বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিরছে অপরূপ প্রকৃতি

চট্টগ্রামে থামেনি আড়ালে পাহাড়-গাছ কাটা পলিথিন-ময়লা-আবর্জনা ফেলা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রাম নগরে বহুকাল পরে ফিরে এলো বিচিত্র পাখ-পাখালি। দিনমান শোনা যায় ওদের সুমধুর গান। সুরভিত ফুলের সুবাসে নিঃশ্বাসে মুক্ত বাতাসে ভরে বুক। ইট-পাথরের ‘বস্তি’ শহুরে জীবনে যেগুলো ‘নাই’ হয়ে মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। গ্রীষ্মের বৈশাখজুড়ে খরতাপকে পরাস্ত করেছে সুশীতল মেঘের ছায়া। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির অপার মহিমাময় উপহার। চারিদিকে অপরূপ প্রকৃতির জাগরণ। নতুনের গড়ার মেলা আর খেলায় মুক্ত প্রকৃতি।
করোনাকারণে মানুষ ঘরবন্দি। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যন্ত্রদূষণ, যানজট, জনজট বলতে গেলে নেই। সুনসান ফাঁকা দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী। সবুজ সজীবতা, ফুল-দলে পল্লবিত ঘন গাছে গাছে চট্টগ্রাম সত্যিই এক ‘গ্রিন সিটি- ক্লিন সিটি’র পথে। পুরো চট্টগ্রামকে প্রায় জনশূন্য সবুজ বাগানের শহরই মনে হয়।
পতেঙ্গা, পারকী, গুলিয়াখালী, হালিশহর সমুদ্র সৈকতগুলোতে শুধুই ঢেউ আছড়ে পড়ছে। দেখার কেউ নেই। নগরের কেন্দ্রস্থলে সিআরবি, ডিসি হিল, জিলাপির পাহাড়, হাতীর বাংলো, জাম্বুরি পার্ক, ষোলশহর বন গবেষণাগার, টাইগার পাস, নন্দনকানন, হাজী মুহম্মদ মুহসিন কলেজ পাহাড়, পাহাড়তলী, খুলশী, আকবর শাহ, লালখানবাজার, সলিমপুর, বায়জিদ এলাকার পাহাড়-টিলাগুলোতে হরেক প্রজাতির গাছপালায় সবুজ ও সতেজতায় ভরে যাচ্ছে। ফয়’স লেকে স্বচ্ছ টলটলে পানিতে খেলছে মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে এখনও আড়ালে অবৈধভাবে পাহাড়-টিলা ও গাছ কাটার অপকান্ড কমবেশি চলছে পাহাড়তলী, আকবর শাহ, জঙ্গল সলিমপুর, বায়জিদ, হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে। দখল, ভাড়া লেনদেন, চাঁদাবাজিও চলছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মনজুরুল কীবরিয়া বলেন, করেনা সত্তে¡ও অবাধে চলছে পরিবেশের বিষফোঁড়া পলিথিনের কারবার। নদ-নদী, খাল-ছরা, নালা-নর্দমা, জলাশয় ভরে যাচ্ছে পলিথিনে। তাছাড়া যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা থামেনি।
দেশের অর্থনীতির হৃৎপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ কর্ণফুলী এবং এশিয়ায় মিঠাপানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদাসহ চট্টগ্রামের শঙ্খ ও অন্যান্য নদীর পানি পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। দূষণ কমে যাওয়ার ফলে স্বচ্ছ পানিতে বিভিন্ন জাতের মাছের বিচরণ বেড়েছে।
বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ রাশিয়ার কনসাল জেনারেল স্থপতি আশিক ইমরান ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রামে পরিবেশ-প্রকৃতির আদি বৈশিষ্ট্য রূপ নিসর্গগুলো কিছুটা হলেও ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফুল-পাখি, বৃক্ষরাজি, প্রায় দূষণহীন বায়ু, সবুজায়ন প্রক্রিয়া এসব তো দেখছি এখন। সুস্থ স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য যা অপরিহার্য। আমরা মানুষেরা প্রকৃতির উপর যথেষ্ট অত্যাচার করেছি। এখন থেকেই আমাদের মানবিক পৃথিবী গড়ার শিক্ষা নিতে হবে।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নুর মোহাম্মদ বলেন, করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকির মাঝেও বর্তমানে ভরা গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া ও পরিবেশ-প্রকৃতিগত দিকগুলো যেমন- ধুলোবালি, বায়ু ও ধোঁয়ার প্রায় দূষণমুক্ত স্বাভাবিকতা বিরাজমান রয়েছে। এরফলে সর্দি-কাশি, জ¦র, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট, হিটস্ট্রোক ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন রোগের প্রকোপ কম। জনস্বাস্থ্যের জন্য নিঃসন্দেহে তা ইতিবাচক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন