বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্ভোগ ৩ জনের মৃত্যু

উপকূলজুড়ে আতঙ্ক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

সুপার সাইক্লোন আম্পান এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে থেমে থেমে প্রচন্ড বেগে দমকা বাতাস বইছে এর সঙ্গে রয়েছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি এবং বাতাস উপেক্ষা করে মানুষ ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রোজাদার বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুরা। প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রাম। চট্টগ্রাম, ভোলা ও পটুয়াখালীতে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ থেকে জীবন রক্ষায় আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে আসা মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বেশির ভাগ কেন্দ্র ভাঙাচোরা। দরজা নেই, জানালা নেই। নেই টয়লেট, পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা। উপকূল ও চরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রোজাদার বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুরা। করোনা মহামারী আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা লোকজন চরম উদ্বেগ-শঙ্কায় রয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সঙ্কটও আছে। আছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।

নগরীর পতেঙ্গায় এলাকায় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ তদারকি করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং পাকাবাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে, চট্টগ্রামের স›দ্বীপে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. সালাউদ্দিন (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বরিশাল : পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও ভোলার উপক‚লভাগে বিকেল ৫টার দিকে বাতাসের তীব্রতা ৫৫-৬০ কিলোমিটারে উঠেছে। জোয়াড়ে ভর করে আসা আম্পনের প্রভাবে সমগ্র উপকুলভাগে নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেড়েছে। বিদ্যু’ বিহীন সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াল ঝড়ের আতংক নিয়ে আধার নামছে।

ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৩ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০ লাখ নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নিরাপদ আশ্রয় লাভ করেছে। তবে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন্দ্রগুলোর এক ছাদের নিচে আশ্রয় নিতে গিয়ে করোনা ভাইরাসের আতংক ও সংক্রমনের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে প্রায় ১ লাখ হেক্টর বোরা ধান কাটতে না পারার সাথে গত এক সপ্তাহে যে আরো ১ লাখ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, তার বেশীরভাগই মাড়াই সম্ভব না হওয়ায় কৃষকের কপালের ভাজ গভীর হচ্ছে।
খুলনা : ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মোংলার পশুর নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫/৬ ফুট পানির উচ্চতা বেড়েছে। এছাড়া বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষ।
পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় ‘আমফানের’ প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছীন্ন কমপক্ষে ৮ টি গ্রামের সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, পানিবন্দী ঐ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে ইতোমধ্যে নিকটস্থ সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আরোও জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে,ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আসা হয়েছে।

এছাড়াও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের সিপিপি টিম লিডার সৈয়দ মো. শাহ্আলম (৬০) তার দুই সহযোগী নিয়ে স্থানীয় হাফেজ প্যাদার খালের অপর পাড়ের লোকজনকে সড়িয় আনতে প্রচারণা কাজে খাল পাড় হয়ে যাওয়ার সময় প্রচন্ড বাতাস ওপানির চাপে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় তার সহযোগী ছেলে ও চাচাতো ভাই সাতড়িয়ে তীরে উঠতে পাড়লেও শাহআলমকে মৃত উদ্বার করা হয়।

চরফ্যাশন : ঘূর্ণিঝড় আম্ফান চরফ্যাশন উপজেলা একনারী মারাত্মক জখম ও বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় সাইক্লোন ‘আমফান’ সর্বোচ্চ ২৪৫ কিলোমিটার গতির ঝড়ো বাতাসে চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেন্ডিগাছ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে ৭০বছরের বৃদ্ধ সিদ্দিক ফকির মারাত্মক জখম হয়। তাকে তাৎক্ষণিক চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসকেরা তার অবস্থা খারাপ দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।

ঝালকাঠি : করোনা দুর্যোগের মধ্যেই সুপার সাইক্লোন আম্ফান নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী বেষ্টিত উপক‚লীয় জেলা ঝালকাঠির বাসিন্দারা। সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। নদী উত্তাল থাকায় ছোট বড় সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।

সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপক‚লীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় থেমে থেমে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সুন্দরবন উপক‚ল তৎসংলগ্ন নদ-নদী। জোয়ারের পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। যত সময় বেশী হচ্ছে ততই তীব্রতর বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। ঘূর্ণিঝড় আমফানের কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষ ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন