শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

র‌্যাবের তালিকায় সিলেটের নিখোঁজদের নিয়ে হ-য-ব-র-ল

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সিলেট অফিস : সম্প্রতি ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলা এবং ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশ পথে হামলার পর হামলাকারীদের ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধান করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হামলাকারীর দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিল বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে ‘নিখোঁজ’ থাকা ব্যক্তিদের তথ্য জানাতে তাদের পরিবারের প্রতি আহ্বান জানায়। এরই প্রেক্ষিতে সারাদেশ থেকে প্রাপ্ত ‘নিখোঁজ’ ২৬২ জন ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে র‌্যাব।
তবে র‌্যাবের প্রকাশিত তালিকায় সিলেট বিভাগের ‘নিখোঁজ’র ব্যক্তিদের নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা গেছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্তৃক বুধবার মধ্যরাতে ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, সেখানে সিলেট বিভাগের ৯ জন ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তির নাম রয়েছে। তবে তালিকায় এক ব্যক্তির নাম এসেছে দুইবার। অন্যদিকে তালিকায় থাকা আরেক ব্যক্তি ‘নিখোঁজ’ নন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এক্ষেত্রে সিলেটের ৯ জন নয়, ৭ জন ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। ওই ৭ জন ছাড়াও নিখোঁজ তালিকার আরেক ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি সিলেটে হলেও তার স্থায়ী ঠিকানা ঢাকায় দেখানো হয়েছে।
র‌্যাবের প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকার ৩৬ নম্বরে নাম রয়েছে হবিগঞ্জের লাখাইয়ের তেগুরিয়ার কুতুব আলীর ছেলে মো. মঈন উদ্দিনের (২০)। তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার রেশ কলোনী দেখানো হয়েছে। গত ২৬ মে থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর ঢাকার তেজগাঁও থানায় ২৭ মে জিডি (নং-১৬২৩) দায়ের করা হয়। তালিকার ১৩১ নম্বরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার কান্দলার মজম্মিল আলীর ছেলে শামীম আহমদের (২৫) নাম রয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলির জোলার হাটের মামুনের কলোনীকে তার বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৭ জুন থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর ৩ জুলাই সিলেট কোতোয়ালি থানায় জিডি (নং-১৫৬) দায়ের করা হয়েছে। তালিকায় ঠিক পরের স্থানে, তথা ১৩২ নম্বরে সিলেটের কানাইঘাটের ঝিংগাবাড়ির তাজুল ইসলাম রুনেলের (৩৮) নাম রয়েছে। তার বর্তমান ঠিকানায়ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলির জোলার হাটের মামুনের কলোনী উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ হওয়া রুনেলের বিষয়ে ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় জিডি (নং-৬৮১) দায়ের করা হয়। হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার সুন্দাদিল কাজিবাড়ির মো. সুলেইমানের ছেলে মো. নাহিদুল ইসলাম ইমনের নাম রয়েছে র‌্যাব কর্তৃক প্রকাশিত তালিকার ১৬৬ নম্বরে। বি-বাড়িয়া জেলার সদর থানার পশ্চিম মেড্ডা পীর বাড়িকে তার বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছে। গত ২৮ মে নিখোঁজ হওয়ার পর  ৩১ মে জিডি (নং-১৫২৭) দায়ের করা হয়। তবে ঠিক কোন থানায় জিডি দায়ের করা হয়েছে, তার উল্লেখ নেই র‌্যাবের তালিকায়।
তালিকার ১৮৫ নম্বরে রয়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজারের বড়গ্রাম সাদিমাপুরের শফি আহমেদ চৌধুরীর ছেলে তামিম আহমেদ চৌধুরীর নাম। তিনি কবে থেকে নিখোঁজ, তার উল্লেখ করা হয়নি। তবে তার পাসপোর্ট নম্বর এএফ-২৮৩৭০৭৬, যেটি ০৪/০৮/২০১৩ তারিখে ইস্যু করা হয় এবং ০৩/০৮/২০১৬ তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সূত্রানুসারে, তামিম আহমেদ চৌধুরীর জন্ম কানাডায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ২০০১ সালে তিনি একবার দেশে এসেছিলেন। তালিকার ২২০ নম্বরে আছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের মোসাজাদ হোসেন (৪৫)। তবে তার বাবার নাম, তিনি কত তারিখে নিখোঁজ হন কিংবা কোনো জিডি করা হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই র‌্যাবের তালিকায়।
র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকায় ২২২ নম্বরে রয়েছে জকিগঞ্জের পোশরীফগঞ্জের আমলশীদ গ্রামের মো. ছাদিকুর রহমান জুবেরের (২৬) নাম। এরপর ২৩৫ নম্বরেও তার নাম রয়েছে। তবে ২২২ নম্বরে তার বাবার নাম উল্লেখ না থাকলেও ২৩৫ নম্বরে বাবার নাম হিসেবে মৃত আব্দুল হান্নান উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ২২২ নম্বরে জুবেরের বয়স উল্লেখ করা হলেও ২৩৫ নম্বরে বয়সের উল্লেখ নেই। তাছাড়া ২২২ নম্বরে গ্রামের বাড়ির নামে ‘পোশরীফগঞ্জ’ এবং ২৩৫ নম্বরে ‘পেশরীফগঞ্জ’ লেখা রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুরের ঈশান কোনা গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর মিয়ার নাম রয়েছে তালিকার ২২৪ নম্বরে। তার বাবার নাম, তিনি কবে থেকে নিখোঁজ এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। তবে জাহাঙ্গীর মিয়া নিখোঁজ নন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোরসালিন আহমদ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে জানান, জাহাঙ্গীর মিয়া প্রায় দেড় মাস আগে সিলেট যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন। তাকে অজ্ঞান করে সাথে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় অজ্ঞান পার্টি। তার পরিবার তিনি নিখোঁজ হয়েছেন বলে জিডি দায়ের করেছিল। তবে পরদিন তার খোঁজ পাওয়া যায়। বর্তমানে তিনি নিখোঁজ নন।
এদিকে তালিকার ১৮৯ নম্বরে থাকা সাবেক নির্বাচন কমিশনার মৃত শফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান সাফির স্থায়ী ঠিকানায় ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-১ দেখানো হয়েছে। তবে তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় দয়ামীর ইউনিয়নের পারকুল গ্রামে। র‌্যাবের তালিকার থাকা সিলেটিদের বিষয়ে কথা বলতে র‌্যাব-৯ এর সহকারি পরিচালক (মিডিয়া) এসএম ফখরুল ইসলামের সেলফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন