বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বালিয়াকান্দিতে সংক্রমন বাড়ছে, টনক নড়ছে না এলাকাবাসীর

একদিনে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমন ১০! মোট আক্রান্ত ১৬

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২০, ৭:৪৯ পিএম

ঈদুল ফিতরের প্রভাবে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের হাটে বাজারে বিপনী বিতানগুলোতে রবিবার সকালে হঠাৎ করেই ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে, টনক নড়ছেনা এলাকাবাসীর। অপরদিকে উপজেলাতে ধীরে ধীরে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সামাজিক সংক্রমণ ঘটছে। রবিবার জংগল ইউনিয়নে সাধুখালী গ্রামে ৯ জন নতুন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। তারা ১৪ মে সনাক্ত হওয়া ৩ জন করো পজেটিভ রোগীর প্রতিবেশী। এছাড়া জামালপুর ইউনিয়নের বাকছিরডাংগী গ্রামেও ১ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। এ দিয়ে রবিবার একদিনে উপজেলায় মোট সনাক্ত হলো ১০ জন। সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ১৬। নতুন করে করোনা ভাইরাসের এ সামাজিক সংক্রমনে টনক নড়ছে না উপজেলার জনগনের। প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রশাসনকে কঠোর হতে হচ্ছে।
উপজেলার সুধিমহল জানিয়েছেন, বালিয়াকান্দির নিবিড় পল্লীগ্রামগুলো করোনা ভাইরাস সংক্রামনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা- সামাজিক দূরত্ব তেমন নেই বললেই চলে। দেশের করোনা সংক্রমিত এলাকাগুলো বিশেষ করে মিল-ফ্যাক্টরীগুলোতে কাজকরা মানুষগুলো চুপি চুপি গ্রামে ফিরছে। সামাজিক দূরত্ব না মেনে পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিশছে। হোমকোয়ারেন্টাইন না মেনে তথ্য গোপন করে তারা এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাচ্ছে। কারণে অকারণে বাড়ী থেকে বের হয়ে যাচ্ছে হাটে- বাজারে। প্রথম দিকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে অনেকাংশেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয়েছিল। কিন্তু উপজেলার অধিকাংশ মানুষের মাথাপিছু আয় কম ও দরিদ্র সীমার নিচে হওয়ায় তাদেরকে সামাজিক দূরত্ব লংঘন করেই জনসমাগমস্থল বিশেষ করে হাটে বাজারে কৃষিপণ্য ক্রয়- বিক্রয় করতে যেতে হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসা যাদের একমাত্র জীবিকা, তারা পরিবার পরিজনের মুখে আহার দিতে করোনা ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান খুলছেন। ঈদুল ফিতরের উৎসবের কারণে শিশু, যুবক- যুবতী, নারী ও বৃদ্ধরা এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তাদের মধ্যে করোনা সচেতনতা বাড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরও। এদিকে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে চোর- পুলিশ খেলছে আমজনতা ও ব্যসায়ীরা। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ একদিকে টহল দিলে এরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, মাক্স মুখে দেয়, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের আড়ালে পাশাপাশি বসে সমাবেশ করে, মুখের মাক্স খুলে ফেলে তা কানে ঝুলিয়ে রাখে।
সুধিজনেরা আরও জানিয়েছেন, উপজেলাকে করোনা মুক্ত রাখতে গত ১১ এপ্রিল তারিখে উপজেলার সড়কগুলোর আংশিক লকডাউন করার ঘোষণা দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। বিভিন্ন পয়েন্টে বসেছিল চেকপোষ্ট। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, চেকপোস্টের আগে থেকে গ্রামের অন্য সড়ক ঘুরে সংক্রমিত এলাকায় ঢুকেছে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই মানুষের মধ্যে যদি নিজ থেকে সচেতনতা না আসে, যত আইন করা হোক না কেন, সুযোগ সন্ধানীরা নিজস্ব একটি কৌশল বের করে আইন লঙ্ঘনের চেষ্টা করে। সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে করোনা দূর্যোগে দুঃস্থ-অসহায় ও কর্মহীন পরিবারের মধ্যে ত্রাণ, নগদ অর্থ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ কার্যক্রম আরো জোড়ালো করা প্রয়োজন। করোনা দূর্যোগে এখনও অনেক কর্মহীন মানুষ মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের আওতার বাইরে রয়েছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন উপজেলার সুধীমহল।
থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম আজমল হুদা জানিয়েছেন, বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে সংক্রমন ঝুঁকি নিয়ে উপজেলাব্যাপী কাজ করছে। থানায় যথেষ্ট পুলিশ সদস্য সক্রিয় রয়েছে। তিনি পুলিশের সঙ্গে আমজনতা ও ব্যসায়ীদের চোর- পুলিশ খেলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জনগণকে করোনা প্রতিরোধে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী বিতরণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমানের কথা উল্লেখ করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাফিন জব্বার জানিয়েছেন, এখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৪৪ জনের, স্থানীয় সামাজিক সংক্রমনে রবিবার পর্যন্ত করোনা পজেটিভ হয়েছে ১০ জনের। এদিয়ে উপজেলাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৬। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১। করোনা প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের সকল চিকিৎসক কর্মকর্তা- কর্মচারীরা কাজ করছেন। বিশেষ করে কমিউিনিটি ক্লিনিকগুলো বেশী ভূমিকা রাখছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার একে এম হেদায়েতুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলাতে নতুন করে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমনের কারণে উপজেলার হাট বাজার দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরীসেবা, ওষুধের দোকান ও কাঁচামাল- কৃষিপণ্যের বেচাকেনা আওতামুক্ত থাকবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত সর্বসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার পরিবারের মধ্যে মানাবিক সাহায্য দেয়া হয়েছে। সংক্রমিত এলাকাগুলো লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে ও সংক্রমিত পরিবারের মধ্যে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
উপজেলায় নতুন করে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমন প্রতিরোধ ও দুঃস্থ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রসঙ্গে মুঠোফোনে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলার যেখানেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন হবে- সেখানেই লকডাউন করে দেয়া হবে। লাকডাউন করা এলাকার পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ সহ জরুরী মানবিক খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। জনস্বার্থে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক মাইকিং প্রচার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বক্ষণিক সংক্রমিত এলাকা তদারকি করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে নগদ অর্থ সহ মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত এলাকায় জনগণের সাথে কথা বলছি ও তাদের পাশে দাড়াচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন