বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনায় ঈদেও সিনেমা হল বন্ধ, ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২০, ৩:৩৭ পিএম | আপডেট : ৩:৫৪ পিএম, ২৪ মে, ২০২০

প্রানঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে মরার উপর খারার ঘায়ের মতো আঘাত হেনেছে। অঘোষিত লকডাউনের কারণে গত প্রায় তিন মাস ধরে দেশের সিনেমা হলগুলো বন্ধ রয়েছে। ঈদেও সিনেমাহল ও সিনেপ্লেক্সগুলো বন্ধ থাকায় এ শিল্পের কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। আর এই ক্ষতি পুষিয়ে ভবিষ্যতে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কিত।
দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প। করোনা এই ধুঁকতে থাকা চলচ্চিত্রের গায়ে এবার যেন মরণ কামড় দিয়েছে। দেশের চলচ্চিত্র শিল্প বেঁচে থাকা নিয়ে এখন বড় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে এই শিল্প ধরে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করছিল। এর মধ্যে করোনার হানা যেন চলচ্চিত্রের পুরো মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে।
চলচ্চিত্র শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এখন খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা চলচ্চিত্র শিল্প কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? দেশের বিভিন্ন সিনেমাহলসহ আধুনিক মাল্টিসিনেপ্লেক্সগুলোও পড়বে বড় ধরনের লোকসানের মুখে। সিনেমায় লগ্নি করা অর্থ সচল না থাকায় এবং করেনার কারণে ঈদ উৎসবেও সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকায় সিনেমা খাত সংশ্লিষ্টদের প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা হতে পারে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, গত তিন মাস ধরে সিনেমাহল বন্ধ থাকায় যে অব্যাহত লোকসান হচ্ছিল তা এই ঈদে পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কারণ, হলগুলোর টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় অর্থের যোগান আসে বিভিন্ন উৎসব থেকে। অথচ এবার করোনাভাইরাসে কারণে ঈদুল ফিতরের উৎসবের সময় সিনেমা হলগুলো থাকবে বন্ধ। এই ধাক্কা সামাল দেওয়া অনেক হলমালিক ও প্রযোজকের পক্ষে সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সামগ্রিকভাবে হলের পরিস্থিতি নিয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, দেশে স্বাভাবিক সময়ে চালু থাকা সিনেমা হলের সংখ্যা একশ’র নিচে। এখন সব বন্ধ। করোনার কারণে গত কয়েক মাসে যে অবস্থা যাচ্ছে, সামনেও যদি এমন চলে দেশের সব সাধারণ হল চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আর ফিরতে পারবে কিনা সন্দেহ। এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা খুব জরুরি। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রীর এ শিল্পের প্রতি সুদৃষ্টি দেবেন। করোনার পর অন্তত ১০০ কোটি টাকা প্রনোদনা পেলে, চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।
সিনেমাহল মালিক ও মাল্টিসিনেপ্লেক্সগুলোর কর্ণধারদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের টাকা জোগাড়ের চিন্তায় তার এখন অস্থির। লকডাউনের সময় যদি ঈদের পর আরও বাড়ে, সেক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা তাদের করতে হবে। সেই বিকল্প যে সিনেমা হলই বন্ধ করে দেওয়ার ইঙ্গিত তা সহজেই বোঝা যায়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে স্বাভাবিক সময়ে চালু থাকা সিনেমা হলের সংখ্যা ৭০টি। বন্ধ হওয়া সব হল মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৭ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন জানান, ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা হলগুলো যদি ১৮ জুন পর্যন্ত একই অবস্থায় থাকে তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কোনও ধরনের প্রণোদনা না পেলে এই ক্ষতির পুরো টাকাটা দিতে হবে হল মালিকদের নিজেদের পকেট থেকে। অনেক হল মালিকের পক্ষে যা একেবারেই অসম্ভব।
মধুমিতা হলের কর্ণধার ও হল মালিক সমিতির সাবেক নেতা ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘কর্মচারীদের মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন এখনও দিতে পারিনি। আমার প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিলই আসে ৮ লাখ টাকার ওপরে। ভবনের অন্য অংশের ভাড়ার টাকা দিয়ে এখানে থোক বরাদ্দ রাখি। কিন্তু, অন্যদের কাছেও ভাড়া চাইতে পারছি না। নিজের কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছি না। আবার ঈদ। তাদের বোনাসও কিভাবে দেব। সব মিলিয়ে খুবই মনোকষ্টে আছি। এই হলটা আব্বার স্মৃতি। নইলে কবেই এটি বন্ধ করে দিতাম। করোনার যে পরিস্থিতি জানি না, ভবিষ্যতে হলের অবস্থা কী হবে।
দেশের মাল্টিসিনেপ্লেক্সগুলোর সাফল্য এসেছে স্টারসিনেপ্লেক্সের হাত ধরে। ঢাকা শহরে তিনটি স্থানে তাদের মাল্টিসিনেপ্লেক্স। সিনেমাহলের মোড়ক পরিবর্তন আনা এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। তিনি বলেন, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, সীমান্ত সম্ভার ও মহাখালীতে আমাদের সিনেপ্লেক্স চালু ছিল। এ হলগুলোর ফ্লোর ভাড়া, কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ সব মিলিয়ে মাসে লাগে আড়াই কোটি টাকা। রোজার ঈদ পর্যন্ত সব কর্মচারীদের বেতন আমরা দিয়ে দিয়েছি। তবে বড় মাথাব্যথা ব্যাংকের ইন্টারেস্ট। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। জানি না জুনে আবার লোন ম্যানেজ করতে পারবো কিনা।
সিনেমা শিল্পে জড়িত আছে আরও অনেক কিছুই। প্রযোজক সমিতির তথ্য মতে, এবারের ঈদকে ঘিরে ৩৫০ কোটি টাকার ওপরে বড় লগ্নি হয়েছিল। যার সবটাই আটকে গেছে। শাকিব খান, আরিফিন শুভ ও অনন্ত জলিলদের মতো নায়কদের নিয়ে করা বড় বাজেটের ছবি তৈরির পর আটকে আছে। প্রস্তুত আছে ১৪-১৫টি ছবি। অনেকের অর্ধেক কাজ আটকে গেছে। এগুলো ঈদে মুক্তি পেলে, টাকা রোলিং হতো। বড় একটা প্রফিট উঠে আসতো। সেটা আবার পরের ঈদে কাজে লাগত। ইন্ডাস্ট্রিও কিছুটা স্বস্তি পেত। সমিতির হিসাব মতে, চলচ্চিত্র শিল্পের সব মিলিয়ে ৫০০ কোটির টাকার লোকসান হবে।
রোজার ঈদকে টার্গেট করে বানানো বড় বাজেটের ছবি ছিল আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’। এ তালিকায় আছে শাকিব খানের ‘বিদ্রোহী’ ও ‘নবাব এলএলবি’ নামের দুটি চলচ্চিত্র। ঈদকে কেন্দ্র করে মুক্তির আলোচনায় ছিল সিয়াম আহমেদের ‘শান’ ও ইয়াশ রোহানের ‘পরাণ’। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরও কিছু চলচ্চিত্র ঈদে মুক্তির তালিকায় যুক্ত হতে পারতো। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বসুন্দরী, ঊনপঞ্চাশ বাতাস, জিন, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২, বান্ধব, মন দেবো মন নেবো, আমার মা, পাগলের মতো ভালোবাসি ইত্যাদিকরোনায় এসব চলচ্চিত্রের অনেকগুলোর শুটিংই শেষ হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Tareq Sabur ২৪ মে, ২০২০, ৫:২৯ পিএম says : 0
Loss? What type of loss?? And, whose loss?? In fact, there is no loss. The 500 crore take you are talking about already is in the pockets of public or they spent some of the money in other way. So, owners of cinema halls and all relevant people's could not make this money from public's pocket.
Total Reply(0)
Abdur Rafi ২৪ মে, ২০২০, ৫:৩৯ পিএম says : 0
জনগণের অন্নের ব্যবস্হা করেন। অন্ন ছাড়া অন্য কিছু ত্রান সাহায্য দেয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। লকডাউন সফল করতে অন্ন প্রয়োজন। ফালতু সিনেমা,গার্মেন্টস আরে রিক্সাচালাতে না পেরে ৩ মাসে ঘর ভাড়াটা কে দেবে বেশির ভাগ জনগণ গরিব ভোট ত তারাই দেবে গার্মেন্টস মালিকরা কয়টা ভোট দেয়। ও হ্যা ঘর ভাড়া গার্মেন্টস কর্মীদের ই বকেয়া আছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন