শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সুপার সাইক্লোন আম্পান জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আছড়ে পড়ছে আতংকে উপকুলের কোটি মানুষ

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২০, ৬:২৩ পিএম

সুপার সাইক্লোন আম্পান-এর ভয়াবহতা নিয়ে দক্ষিণ উপকূলের কোটি মানুষ একটি নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করার পরে এ ঝড় ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপে আঘাত হানতে শুরু করেছে। পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও ভোলার উপকুলভাগে বিকেল ৫টার দিকে বাতাসের তীব্রতা ৫৫-৬০ কিলোমিটারে উঠেছে। জোয়াড়ে ভর করে আসা আম্পনের প্রভাবে সমগ্র উপকুলভাগে নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেড়েছে। বিদ্যু’ বিহীন সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াল ঝড়ের আতংক নিয়ে আধার নামছে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। বিকেল ৫টা নাগাদ কোলকাতাতে বাতাসের গতিববেগ ১১০ কিলোমিটারে উঠেছে বলে আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছে।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত আম্পান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে সুন্দরবন হয়ে উজানে চলছে। বিকেল ৪টার পরে সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট অমাবশ্যার ভরা কাটালের যে জোয়ার শুরু হয়েছে, তাতে ভর করেই আম্পান স্বÑমূর্তিতে আছড়ে পড়ছে। রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত এ জোয়ারের পূর্ণতা অব্যাহত থাকবে। আর এ সময়েই আম্পান ভারতÑবাংলাদেশের মধ্যবর্তী সুন্দরবনে আছড়ে পড়লে ক্ষতির পরিমান বাড়বে। যদিও প্রকৃতিক ঢাল সুন্দরবন সব প্রতিহত করতে প্রস্তুত। আরো সোয়া ২ লাখ একর সৃজিত বনভুমিও উপকুল আগলে আছে।

বিকেল ৫ টায় আম্পনের অবস্থান ছিল কলাপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে। তবে আশংকাকে সত্যি প্রমানিত করে ভরা জোয়ারে সন্ধ্যার পরে আম্পানের আঘাত শুরু হলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে ত বলা কঠিন। এরপরেও আশার আলো রয়েছে বাংলাদেশের জন্য। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ায় ইতোমধ্যে আম্পানের তীব্রতা ২শ কিলোমিটারের নিচে নেমেছে। মূল ভু-খন্ড ও সুন্দরবনে আছড়ে পড়লে তীব্রতা আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সুন্দবন ছাড়িয়ে পূর্বের মূল ভু-খন্ডে আছড়ে পড়লে আম্পনের তীব্রতা দেড়শ কিলোমিটারের আরো নিচে নামবে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ের তীব্রতা সোয়াশ’ কিলোমিটারেরও নিচে নামতে পারে।
ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৩ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০ লাখ নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নিরাপদ আশ্রয় লাভ করেছে। তবে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন্দ্রগুলোর এক ছাদের নিচে আশ্রয় নিতে গিয়ে করোনা ভাইরাসের আতংক ও সংক্রমনের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আতংকিত উপকুলবাসীর অনেকেই গবাদীপশু ও ঘরবাড়ী ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। বরগুনার ৫৮১ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ, পটুয়াখালীর সহ¯্রাধীক আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ১০ হাজার এবং ভোলার ১ হাজার ১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ২০ হাজারের মত নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধকে আশ্রয় দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট-এর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর স্বেচ্ছসেবকগন।

তবে রাত নামার সাথে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এগিয়ে আসার দুঃশ্চিন্তায় উপকুলবাসী। এ ঝড় দিনে ভাটির সময় আঘাত করলে ক্ষতির পরিমান অনেকটাই হ্রাস পেত। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে প্রায় ১ লাখ হেক্টর বোরা ধান কাটতে না পারার সাথে গত এক সপ্তাহে যে আরো ১ লাখ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, তার বেশীরভাগই মাড়াই সম্ভব না হওয়ায় কৃষকের কপালের ভাজ গভীর হচ্ছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হাজার হাজার জেলে তাদের নৌকা ও ট্রলার নিয়ে উপকুলের গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, পাড়েরহাট, পাথরঘাটা, আলীপুর ও মহিপুর, চর মোন্তাজ, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, সোনার চর, পাতার চর এলাকার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে। দুদিন আগে থেকে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় বেশীরভাগ ট্রলারই এখন নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেছে।

আবহাওয়া বিভাগের মতে, দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের জোয়ারে ভর করে আম্পান-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরিশাল,পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ল²ীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও নোয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। ইতোমধ্যে উপকুলভাগে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ঝড়-বৃষ্টির সাথে ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড় হেরিকেন ও সিডরের মত উচ্চতার জলোচ্ছাসের আশংকা রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে হিরন পয়েন্ট, বলেশ^র, বিষখালী, তেতুলিয়া ও মেঘনায় বঙ্গোপসাগর মোহনা ও সন্নিহিত বিশাল জনপদে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে প্রকৃতির রুদ্র রোশের শিকার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বিগত দুশবছরে নানা দূর্যোগে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। আশ্রয়হীন হয়েছে আরো অন্তত কোটি মানুষ। বিনষ্ট হয়েছে কয়েক লাখ কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ। বার বার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উপকুলীয় এলাকা। ফলে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকা ও এখানে বসবাসরত মানুষের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি বার বারই থমকে গেছে। উপকুলীয় এলাকার মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হলেও এটিই যেন তাদের নিয়তি।
আর এ বাস্তবতা নিয়ে আরেকটি সুপার সাইক্লোন আম্পান আঘাত হানছে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায়। এর ক্ষতি কতটা হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবারের সূর্যোদয় পর্যন্ত।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন