানোর মধ্যে গলদ ছিল। এখন যদি কাউকে অর্থনীতি কেমন, এ কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে কেউ হতাশ হয়ে উত্তর দেবে, কেউ হয়তো রেগে বলবে, রাখেন আপনার অর্থনীতি, আজ গেল কোনোরকম, কাল খাবো কি, তার নাই ঠিক, এর মধ্যে আবার অর্থনীতির হিসাব। যারা কোটিপতি, শত শত কোটি টাকার মালিক, তারাও মুখ শুকনো করে বলবে, ভাল না। করোনার শুরুতে গার্মেন্ট কারখানা যখন বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন হাজার কোটি টাকার এক গার্মেন্ট কারখানার মালিক খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন, এখন শ্রমিকদের বেতন দেব কীভাবে! যদি সুঁই-ই না চলে, তবে এক টাকাও তো ইনকাম হবে না। তার এই উদ্বেগ দেখে মনে একটা প্রশ্নই জেগেছে, আর কত টাকা হলে আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না। সে যাই হোক, সরকার কি এখন অর্থনীতি নিয়ে উচ্চবাচ্য করবে বা করছে? মনে হয় না। কারণ এই ত্রাহী পরিস্থিতিতে অর্থনীতির এসব তত্ত¡কথা বলার সময় না। এসব বলতে হবে স্বাভাবিক সময়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে, আরাম করে। অবশ্য, সরকার এখন এসব কথা বলছে না। বলছে না, আমাদের এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছি। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন হাত পাতার সময়। আমাদের শাইনিং অর্থনীতিতে করোনা টান ধরিয়ে দিয়েছে। ফলে এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সাহায্য চাইতে হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেই আগামী বাজেট কত বড় হবে তার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বাজেট নাকি ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা হবে। যদি তাই হয়, তবে তা হবে এই দুঃসময়ে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজেট। অবশ্য স্বাভাবিক সময়েও হয়তো এই বাজেট বা তার চেয়ে বেশি অংকের হতো। কারণ বাজেটের অংক ঘোষণার মধ্যে সরকার বরাবরই চমক সৃষ্টি করতে চায়। যদিও অর্থনীতিবিদরা বরাবরই বলে আসছেন, বাজেটের অংক বড় কিংবা ছোট, যাই হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। তারপরও সবকিছুতে বাড়িয়ে বলার প্রবণতা বরাবরই আমাদের মধ্যে দেখা যায়। বাজেট বাস্তবায়ন হলো কি হলো না, তা কে খোঁজ নিতে যায়? অর্থ বছর শেষে সরকার যদি বলে দেয় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে, তবে তাই মেনে নিতে হবে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ হয়তো মৃদুস্বরে বলবে, বাজেট অনেকাংশে বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের এ কথা বলায় অবশ্য সরকারের কিছু যায় আসে না। সরকার তার মতো করেই বলে যাবে, এগিয়ে যাবে এবং যাচ্ছে। তবে শো অফের বাজেট আর পরিসংখ্যানের সংখ্যার উন্নতির অর্থনীতি যে খুব বেশি টেকসই হয় না, তা করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতির কঙ্কাল বের করে দিয়েছে। যত দিন যাবে, এর অস্থিমজ্জা বের হতে থাকবে। এ অবস্থার মধ্যেই সরকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বেশ বড় অংকের বাজেট। হয়তো দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী, শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, চিন্তার কিছু নেই, জনগণকে এ অভয় দিতেই সরকার বড় অংকের বাজেট ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। তবে প্রত্যেকেই আশা করে, দেশের অর্থনীতি বিপদে-আপদে সবসময়ই ভালো থাকুক। আশার কথা, গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনা পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারত, পাকিস্তান ও চীনের চেয়েও ভালো অবস্থায় থাকবে।
দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ যে অত্যন্ত দুর্গতিতে আছে, তা বলা অনাবশ্যক। আমরা রোজার প্রায় মাঝামাঝি চলে এসেছি। সাধারণত রোজার মাঝামাঝিতেই ঈদপণ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসা জমতে শুরু করে। অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে উঠে। বলা হয়, ব্যবসায়ীদের সারাবছরের ব্যবসার সিংহভাগ ঈদে হয়ে থাকে। তারাও এ সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। বড় বিনিয়োগের প্রস্তুতি নেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঈদে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। বছরের পর বছর তা বৃদ্ধি পায়। ঈদে বিনিয়োগের জন্য প্রায় ৬ মাস আগে থেকে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি শুরু হয়। বিশেষ করে পোশাকের দোকান ও ফ্যাশন হাউসগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এবারও এমন প্রস্তুতি ছিল। তবে করোনা সব ভেস্তে দিয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক ও অন্যান্য ঈদ সামগ্রী আমদানির অর্ডার আগেভাগেই ব্যবসায়ীরা দিয়ে থাকে। এতে বিপুল অর্থ অগ্রীম বিনিয়োগও হয়। এছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে টেইলরসহ ব্লক, বুটিক ও হাতের কাজের অসংখ্য মানুষ। দেখা যায়, রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকে টেইলর শপগুলোতে অর্ডারের ভিড় শুরু হয়। রোজার মাঝামাঝি অনেক টেইলর অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়। দশ রোজার পর থেকেই মার্কেটগুলো রাত দশটা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। ধীরে ধীরে তা গভীর রাতের দিকে গড়ায়। মার্কেটগুলোও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে। সড়ক-মহাসড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দেশের ইতিহাসে হয়তো এবারই প্রথম ঈদের চিরায়ত এ চিত্র দেখা যাবে না। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে যে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড তা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে যে ক্ষতি হবে, তা ব্যবসায়ীদের পোষানো সম্ভব নয়। বলা যায়, সারা বছরের ক্ষতি ঈদেই হয়ে যাবে। বিগত প্রায় দেড় মাস ধরে মার্কেট বন্ধ থাকাসহ ঈদের বাজার না হওয়াতে ক্ষতির পরিমাণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এতে কর্মহীন হয়ে পড়বে হাজার হাজার দোকান কর্মচারি। অনেক দোকানদার পুঁজি হারিয়ে দোকান ছেড়ে দিতে পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলেছে, দেশে ১ থেকে ১৫ জনের নিচে কর্মচারি রয়েছে এমন ৫৬ লাখ দোকান রয়েছে। লকডাউনের কারণে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক সময়ে যদি এই ক্ষতি হয়, তাহলে ঈদের সময়ে আরও কত ক্ষতি হবে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। বলা বাহুল্য, দেশের অর্থনীতিতে এই ক্ষতি বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। যদিও সরকার ঈদের কেনাকাটার সুবিধার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদে কেনাকাটার সুবিধার্থে আজ সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শপিং মল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বড় বড় শপিংমল ও ব্যস্ততম মার্কেটগুলো স্বাস্থ্যসুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হয়তো কিছু কিছু মার্কেট বা দোকানপাট খুলবে তারপরও ঈদের জমজমাট বাজার বলতে যা বোঝায়, তা এবার দেখা যাবে না। রোজায় শুধু ঈদের বাজারের ক্ষতি নয়, ইফতারের বাজারকে কেন্দ্র করেও বড় ধরনের যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়, তারও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ সময় ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল-রেস্তোঁরায় জমজমাট ইফতারির বাজার বসে। এতেও বিপুল বিনিয়োগ হয়। সব ধরনের পণ্যের বাজারে চাঞ্চল্য থাকে।
এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, কর্পোরেট কোম্পানি, রাজনৈতিক দলগুলোর একের পর এক ইফতার পার্টির কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। রোজা এবং ঈদকে কেন্দ্র করে যে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও লেনদেন হয়, বলা যায়, এবার তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের মধ্যে চিরায়ত যে উৎসবমুখর পরিবেশে দেখা যায়, তা হয়তো এবার দেখা যাবে না। দেখা যাবে না, অধিক দামে বিক্রি করার জন্য টিকেট নিয়ে পরিবহন ব্যবসায়ীদের লুকোচুরি কিংবা কালোবাজারি। টিকেটের লাইন ধরার জন্য সেহরি খেয়েই কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ভিড় কারা এবং টিকেট পেয়ে হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ার আনন্দদৃশ্যও দেখা যাবে না। কিংবা দেখা যাবে না, টিকেট না পেয়ে নানা অভিযোগ ও আক্ষেপের চিত্র। রাজধানী ছেড়ে ঘরমুখী মানুষকে কেন্দ্র করে পরিবহন খাতের যে শত শত কোটি টাকার অথর্নীতি, তা এবারের ঈদে দেখা যাবে না। রোজার ঈদের পরপরই ব্যবসায়ীরা কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এ ঈদে নতুন জামাকাপড়ের চেয়ে পশু কেনাকাটায় বিনিয়োগ হয় বেশি। সবমিলিয়ে এ ঈদেও অর্থনীতির আকার বেশ বড় হয়। অর্থাৎ, দুই ঈদে দেশের অর্থনীতি বাজেটের প্রায় অর্ধেক হয়ে দাঁড়ায়। করোনার করাল থাবায় অর্থনৈতিক এই কর্মকান্ড অচল হয়ে পড়ায় দেশ বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ীকে খরচ কমাতে দোকানের কর্মচারি ছাঁটাই করতে হবে। এতে দেশে বেকারত্ব যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনীতিও দুর্বল হবে। অনেকে সরকারের কাছে প্রণোদনা স্বরূপ ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে লোন চাইতে পারে। সরকার অবশ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা হিসেবে স্বল্প সুদে বিশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এ ঋণ সুবিধা ব্যবসায়ীদের তখনই কাজে লাগবে যদি তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। এ সম্ভাবনা কবে নাগাদ দেখা দেবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদে নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ বিত্তদের যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদ শপিংয়ের বাজেট থাকে। তাদের এই বাজেটের ওপর নির্ভর করেই ঈদ মার্কেট আবর্তিত হয়। যদিও করোনার করাল থাবায় ইতোমধ্যে নিম্নবিত্তের ঈদ শপিংয়ের স্বপ্ন উড়ে গেছে, মধ্যবিত্তদের অনেকেই শপিং স্থগিত করেছে, তারপরও যারা এখনো বাজেট করে রেখেছে, তাদের উচিৎ এই বাজেটের একটা অংশ নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে বরাদ্দ করা। সবার আগে নিজেদের দরিদ্র আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য করা। তারপর আশপাশের মানুষের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়া। এক ধণাঢ্য দম্পতি ইতোমধ্যে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছে, এবারের ঈদে তাদের যে বাজেট, তার পুরোটাই তাদের আশপাশের এলাকার অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে বিতরণ করবে। ইতোমধ্যে তারা তালিকা প্রস্তুত করেছে। এই দম্পতিকে করোনার শুরুর সময় থেকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তারা তাদের পরিচিত বন্ধু ও স্বজনদেরকেও এ কাজে আহবান জানিয়ে উৎসাহিত করেছে। তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। তারা এলাকা ভাগ করে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছে। তাদের এই সহায়তা কার্যক্রম চেইন রিঅ্যাকশনের মতো কাজ করছে। এভাবে যদি সামর্থ্যবানরা চেইন প্রক্রিয়ায় সহায়তা কার্যক্রম চালায়, তবে অসহায় অনেক মানুষ কোনোরকমে হলেও দুর্দিন পার করতে পারবে। পাশাপাশি যেসব রাজনৈতিক দল, কর্পোরেট কোম্পানি ও সামাজিক সংগঠনের ইফতারের বাজেট রয়েছে, তার সাথে ঈদের সহায়তার অর্থ মিলিয়ে এলাকাভিত্তিক অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে পারে। তাদের সম্মিলিত এই অর্থের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। কাজেই, এ ব্যাপারে ধণী শ্রেণী এবং উল্লেখিত সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন মানবিক হওয়া উচিত তেমনি সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা দরকার। যদি তারা মনে করে, করোনার কারণে তাদের টাকা বেঁচে গেল, তাহলে বলার কিছু নেই।
ঈদে সামর্থ্যবানদের ঘরে ভালো রান্না-বান্না এবং খাবার-দাবারের অভাব হবে না। দেশ যদি দুর্ভিক্ষের অন্ধকারে ডুবেও যায়, তারপরও তাদের ঘর ঠিকই আলোকিত থাকবে এবং সুস্বাদু খাবারের খশবু ছড়াবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, গত বছর ঈদে যাদের ঘরে ভালো-মন্দ কিছু রান্না হয়েছে, তাদের সিংহভাগের ঘরেই এবার ঈদের বিশেষ রান্না দূরে থাক, ডাল-ভাত খাবারের মতোও অবস্থা নেই। এমন অসংখ্য পরিবার রয়েছে, যারা করোনার কবলে পড়ে প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থান করছে। তাদের কাছে ঈদ বা ঈদের অর্থনীতি বলে বিশেষ কিছু নেই। তারা কোনোরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে পড়েছে। এরা না পারছে সইতে, না পারছে কইতে। তাদের ছোট্ট অবুঝ সন্তান যখন বাবা-মাকে বলবে, ঈদে নিশ্চয়ই পোলাও- গোশত রান্না হবে, তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাদের মুখ বুজে সহ্য করা বা অন্যকথা বলে শিশুমন ঘুরিয়ে দেয়া ছাড়া তাদের কি আর কোনো উপায় থাকবে? আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, সরকারের স্বপ্ন দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তবে এতদিন দুঃখী মানুষের প্রকাশ্য চেহারা গণহারে দেখা যায়নি। আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন দুঃখী মানুষগুলো তাদের চেহারা আড়াল করে রাখত। করোনা তাদের দুঃখী চেহারা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। পরিচিত কোটি কোটি দুঃখী মানুষের মিছিলে তাদের শামিল করে দিয়েছে। সরকারের কথা অনুযায়ী, সত্যিকার অর্থে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং ক্রেডিট নেয়ার মোক্ষম সুযোগ এখন। সরকার অবশ্য প্রায় দুই কোটি মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এই সুযোগের সাথে রাজনৈতিক দল, কর্পোরেট কোম্পানি, অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন সর্বোপরি সামর্থ্যবানরা যুক্ত হতে পারে। সরকারের উদ্যোগের সাথে দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক এই বিশাল গোষ্ঠী যুক্ত হলে করোনায় দুঃখী হয়ে পড়া মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়ে রাখা খুবই সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন