বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকার করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না-বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২০, ২:০২ পিএম | আপডেট : ২:১২ পিএম, ২৩ মে, ২০২০

সরকার করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেনা বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে মনে হয় পথ হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তহীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ সম্পর্কে গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে জাতির উদ্দেশ্যে ভিডিও লাইভে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা প্রদান করেছেন। আমি মনে করি এটি দেশের স্বার্থেই গুরুত্ব সহকারে সেটি ভাবা উচিত। কারণ সরকার নিজেরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেনা, অপরদিকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তারা নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে সেটি গ্রহণ করার মতো মানসিকতাও তাদের নেই। সবকিছুটাই ‘আমিত্ব’ জাহির করতে গিয়ে জনগণকে অসহায় করে ফেলা হয়েছে। শনিবার (২৩ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসের মেডিসিন আবিষ্কার না হওয়ায় প্রতিটি দেশ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রতিদিন বেশিসংখ্যক মানুষকে টেস্টের আওতায় এনে করোনা উপসর্গ থাকলে আগেভাগেই আইসোলেশনে নেয়া কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকেই অন্যতম সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে ঠিক উল্টো চিত্র। দেশের মানুষ নিজ উদ্যোগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা এবং করোনা চিকিৎসা করাতে গিয়েও নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, বেশী সংখ্যক মানুষকে টেস্ট করলে বেশি রোগী শনাক্ত হওয়ার কারণেই হয়তো অধিক সংখ্যক মানুষকে টেস্টের আওতায় আনা হচ্ছেনা।

তিনি বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, এটা এখন সরকারকেই স্পষ্ট করতে হবে, তারা কি সক্ষমতা না থাকায় অধিকহারে করোনা টেস্ট করছেনা নাকি এর পেছনে সরকারের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। নানা অজুহাতে করোনা টেস্ট না করে কিংবা টেস্ট করতে গড়িমসি করে সরকার হয়তো করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা কম দেখিয়ে মেকি সাফল্য লাভ করতে চায়। কিন্তু এর পরিণতি হতে পারে হিতে বিপরীত। দেশ এবং জনগণের স্বার্থে সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে নিজেদের কাগুজে সাফল্য দেখানোর চেয়ে সরকারের জন্য বেশি জরুরী করোনা ভাইরাস টেস্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। কারণ, গ্লোবাল ভিলেজের এই সময়ে করোনা ভাইরাস টেস্টের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে ভবিষ্যতে নাগরিকদেরকে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশের শ্রম বাজারে থাকা না থাকার বিষয়টিও অনেকটাই নির্ভর করবে সরকার কিভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে তার ওপর। তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে সরকার যতই নিজেদের সাফল্য জাহির করুক, কিন্তু দলে দলে কূটনীতিকরা কেন ঢাকা ছাড়লো এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মহামারী করোনাকালে দেশের অবস্থা, করোনা মোকাবেলায় সরকারের করণীয়, মানুষের অসহায়ত্ব, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তা-ব এবং সারাদেশে অসহায় মানুষের জন্য বিএনপি’র অব্যাহত মানবিক সহায়তা কর্মসূচিসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, বর্তমানে দেশের কোটি কোটি পরিবারের অসংখ্য মানুষের দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতি উপেক্ষা করে এক মুঠো খাবারের দাবিতে অসহায় মানুষ নেমে আসছে রাজপথে। বাড়ছে বুভুক্ষ মানুষের হাহাকার। দেশে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতেও সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ত্রাণের চাল চুরি, নানা কৌশলে অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা আত্মসাৎ, সরকারিভাবে গরিব কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য করা তালিকাতেও চলছে জালিয়াতি। মানুষের এমন ঘোর বিপদকালেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চুরি-দুর্নীতি প্রমাণ করে, এই ‘দল এবং সরকার’ এখন সম্পূর্ণভাবে লুটেরা পরিবেষ্টিত।

রিজভী বলেন, দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, উৎসবের পরিবর্তে এবারের ঈদ উদযাপিত হতে যাচ্ছে এক বেদনাবিধুর পরিবেশে। একদিকে করোনা ভাইরাস কিংবা আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অপরদিকে ‘ত্রাণ চুরি’ গরিব ও অসহায়দের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অর্থ নিয়ে জোচ্চুরি, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত একদশক ধরে জনগণ ক্ষমতাসীনদের মুখে একটাই ‘বুলি’ শুনে আসছে ‘জিরো টলারেন্স’তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্ষমতাসীনরা শুধুমাত্র বিরোধী দল ও মতের প্রতিই ‘জিরো টলারেন্স’। আর বরাবরই তাদেরকে দেখা যাচ্ছে দুর্নীতি, ঋণখেলাপি, লুটপাট, টাকা পাচার আর ব্যাংক লুটেরাদের প্রতি উদার। লুটেরাদের কবলে পড়ে দেশটা এখন রসাতলে যাওয়ার উপক্রম। এ কারণেই বর্তমান সংকটে, দেশে অসহায়-অবহেলিত-ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার বাড়তে থাকলেও সরকার দরিদ্র মানুষের পাশে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারছেনা।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট করেই বলেছেন, গত একদশকে দেশ থেকে নয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে আটশো দশ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, দেশে এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণের পরিমান প্রায় একলাখ কোটি টাকা, সরকারের প্রশ্রয়ে কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন পর্যন্ত হজম করে ফেলা হয়েছে। লুটেরা দল এভাবে দেশের লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, লোপাট আর লুটপাট করার সুযোগ না পেলে জনগণকে হয়তো এখন অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাতে হতোনা।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, এখনকার করুণ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, দেশবাসী এবার এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পবিত্র সিয়াম পালন করেছে। এবারের ঈদে অনেকের ঘরেই থাকছেনা ঈদ উৎসবের আমেজ। কারণ, মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের হানায় অনেকেই স্বজন হারিয়েছেন। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হারিয়েছেন অল্প আয়ের চাকরি কিংবা স্বল্প পুঁজির ব্যবসা-বাণিজ্য। অপরদিকে ক্ষমতাসীন অপশক্তি কর্তৃক গুম খুন অপহরণ আর জেল জুলুমে অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। একদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক অন্যদিকে খাদ্যাভাবে ঘরবন্দি অসংখ্য অগণিত মানুষের হাহাকার। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঘুর্নিঝড় আম্পানের আঘাত জনজীবনে নতুন করে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এমন অমানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায়, সময়ের দাবি হলো, দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শন। ‘সতর্কতা-সহায়তা-মানবিকতা’র চেতনায় অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।

রিজভী বলেন, সারাদেশে অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এবং ত্রাণের চাল ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছিল অথচ সেনাবাহিনীকে না দিয়ে সে দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের হাতে। ফলে গরিব মানুষের জন্যে দেয়া ত্রাণের চাল এখন পাওয়া যাচ্ছে আওয়ামী নেতাদের গুদামে, পুকুরে কিংবা খাটের নিচে। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ চোর’ থেকে ‘চাল চোর’, সেই একই চক্র, একই দল, একই কাহিনী, একই বাহিনী।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, গত একযুগ ধরে সারাদেশে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন অপশক্তির গুম-খুন-অপহরণ-জেল-জুলুম-মিথ্যা মামলা-হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। মিথ্যা মামলার খরচ বহন করতে করতে হাজার হাজার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ধারাবাহিক সংগ্রামে অনেকেই হারিয়েছেন সহায়-সম্পদ। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা মনোবল হারাননি, নিজেরা নির্মম অমানবিকতার শিকার হয়েও মানবতা হারাননি।

রিজভী বলেন, সারাদেশে অনেক অসহায় গরিব কৃষক বর্গা চাষিদের ক্ষেতের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে ছাত্রদল, যুবদল ও কৃষক দলের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের মতো পেশাজীবী সংগঠনগুলোও হাসপাতালগুলোতে পিপিই, সার্জিক্যাল মাস্ক, তৈরী খাবার সরবরাহ, অনলাইন চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া, হাত ধোয়ার জন্য বিভিন্নস্থানে বেসিন স্থাপনসহ সম্ভব সবধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। দলের এসব নেতাকর্মীদের প্রশংসা করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন। অসহায় মানুষের সহযোগিতায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন এ জন্য তারেক রহমান দল ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তাদেরকে অভিনন্দন জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন