শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইতিকাফের বিধান

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইতিকাফ একটি বরকতময় ইবাদত। ইতিকাফ কোরআন, হাদিস ও রাসূল (সা.)-এর ধারাবাহিক আমল দ্বারা প্রতিপাদ্য বিষয়। ইতিকাফ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিভৃতবাস, বিরত থাকা, অবস্থান ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় নিয়্যাতসহ মসজিদে বা গৃহ প্রকোষ্ঠে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কেবলমাত্র ইবাদত বন্দেগির উদ্দেশে নিজেকে ব্যাপৃত রাখা। আল কোরআনের নয়টি স্থানে ইতিকাফের বর্ণনা স্থান লাভ করেছে। যথা : (১) সূরা আল আরাফের ১৩৮ নং আয়াতে; (২) সূরা হজের ২৫ নং আয়াতে; (৩) সূরা ত্বহা-এর ৯৭ নং আয়াতে; (৪) সূরা বাকারাহ-এর ১৮৭ নং আয়াতে; (৫) সূরা আম্বিয়া এর ৫২ নং আয়াতে; (৬) সূরা বাকারাহ এর ১২৫ নং আয়তে; (৭) সূরা ত্বহা এর ৯১ নং আয়াতে; (৮) সূরা শোয়ারা এর ৭১ নং আয়াতে এবং (৯) সূরা আল ফাতহ-এর ২৫ নং আয়াতে।

আর সকল হাদিসের গ্রন্থে ইতিকাফ সংক্রান্ত অধ্যায় সংযোযিত আছে এবং বহুসংখ্যক হাদিসে ইতিকাফের কথা আলোচিত হয়েছে। যেমন- (ক) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। (সহীহ বুখারি : ১৯২১; সহীহ মুসলিম : ১১৭১)। (খ) হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তার স্ত্রীগণ তার পরবর্তীতে ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারি : ১৯২২; সহীহ মুসলিম ১১৭২)। (গ) হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানে দশ দিনের ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিনের ইতিকাফ করেছিলেন। (সহীহ বুখারি : ৩/২০৪৪)।

ইতিকাফ সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ। ইতিকাফ মহান ইবাদত। বান্দাহ এর মাধ্যমে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ বৈধ, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত হয়, কিন্তু জুমা হয় না। ইতিকাফকারী মানবিক প্রয়োজনে এবং জুমার নামায আদায় করার জন্য জামে মসজিদে যেতে পারবে। এ জন্য তার ইতিকাফ নষ্ট হবে না। তবে জামে মসজিদে ইতিকাফ করাই উত্তম। (লাজনায়ে দায়েমা : ফাতাওয়া নং ৬৭১৮)। মহিলাগণ গৃহপ্রকৌষ্ঠে নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন, যা নির্জনতা লাভের জন্য উপযোগী। ইতিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফের স্থল থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। হযরত আয়েশা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ইতিকাফ করতেন, তখন প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না। (সহীহ বুখারি : ১৯৪১; সহীহ মুসলিম : ২৯৭)। ইতিকাফকারী রোগী দেখা অথবা জানাযায় হাজির হবে না। (শরহুল বুখারী : ইবনে বাত্তাল; ৪/১৬৬) ইতিকাফের অপর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে- শবে কদর তালাশ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি লাইলাতুল কদর দেখেছি, কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি অথবা আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব, তোমরা তা শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। (সহীহ বুখারি : ১৯১২; সহীহ মুসলিম : ১১৬৭)।

মোটকথা, ইতিকাফ পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের আমলেও ছিল। তবে, বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফের যে শিক্ষা আমাদেরকে প্রদান করেছেন, তেমনটি আর কোনো কালেও ছিল না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন