শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অচেনা রূপে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেখানে দিনে ২৮টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১২০টির বেশি ফ্লাইট ওঠা-নামা করতো। বিমানবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করত। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই থাকত ব্যস্ততা। একের পর এক ফ্লাইট ওঠানামা করত। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেতেন না দম ফেলার ফুসরত। 

এক বেল্ট থেকে অন্য বেল্টে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাতেন গোয়েন্দারা। কিন্তু সেই বিমানবন্দরে এখন সুনসান নীরবতা। আকাশে নেই তেমন বিমান ওড়ার দৃশ্য। থমকে গেছে সব কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় সারা বিশে^র সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চিরচেনা সেই পরিবেশ আর নেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে। একই পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরেও। সব মিলে বিমানবন্দরে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। নেই কোনো কোলাহল, হাঁকডাক।
গতকাল সরেজমিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকা এখন মানবশূন্য। বিমানবন্দরের সামনে সুনসান নীরবতা। দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দু’একজন সদস্য ও আনসার ছাড়া পুরো টার্মিনাল ফাঁকা। বিমানবন্দরের ভেতরে রানওয়েতে রয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও আসেনি। নেই চিরচেনা ব্যস্ততাও। এ যেন এক অচেনা বিমানবন্দর।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন জানান, প্রায় সব রুট বন্ধ করার ফলে বিমানবন্দরে বিমানের হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম কমে গেছে। এতে প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মীকে ছুটি দেয়া হয়েছে।
গত ২২ মার্চ থেকে বিশে^র বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা দেয় বেবিচক। কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কুয়েত, ওমান, সউদী আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাশর্^বর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্লাইট বাংলাদেশে অবতরণ করতে না পারার নোটিশ টু এয়ারম্যান (নোটাম) জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে এখন ১৬ মে করা হয়েছে।
বিমানবন্দর ঘুরে আরও দেখা যায়, পার্কিং জোন এখন পুরোই ফাঁকা। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া যেত না। এখন বিমানবন্দরে আসা গাড়িগুলোর জট সামলাতে ব্যস্ত হতে হয় না আর্মড পুলিশ সদস্যদের। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে ব্যস্ত থাকতেন যেসব পুলিশ সদস্য, তারাও নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন চেকপোস্টগুলোতে। দর্শনার্থীদের ভিড় না থাকায় টিকিট কাউন্টারগুলো ফাঁকা। যাত্রী না থাকায় টার্মিনালগুলোতে নেই যাত্রীদের কোনো লাইন। বিমানবন্দরের ভেতরের বেশির ভাগ দোকানপাটই বন্ধ। কাজ না থাকায় ভেতরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পার করছেন অলস সময়।
বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, ফ্লাইট না থাকায় কাজের চাপ নেই বললেই চলে। পুরো বিমানবন্দরেই কোলাহলমুক্ত পরিবেশ। এই পরিবেশ দেখতে আর ভালো লাগে না। শাহজালাল বিমানবন্দরে গত ৭ বছর ধরে দায়িত্বরত বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক সদস্য দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এর আগে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলার পর সপ্তাহখানেকের জন্য বিমানবন্দরে যাত্রী কিছুটা কম ছিল, তবে সব ফ্লাইট চলতো। বর্তমানে কোনো যাত্রীই নেই, কোনো কোলাহল নেই। বিমানবন্দরের এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় সতর্ক আছি।
বিমানবন্দরের পার্কিংয়ের ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত নূর মোহাম্মদ বলেন, আগে ৮ ঘণ্টা সময়ের ডিউটিতে ৫ মিনিটও বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ হতো না। গাড়ি সারাদিনই আসতো, সিøপ কাটতে হতো। এখন ৮-১০ মিনিট পর পর একটি গাড়ি আসে। যাত্রী নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যায়। ১৭ মার্চের পর থেকে গাড়ি একদমই নেই।
শাহজালাল বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় যান প্রাইভেটকারের চালক আল-আমিন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দর অচল হয়ে যাওয়ায় আমরা বেকায়দায় পড়েছি। করোনাভাইরাসের আগে প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে ঢাকার বাইরে যেতাম। এখন অলস সময় পার করছি। আয়-রোজগার না থাকায় সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। সামনে কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন