বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দান ও সাদাকার সময় বয়ে যায়

মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

বছরের ১২ মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস রমজান দেখতে দেখতে শেষ হওয়ার পথে। রহমতের ১০ দিন শেষ হওয়ার পর মাগফেরাতের ১০ দিনও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই আমাদের জীবন থেকে আরেকটি রমজান গত হয়ে যাবে।

এই পর্যন্ত আমরা কে কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি জানি না। আর একদিন পরই শুরু হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১০ দিন। এই দশকে রয়েছে মহিমান্বিত রজনি লাইলাতুল কদর। পেছনের দশকে যতটুকু আমলই করতে পেরেছি, এই দশকে আরও অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে পেছনের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

পৃথিবীর এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা এক নতুন রমজান দেখতে পেলাম। করোনা নামক এক মহামারীর কারণে পৃথিবী আজ ঘরে বন্দি। অন্যবারের মতো এবার একসাথে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া হয়নি। তারাবিহ পড়া যাচ্ছে না। এতসব না পাওয়ার ভীরেও পরম পাওয়া ছিল, ঘরে ঘরে মসজিদ কায়েম হওয়া। পরিবারের সবাই মিলে জামাতে নামাজ, তারাবিহ পড়া হচ্ছে। যা অন্য সময় করা হতো না।

পৃথিবী থমকে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে খেটে খাওয়া মানুষ ও দিন মজুর। অবহেলিত আর বঞ্চিত শ্রেণি যেন নতুন করে বিপদে পড়েছে। কিন্তু রমজান তো হলো সহমর্মিতা ও সহানুভ‚তির মাস। সমাজের বিত্তবানরা যদি হাতখুলে দান করে, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল থাকে, তাহলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।

বঞ্চিতদের দিকে দানের হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহতায়ালাও বান্দার দিকে হাত বাড়াবেন। এটা আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি। গরিবদের দান খয়রাত করা কোনো করুণার ব্যাপার নয়, বরং দান হলো নিজের আমলনামাকে সমৃদ্ধ করার উপায়। মনে রাখতে হবে গরিবদের সম্পদহীন করে আল্লাহ যেমন পরীক্ষা নেন, তেমনি সম্পদশালীদের সম্পদ দিয়েও আল্লাহতায়ালা পরীক্ষা নেন। লোক দেখানো ও নাম কামানোর নিয়ত ব্যতীত আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য যদি কেউ দান করে, তাহলে তার দুনিয়া ও আখেরাতে সমৃদ্ধি মিলে। দান করার ফজিলত এই পার্থিব দুনিয়াতেই কিছুটা লক্ষ করা যায়। তবে, বেশিরভাগ ফজিলতই আখেরাতের বিপদসংকুল সময়ের জন্য জমা থাকে। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারীমে দান খয়রাতের ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রকাশ্যে গোপনে উভয়ভাবেই দান করা যায়। এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর, তবে কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭১)।

যদি কেউ প্রকাশ্যে দান করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার নিয়ত হতে হবে পরিশুদ্ধ। লোক দেখানো বা নাম কামানোর জন্য তা করা যাবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিলো। তারা ওই বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের স¤প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত ২৬৪)।

আল্লাহপাক যাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, এ সম্পদের মালিক একাই সে না। এ সম্পদে নিঃস্ব ও অসহায়দেরও হক রয়েছে। সূরা আয্যারিয়াতের ১৯ নাম্বার আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদে নিঃস্ব ও অসহায়দের অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ আমরা যা দান করি, কোরআনের দৃষ্টিতে তা দয়া নয়; তা অসহায়দের অধিকার বা হক্কুল ইবাদ। আপনি যখন দান করেন, তখন আপনি সৃষ্টির অধিকারকেই সম্মান করেন। আর আল্লাহর সৃষ্টিকে যে সম্মানিত করে স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সকলের হক রয়েছে।’ (সূরা: মাআরেজ, আয়াত: ২৪-২৫)।

অসংখ্য হাদিসেও দান সদকার ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে। গোপনে দান করার ব্যাপারে হাদিসে অধিক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। গোপনে দানকারী কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে, নবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হচ্ছে, ‘এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দান-সদকা গুনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। নবী (সা.) বলেন, ‘হে কাব বিন উজরা! নামাজ (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, রোজা ঢাল স্বরূপ এবং দান-সদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।’ (আবু ইয়ালা, সনদ সহীহ)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
পাবেল ১৩ মে, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি দান করার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
তফসির আলম ১৩ মে, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
লেখাটির জন্য ইনকিলাবকে অনেক ধন্যবাদ
Total Reply(0)
আলী আকবর ১৩ মে, ২০২০, ২:৪৪ পিএম says : 0
আমাদের সবার উচিত এই কথাগুলো ফলো করা। আর ইনকিলাবকে ধন্যবাদ,এরকম লেখা পাবলিশড করার জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন