বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এবারের ঈদের নামাজ কোথায় কীভাবে পড়বো? জরুরী ফতওয়া ও পরামর্শ

আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২০, ৬:৩২ পিএম

ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া সুন্নত। বৃষ্টির কারণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদে পড়েছিলেন, তাই কারণবশত ঈদের জামাত মসজিদে পড়া যায়।
 
বিশ্বব্যাপী শহরে নগরে জনসংখ্যা অনুপাতে ঈদগাহ ও উন্মুক্ত মাঠের অপ্রতুলতাও এসময় মসজিদে নামাজ অনুষ্ঠান সুন্নাহসম্মত হওয়ার একটি কারণ। অবশ্য ঈদগাহ ও উন্মুক্ত মাঠে ঈদের জামাত পড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারাজীবনের আমল। এ বছর লোকজনের অধিক চলাচল ও সমাগম রোধে সরকার মাঠে ঈদের জামাত অনুমোদন করে নি। তাই মসজিদে পড়াই কর্তব্য আর এটিও সন্দেহাতীত ভাবে সুন্নাহসম্মত। 
 
কোভিড১৯ এর মধ্যে সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ মসজিদে পড়ুন। প্রতি জামাতের জন্য আলাদা ইমাম নির্ধারন করে প্রয়োজনে একাধিক জামাত করুন।
 
নিজের জায়নামাজ, হাজী রুমাল, পাক করে ধোয়া তোয়ালে, গামছা বা বেডশিট সাথে নিয়ে মসজিদে কেবল নিজের নামাজের জায়গাটুকুতে বিছিয়ে নামাজ পড়ুন। এতে প্রতি জামাতের ফাঁকে ফাঁকে মসজিদের ফ্লোর নতুন করে সেনিটাইজ করতে হবে না। 
 
জটলা পাকিয়ে না দাঁড়িয়ে এবং অযথা ঘোরাঘুরি না করে, কেবল ঈদের মূল ইবাদতটি আমরা পালন করি। যারা নানা জায়গায় আছেন, তারা এবার ঈদের বেড়ানো ও পুনর্মিলন বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন। 
 
সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ইনশাআল্লাহ সময়ে সবই করা যাবে। আপনার আমার একটু আবেগ ও  অবিবেচনা যেন আপনার অথবা অন্য কারোর ক্ষতি ও কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ।
 
বাংলাদেশের মসজিদ খোলা থাকায় মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজে শরীক হওয়া কর্তব্য। কোথাও সুনির্দিষ্ট কারণে ফুল লকডাউন থাকলে গ্রামের কমন উঠান, এপার্টমেন্টের নামাজখানা, ছাদ, কাচারি ঘরে ঈদের জামাত করা যাবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি অনুসরণ করে এসব জামাত হতে পারে। চলমান পরিস্থিতিতে  এসব পর্যায়ে সাধারণ প্রবেশাধিকার বা ইজনে আমের নিয়ম নামমাত্র হলেও  পরিপালন করতে হবে। 
 
জুমার নামাজ সহি হওয়ার মতো সেইম শর্ত ঈদের জামাতেও প্রযোজ্য । পার্থক্য হলো তিনটি। ১. ঈদের আজান নেই। ২. ঈদের খুতবা (প্রদান করা সুন্নত ) নামাজের পরে আর জুমার খুতবা (প্রদান করা ওয়াজিব )  নামাজের আগে। ৩. ঈদের নামাজে কিছু বাড়তি তাকবীর দিতে হয়। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহা ও কেরাতের আগে। শেষ রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে। 
 
ঈদের জামাত সূর্য কিছু ওপরে ওঠার পর থেকে মধ্য দুপুরের আগে পর্যন্ত পড়া যায়। সময় হিসাবে ধরুন, সকাল সাড়ে  ছয়টা থেকে বেলা এগারোটার মাঝের সময়টি। 
 
মুসাফাহা বা দুই হাতের মিলন এবং মুআনাকা বা কোলাকুলি ঈদের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিশেষ আমল বা ঈদের অংশ নয়। এ দুটি সারাবছরের  সুন্নত আমল। বৈশ্বিক মহামারি সংকট মুহূর্তের ঈদে এই সংস্কৃতি ও  অভ্যাসগত মুসাফাহা, মুআনাকা না-ই বা করলেন। মুখে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। 
 
যারা  বাস্তব ওজর বশত ঈদের জামাতে শরীক হতে অপারগ, আশা করা যায়, ওজরের কারণে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন। জামাতের ব্যবস্থা করতে না পারলে এ নামাজ পড়তে হবে না। এ নামাজ একা পড়া যায় না। এর কোনো কাজাও নেই।  কিছু ইমামের মত, আমাদের ইমাম আজমের মত এবং আমাদের ফিকাহ এবং ফতওয়া হচ্ছে একা ঈদের নামাজ না পড়া। কেননা, এর পক্ষে শক্তশালী দলিল পাওয়া যায় না। তাছাড়া এটি মুসলিম উম্মাহর দীনি ও সামাজিক সম্মিলিত ইবাদত। ব্যক্তিগত পর্যায়ের আমল নয়। একা পড়া যাবে না। মসজিদেও যাওয়ার সুযোগ না থাকলে অন্তত দুই একজন মুসল্লী ও পরিবারের লোকজন নিয়ে জামাতে পড়তে হবে। 
 
একটি মত আছে যে একাও পড়া যাবে। এটি কিছু ইমামের অভিমত। শাফেয়ী ও হাম্বলী ফিকাহ এটি অনুমোদন করে। এজন্যই মিসর,সউদী আরব,কতিপয় আরবদেশ, মালয়েশিয়ায় একা নামাজ পড়ার ফতওয়া দেওয়া হয়েছে। সেসব দেশের হানাফী ফিকাহ অনুসারীরা ঘরে একাকী নামাজ পড়বেন না। মাঠ ও মসজিদেও যেহেতু নামাজ পড়ার অনুমতি নেই। অতএব, আমাদের মতে, দু´একজন মুসল্লী নিয়ে ঘরোয়া জামাতেই অতিরিক্ত তাকবীর দিয়ে দুই রাকাত পড়ে নিবে। না পারলে খুতবা ছাড়াই পড়বে, কেননা ঈদের খুতবা ওয়াজিব নয়। এমন নামাজ জরুরী অবস্থায় অনুমোদিত। 
 
জুমার বদলে জোহর পড়ে নেওয়ার মতো ঈদের নামাজের কোনো বিকল্পও নেই। অপারগ অবস্থায় যে কারো ঈদের নামাজ ছুটে গেলে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হতে হবে না ইনশাআল্লাহ। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ অপারগ অবস্থায় ঈদের নামাজে শরীক হতে না পারলে তিনি গুনাহগার হবেন না। 
 
জননিরাপত্তা, জরুরী নাগরিক সেবা, কড়া লকডাউনে আবদ্ধ, চিকিতসা, সিরিয়াস রোগীর খেদমতে নিয়োজিত ইত্যাদি একান্ত জরুরী অবস্থায় একজন ইমাম দুই কিংবা তিনজন মুসল্লী নিয়ে নিজ অবস্থানস্থলেও  ঈদের জামাত পড়ে নিতে পারবেন। আলেম ইমাম না পাওয়া গেলে, ইমাম সাধারণ নামাজি ও ইমামতের নিয়ম জানা তুলনামূলক ধার্মিক ব্যক্তি হলেও চলবে। 
 
খুতবা দিতে সক্ষম না হলে খুতবা ছাড়াই শুধু দুই রাকাত পড়ে নিবে।খুতবার সুন্নত আদায়ের ইচ্ছা ও সাহস করলে প্রথম খুতবায় আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, সূরা ফাতিহা, দুরুদ শরীফ ও রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া...পড়ে দিলে চলবে। 
 
দুই খুতবার মাঝখানে মিন্বর না থাকাবস্থায় একটি চেয়ার টুল বা বক্সের উপর তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা পরিমাণ বসে, আবার দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবায় আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহসহ সূরা আন নাসর অর্থাৎ ইযা জাআ সূরাটি পাঠ করে, আসতাগফিরুল্লাহ, দুরুদ শরীফ, দোয়া মাসূরা ইত্যাদি পড়ে নিলেও চলবে। 
 
ঈদের খুতবার মধ্যে কয়েকবার তাকবীরের বাক্যটি পড়া সুন্নত। এ পরিমাণ পাঠ জুমার খুতবা হিসাবেও জরুরী অবস্থায় পড়া যায়। জুমা ও ঈদের খুতবার অপরিহার্য অনুষঙ্গের সবই এ সংক্ষিপ্ত কোর্সটিতে রয়েছে। আলেম হলে আরো সুন্দর করে প্রমিত খুতবা প্রদান করবে।
 
আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুনাহ ছাড়ার ও নেক আমল করার তাওফীক দিন এবং বিশ্বকে বালা-মুসীবত, মহামারী, রিজিকের সংকীর্ণতা, আর্থিক সংকট ও সমুদয় শঙ্কা থেকে মুক্ত করে দিন। রমজান আবারও আসুক সকলের জীবনে, ঈদ হোক জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লাভের আনন্দে আনন্দময়।
 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abdul hamid ২৪ মে, ২০২০, ১:১৮ পিএম says : 0
খুব সুন্দর পরাপশ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন