শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা, তীব্র রোদে ভোগান্তিতে গ্রাহক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২০, ৩:০২ পিএম

করোনায় টালমাটাল বিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউনের মধ্যে তাদের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোদমে চালু রেখেছে। এছাড়া তাদের অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশে চিত্রটা ভিন্ন। সামনে ঈদ তারপরও সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলায় দীর্ঘ লাইনের ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। রোজা রেখে তীব্র রোদের মধ্যে রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। রোববার (১৭ মে) মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। মতিঝিলে উত্তরা ব্যাংকের লোকাল ব্রাঞ্চের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকা কামরুন্নাহার জানান, সকাল ১১টায় এসেছেন। লাইনে দাড়িয়ে আছেন। দেড়টা বেজেছে অথচ এখনও ব্যাংকের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। রাজধানীর বেশীরভাগ ব্যাংকেই দেখা যায় এমন দীর্ঘ লাইন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের উধ্বর্তন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, একটি ব্রাঞ্চে সর্বোচ্চ ৫ জন কর্মকর্তা অফিস করছেন। অধিকাংশ ব্যংাকের ছোট ব্রাঞ্চে ৩ জন কর্মকর্তা দিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। অনেক ব্যাঞ্চ আবার সপ্তাহে মাত্র ১ দিন বা দুই দিন খোলা। তাই যেসব শাখা খোলা আছে ওই শাখায় সব গ্রাহকের ভীড়। তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে ঈদের সময়ে এই সার্ভিস দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রাহকরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। একই সঙ্গে গ্রাহকদের ভোগান্তি দেখে খারাপ লাগছে। তাই এই সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।

সূত্র মতে, ঈদ কেন্দ্রিক মানুষের ব্যাংক থেকে ব্যাপক অর্থ উত্তোলন এবং আমানত রাখার পরিমান বেড়েছে। করোনার মধ্যেও কষ্ট করে হলেও রোজার মাসে ঈদ কেন্দ্রিক প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যা অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। এতে দেশে বেড়েছে অর্থের প্রবাহ। কিন্তু এই সময়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার অন্যতম নাম ব্যাংকিং খাত গ্রাহকদের হতাশ করেছে। পাচ্ছেন না স্বাভাবিক সেবা। অথচ অন্যান্য ঈদের আগে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও ব্যাংক খোলা রাখতে হতো। একই সঙ্গে ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা রাখা হয়। বর্তমানে গত প্রায় দুই মাস ধরে সীমিত পরিসের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরণের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রুটিন কাজ টাকা দেওয়া-নেওয়ায় ব্যস্ত আছে ব্যাংকাররা। তাও আবার সীমিত সংখ্যক কর্মচারী এবং অধিকাংশ শাখাই বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই বেড়েছে গ্রাহকদের ভোগান্তি।

টিকাটুলী মোড়ের একটি বেসরকারি অফিসের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা জানান, হাটখোলা রোডে অবস্থিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে তার অফিসের কমকর্তা-কর্মচারীদের স্যালারী হিসাব। ঈদের সময় বেতন-বোনাস দিবেন কিন্তু তিনি জেনেছেন এই সপ্তাহেই শাখা খোলা হবে না। এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। স্যালারী হিসাব হওয়ায় অন্য ব্যাংকেও যাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, ঈদের সময়ে অন্তত শাখা গুলো খোলা রাখা দরকার।

রাজধানীর মহাখালীতে গিয়ে দেখা গেছে সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়া স্বত্তেও অধিকাংশ ব্যাংকের শাখা বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরা, বনানী ও গুলশানে যেতে হচ্ছে এখানকার গ্রাহকদের। রবিউজ্জামান নামের একজন গ্রাহক জানান, গ্রাহকদের ভীড়ে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আছেন। সকাল ১০ টায় কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছেন দেড়টার দিকে। রোজা রেখে তীব্র রোদের মধ্যে সাড়ে ৩ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে সেবা পেয়েছেন। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাংক সীমিত পরিসরে খোলা রাখা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এতে শুধু বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রীতাই নয়; গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ছে। কারণ শাখা কম খোলা থাকায় সবাই নির্দিষ্ট শাখায় ভীড় করছে। এতে গ্রাহক ভোগান্তির পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে। মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যাংকের কর্মকতারা আগে থেকেই যথেষ্ট জায়গা নিয়ে বসেন। তাদের ব্যাকিং কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ আছে। যথাযথ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আগে অর্থনীতি সচলে এবং দেশের স্বার্থে সকল ব্যাংকের ব্রাঞ্চ খুলে দেওয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন