বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মায়ের মতো আগলে রাখল

উপক‚লবাসীকে রক্ষায় বুক পেতে দেয় সুন্দরবন

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

মায়ের মত নিঃস্বার্থভাবে এবারও সুন্দরবন উপকুলবাসীকে আগলে রাখল ঘুর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল থেকে। এই সেই সুন্দরবন যে সিডর, আইলা ও বুলবুল কারো কাছেই হার মানেনি। অপরাজেয় এই বনের কাছে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় মাথা নত করেছে।

সূত্রমতে, এক যুগ আগের সিডরের ঝড় গিয়েছিল সুন্দরবনের উপর দিয়ে, যা রক্ষা করেছিল উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। বুলবুলের ক্ষেত্রের ঢাল হয়ে ছিল সুন্দরবন। ঠিক এবারও ঘুর্ণিঝড় আম্পান থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় বুক উঁচু করে ঢাল হয়ে দাড়িয়ে আছে সুন্দরবন।

সুন্দরবন কতবার যে ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে রক্ষায় এবারও বুক পেতে দিল সুন্দরবন।
রূপ কথার দৈত্যের মত সুন্দরবন উপকুলকে আগলে রেখেছে সবসময়। বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ এই ফরেষ্টটি নিজে ক্ষত বিক্ষত হলে উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি।

গত বুধবার তীব্র বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত ও উঁচু জলোচ্ছ¡াস নিয়ে উপকূলজুড়ে তাÐব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১১২ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে। প্রায় ৬ ঘণ্টা তাÐব চালিয়ে রাত ১২টার দিকে খুলনা জেলাকে অতিক্রম করেছে আম্পান। সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করার কারণে আম্পানের তীব্রতা বেশ কিছুটা কম হয়েছে।

সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির ইনকিলাবকে বলেন, অপরূপ বৈচিত্রের এই মায়ের মত বুক আগলে রেখে আমাদেরকে এবারও রক্ষা করে প্রমান করল সুন্দরবন আর মায়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মা যেমন নিস্বার্থবান সুন্দরবন ঠিক নিজে আহত হয়ে উপকুলবাসীকে বাচিয়ে দিল।
তিনি বলেন, ভারত থেকে আম্পান যে গতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তার প্রভাব সেভাবে পড়তে পারেনি বনের গাছপালায় এই ঝড় বাঁধা পাবার কারণে। ভারতের সুন্দরবনের অংশের চেয়ে বাংলাদেশ অংশে গাছ ঘন থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে।
প্রাথমিকভাবে বন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে গাছপালা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি।

বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, আম্পানের প্রভাব সুন্দবনের ভিতর এখন বহমান। এখনো বনের ভিতরে ঝড়ো হওয়া বইছে। আমফানে সুন্দরবনের গাছের ক্ষয়ক্ষতি এই মুহুর্তে পরিপূর্নভাবে নিরুপণ করা সম্ভব না হলেও মাঠ পর্যাযের বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সুন্দরবনের বিভিন্ন কমপারমেন্টালে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক সুন্দরী গেওয়া গরানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ভেঙ্গে তছনছ হয়েছে। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বেশি ছিলো। এতে সুন্দরবনের ভেতরে থাকা মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি ডুকেছে। এটাই বেশি ক্ষতি হয়েছে।

বন সংরক্ষক বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বুক পেতে দিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঝড়ের বেগ অনেক কমে গেছে যার কারণে আল্লাহর রহমতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Zillur Rahaman ২২ মে, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর আক্রমনে মানুষের মতো সুন্দরবনও মরিয়া হয়ে বুক পেতে প্রমান করলো, সেই আমাদের বিপদের সবচেয়ে বড় বিশ্বস্ত বন্ধু। সুন্দরবন এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঢালস্বরূপ বর্মন হিসাবে কাজ করেছে। সুন্দরবন আমাদের বিপদের বিশ্বস্ত বন্ধু এটা আবারও প্রমানিত হলো। এই বন না থাকলে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর আক্রমনে উপকূলে বড় ধরণের তাণ্ডব হতে পারতো বলে অনেকেই মনে করেন। শুধু ঘূর্ণিঝড় আম্পান´ এর ক্ষেত্রেই ঘটেনি। এর আগে সর্বসাম্প্রতিক ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বরে বুলবুল, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা মারাত্মক বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে আছড়ে পড়লেও সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে অনেক কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল; প্রাণহানিও হয়েছিল আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় দেয়ালের মতো কাজ করে সুন্দরবন। অথচ ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এ বনের অস্তিত্ব ক্রমেই বিপন্ন হচ্ছে। এ বন নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা বলছেন জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার অন্যতম শক্তি সুন্দরবন। অথচ তেলের ট্যাংক ডুবে বনের অভ্যন্তরের পানি, পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষিত হওয়া, চোরা শিকারি ও বনসংলগ্ন এলাকায় শিল্প-কারখানা নির্মাণের কারণে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলছে। আর এ বনের পাশে নির্মিতব্য রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া সুন্দরবন। এভাবে চলতে থাকলে একমাত্র প্রাকৃতিক বর্মন সুন্দরবন হারিয়ে যেতে বেশি দিন সময় লাগবে না। এজন্য সকলকে সচেতন হওয়া জরুরি। আসুন আমরা সুন্দরবন বাঁচাতে সচেতন হই, নিজে বাঁচি, সুন্দরবন বাঁচাই এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগে সে আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে রক্ষা করবে।
Total Reply(0)
Shariar Khan ২২ মে, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
সুন্দরবন আমাদের দেশে আল্লাহর নেয়ামত বরকত।
Total Reply(0)
Mohammad Aman Khan ২২ মে, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ, (শিরক হতে দুরে থাকি) হাজারো বচ্ছর আগে যদি এ জংল আল্লাহ স্রিষ্টি না করে রাখতেন তাহলে আজ হতে ৩০বচ্ছর আগেই কলকাতাও নিষচিরহ হয়েযেত। আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন। আলহামদুলিল্লাহ,
Total Reply(0)
Md Sharif ২২ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
দেশ রক্ষার এ বনকে ধ্বংস করার জন্য কতনা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।মাথাপেতে বুকপেতে দেশ রক্ষা করে যাচ্চে।
Total Reply(0)
Zohir Talukdar ২২ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
এই শুধু আল্লাহর গজব বললে উড়ানো যাবে না কারণ এই জ্বরের জন্য দায়ী আমাদের দেশের মানুষেরা যারা গাছগুলো কেটে ধ্বংস করে দিচ্ছে সুন্দরবনের বাঘ দেশের আনাচে-কানাচে এখনো সময় আছে গাছ লাগান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে
Total Reply(0)
Minhaj Masum ২২ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
বরাবর ঝড়ের সামনে সুন্দরবন বুক পেতে দাড়িয়ে থাকে। সেই সুন্দরবন কে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে হত্যা করা হবে। তখন কে বুক পেতে দিবে? এখনো সময় আছে সজাগ হওয়ার।
Total Reply(0)
Adnan Afcher ২২ মে, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
আর এই সুন্দরবন কে ডংস করতে কতই না পরিকল্পনা চলতেছে আল্লাহ কবে আমাদের এই জাতির ধ্যানধারণার পরিবর্তন হবে
Total Reply(0)
Tanziul Islam ২২ মে, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
সুন্দরবন নয়, বলুন সুন্দরবনের সৃষ্টিকর্তা আমাদের বাঁচিয়েছেন! সৃষ্টির নয়, স্রষ্টার প্রশংসা করুন!
Total Reply(0)
Tanziul Islam ২২ মে, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
সুন্দরবন নয়, বলুন সুন্দরবনের সৃষ্টিকর্তা আমাদের বাঁচিয়েছেন! সৃষ্টির নয়, স্রষ্টার প্রশংসা করুন!
Total Reply(1)
এক পথিক ২২ মে, ২০২০, ১১:০২ এএম says : 0
একদম হক কথা বলেছেন ভাই; বন তো একটি মাধ্যম মাত্র, এটা নিজে কিছু করতে পারে না। রক্ষা করেছেন মহান আল্লাহ; আসুন আমরা তাঁর কাছে শুকরিয়া জানাই।

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন