বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ বাংলাদেশেও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। দেশব্যাপী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে রাজধানীতে প্রবেশ এবং বের হওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকেও কড়াকড়ির নির্দেশনা দেয়া হয়। পুলিশের কড়াকড়ির মধ্যেই রাজধানী থেকে বের হওয়ার সবগুলো মুখেই ঢল নেমেছে ঘরমুখো মানুষের। ঈদ উদযাপন করতে সামাজিক দূরত্ব ভেঙে ঘরে ফিরতে মানুষ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও পুলিশ কঠোর আবার কোথাও পর্দার আড়ালে কিছু নিয়ে মানুষকে ঢাকা ছাড়ার পথ করে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়া মানুষের ঢল নেমেছে পথে পথে। মানিকগঞ্জের ফেরিগুলো বন্ধ রাখা হলেও হাজার হাজার মানুষ নদীঘাটে অপেক্ষা করছেন। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটেই মানিকগঞ্জ যাচ্ছেন। সড়ক-মহাসড়কে পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ট্রাকে চেপে মানুষের ঢাকা ত্যাগ করার দৃশ্য ছিল দেখার মতো।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মুখে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, কাঁচপুর, সাইনবোর্ড, বাবুবাজার ব্রিজ, কল্যাণপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, উত্তরা হাউস বিল্ডিং, টঙ্গী, আশুলিয়া, আবদুল্লাহপুর, ঢাকা মাওয়া সড়কে দেখা গেছে একই চিত্র।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের দেয়া ১৪ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাজধানী ঢাকার সবগুলো বের হওয়ার পয়েন্টে পুলিশকে সক্রিয় দেখা গেলেও মানুষের নানান যৌক্তিক-অযৌক্তিক কারণে অনেকটা অসহায় অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা। তবে যাত্রাবাড়ি টু মাওয়া সড়কের প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুতে দেখা গেল দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্য টাকার বিনিময়ে মানুষকে ঢাকা ত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তবে গাড়ি চলাচল বন্ধে পুলিশের যেসব চেকপোস্ট কঠোর সেখানে ঘরে ফিরতে ব্যাকুল মানুষ সেই চেকপোস্টগুলো হেঁটে পেরিয়ে যাচ্ছেন।
গত ১৪ মে মন্ত্রীপরিষদ থেকে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করে সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হয়। এতে বলা হয় সাধারণ ছুটি ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় কেউই কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এই সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল এবং মহাসড়কে মালবাহী/জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ মাঠ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ঈদ উপলক্ষে ও সরকার ঘোষিত বর্ধিত ছুটি উদযাপনের জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই হতে দেয়া যাবে না।
গণপরিবহন চলাচল বন্ধের মধ্যেই রাজধানী থেকে বের হওয়া পণ্যবাহী ফিরতি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, এমনকি মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে মানুষ। ঢাকা থেকে বের হওয়ার সবগুলো পয়েন্টেই লাখো মানুষের ঢল নামে। সাহরির পর থেকে যেন পুলিশি কোনো বাধায় আটকানো যাচ্ছে না মানুষকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন থামিয়ে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাস্তবায়নেও আইজিপি প্রতিটি ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর হতে বলেছেন। সে আলোকে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবুও নানা অজুহাতে বের হচ্ছে মানুষ।
রাজধানীর গাবতলী, আমিনবাজার ব্রিজে চেকপোষ্টে গতকাল দেখা যায় গাবতলী বাস টার্মিনালের কাছে আমিনবাজার ব্রিজে ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ। ফলে আমিনবাজার ব্রিজ থেকে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত যানজট। ঘরমুখী মানুষ দলে দলে পায়ে হেঁটে ঢাকা ছাড়ছেন।
একই অবস্থা উত্তরা, টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুর সড়কে। যানবাহন না থাকায় কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে পুলিশের চেকপোস্ট পার হচ্ছে ঘরমুখী মানুষ। টঙ্গী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টঙ্গী সেতু দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা গাজীপুর আসছেন। আবার ঢাকায় ফিরছেন। এই পোশাক শ্রমিকদের ভিড়ের মধ্যে গ্রামমুখী মানুষ মিশে গিয়ে টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা ছেড়েছে।
আব্দুল্লাহপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত ঢাকা মহানগর ট্রাফিক উত্তর বিভাগের এডিসি গোবিন্দ চন্দ্র পাল সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া কোনো যানবাহনকে আমরা চেকপোস্ট পার হতে দিচ্ছি না। কঠোরভাবে মেইনটেইন করা হচ্ছে। পায়ে হাঁটা যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করে ফিরিয়ে দিচ্ছি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া বেং যানবাহন আটকে দেয়ার দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সামাজিক দূরত্ব ভেঙে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন