বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

একটাই পথ, সতর্কতা

মীর আব্দুল আলীম | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

আমরা সতর্ক নই বললেই চলে। হাটবাজার পুরোদমে চলছে। গার্মেন্ট, কলকারখানা জমজমাট। বেতন-ভাতার আন্দোলনও তুঙ্গে। মসজিদে, মসজিদে মানুষ। জনসমাগম সবখানেই হচ্ছে। আগের চেয়ে বাজারে এখন বেশি মানুষ। মানুষের হুঁশ নেই। টাটকা তরিতরকারী, মাছ, মাংস কিনতে মানুষ বাজারে ছুটছে। চায়ের দোকানের আড্ডাও বেশ জমছে। লোক জড়ো করে দান-খয়রাত, ফটোসেশন কোনটাই বন্ধ নেই। অন্ধ মানুষ, বন্ধ বিবেক। পত্রপত্রিকায় দেখছি, কর্মহীন মানুষ কোথাও কোথাও খোলা মঠে জুয়ার আড্ডায়ও মেতেছে। মানুষ যেন আগের চেয়ে বেশ সচল।
হাস্যকর লকডাউন আর কোয়ারেন্টাইন চলছে। লকডাউনে মানুষ এক জেলা থেকে আরেক জেলায়ও যাচ্ছে। পঙ্গপালের মতো ট্রাক আর কাভার্ডভ্যানে মানুষ ঢাকায় আসছে। আমরা কতইনা অসভ্য। অসচেতনতা আর কাকে বলে? যে দেশে জেল জরিমানা দিয়ে মানুষ বশ করা যায় না, সেখানে স্বেচ্ছায় বাসগৃহের কোয়ারেন্টিনের কথা শুনি। করোনাভাইরাস নেগেটিভ আর পজেটিভের দৌড়ঝাপ মুখের কথায় বন্ধ করা অন্তত এদেশে অসম্ভব।
ঢাকা শহরেতো ক’দিন ফাঁকা ছিলো। যানজট ছিলো না। এখন কোথাও কোথাও আবার ট্রাফিক জ্যাম শুরু হয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো রমজানকে ঘিরে খুলেছে। সুপার মার্কেটগুলোও কিছু খুলেছে। সারাবিশ্ব যেখানে সতর্ক সেখানে আমাদের দেশে সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক। পরে হয়তো বুঝতে পারব কতটা ক্ষতি হলো। আল্লাহ মাফ করুন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সার্স, ডেঙ্গু বা ইবোলার মতো নানা ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাসের খবর মাঝে মাঝেই সংবাদ মাধ্যমে আসে। এমন মহাবিপদ থেকে আল্লাহ আমাদের উদ্ধারও করেন। ইসলাম ধর্মে এসব রোগ-বালাইয়ের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আল-কোরআনে মহামারী হলে যে যার স্থানে থাকার কথা বলা আছে। অন্য ধর্মেও রোগের ক্ষেত্রে সতর্ক করা আছে। প্রয়োজন না হলে ক’দিন নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, অন্যের জন্য ঘর থেকে বাহিরে না যাওয়াই ভালো। প্রয়োজন থাকলে কী আর করা! মনে রাখবেন, এ সমস্যা কিন্তু অনেক দিন ধরে থাকবে না। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেনই। কিছুদিন যারা সতর্ক থাকতে পারবেন, সবকিছু ঠিকঠাক মেনে চলবেন তারা হয়তো এ বিপদ থেকে অনেকটা মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে আমরা বেশিই অসাবধান মনে হয়। কোনো কিছুকেই গুরুত্ব দিতে চাই না কখনো। কোনো কিছু মানতে চাই না। এ অবস্থায় কি আমাদের রক্ষা হবে?
করোনায় করুণা করছে না কাউকে। সবচেয়ে ধনি দেশগুলো করোনায় কুপকাত। উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণা, কোনটাই কাজে আসছে না। মানুষ মরছে প্রতিদিন। আমাদের আরও প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা কতটা প্রস্তুত? আর কতটা সতর্ক? সতর্কতা খুবই কম। মানুষ কথা শুনতেই চায় না। সরকারের নিয়মের তোয়াক্কা করে না। রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক প্রস্তুতি থাকলেও জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি খুব কম। আমাদের জনবল খুব কম। সরঞ্জামও কম। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তাতে সামাল দেয়া কঠিনই হবে। এখনই তা হচ্ছে।
সতর্কতার অভাবে করোনাভাইরাসে সারাদেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনেক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। দিনদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে চিকিৎসক আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে চিকিৎসক মারা যাবার ঘটনাও ঘটছে। অরক্ষিত অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এভাবে চিকিৎসকরা আক্রান্ত হলে রোগীদের কী হবে? হয়তো সামনে সুসংবাদ নেই। ভয়াবহ দিন আসছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর মিছিলে অসংখ্য মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এসময় চিকিৎসকদেরই সবচেয়ে দরকার। তাই আগে চিকিৎসকদের বাঁচান। চিকিৎসক বেঁচে থাকলে রোগীদের বাঁচানো যাবে।
মানসম্মত এবং সময় মতো সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) পায়নি আমাদের চিকিৎসকরা। শুরুতেই এ বিষয় নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকদের যে পিপিই দেয়া হচ্ছে তা মানসম্মত নয়। চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিৎ না হলে; চিকিৎসক, নার্স অসুস্থ হয়ে পড়লে করোনাভাইরাস চিকিৎসাসহ সাধারণ চিকিৎসায় সংকট তৈরি হবে। চিকিৎসক বাঁচলেইতো রোগীদের বাঁচানো যাবে। আগে চিকিৎসকদের পূর্ণ সুরক্ষা দরকার। তাঁরা সুস্থ থাকলে, তাঁদের মনোবল ঠিকঠাক থাকলে রোগীদের পূর্ণ চিকিৎসা মিলবে, তা নাহলে নয়। করোনাভাইরাসের রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে দিনদিন যেভাবে চিকিৎসকরাই আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন তাতে চিকিৎসকসমাজে আতংক তৈরি হয় বৈকি! ইতোমধ্যে হয়েছেও তা। সে কারণে চিকিৎসকদের সাথে জনগণ এবং সরকারে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ না করায় এবং মন্ত্রণালয়ের নানা গাফিলতির কারণে চিকিৎসাসেবায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। তারা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেক বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। শুধু তাই না সুরক্ষা পোশাক না দিয়ে উল্টো হুমকি দেয়ার কারণে অনেকের মনবল ভেঙ্গে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন গতি দিয়েও তা চাঙ্গা করা যাচ্ছে না। বিষয়টি যথেষ্ট ভাবনার বটে!
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের যুদ্ধে নামতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। ঘুরতে না যাওয়ার, বেশি মানুষ এক জায়গায় না হওয়ার, চায়ের দোকান, বেশি বেশি বাজার করা, আড্ডাবাজি বন্ধ করতে হবে। করোনা নামক শত্রæ এদেশে ঢুকে পড়েছে। সবাই সতর্কতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমরা হয়তো এ যুদ্ধে হেরে যাব। আসুন, সবাই সতর্ক হই। যেহেতু করোনার ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি সেজন্য সতর্কতার বিকল্প নাই। এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে। যুদ্ধ জয়ের জন্য আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত হলে চলবে না। দিশেহারা হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। করোনা পজেটিভ কিংবা উপসর্গ হলেই ভয়ে কুকড়ে মুকড়ে যাবেন না। করোনা পজেটিভ মানেই মৃত্যু নয়। আপনি নিয়মকানুন মেনে চললে ঠিকই সেরে উঠবেন। মনে রাখবেন, ভাইরাস থেকে রক্ষার একটাই পথ, সতর্কতা।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন