মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিশ্বনাথে সাদা পোষাকে আসামি ধরতে গিয়ে ২ র‌্যাব সদস্য লাঞ্চিত : পুরুষ শুন্য এলাকা

বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২০, ৯:১৯ পিএম

সিলেটের বিশ্বনাথে সাদা পোষাকে আসামী ধরতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়েছেন র‌্যাব-৯ এর দুই সদস্য। রোববার দুপুরে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পেছি খুরমা গ্রামের ব্যবসায়ী হাজী বেলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ব্যবসায়ী ও তার আতœীয়-স্বজনের বসত ঘরে ব্যাপক ভাংচুর-লুটপাট করার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। একই সময়ে র‌্যবের হাতে ইনকিলাব পত্রিকার বিশ্বনাথ প্রতিনিধি আব্দুস সালাম লাঞ্চিত হয়েছেন ও র‌্যাবের লাঠির আঘাতে ভেঙ্গে গেছে ক্যামেরা।
এদিকে দুই র‌্যাব সদস্য লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় সিলেট র‌্যাব-৯ এর এসআই প্রনব রায় বাদী হয়ে সোমবার বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। (মামলা নং-১৫, তাং ২৫.০৫.২০ইং)। ব্যবসায়ী বেলাল মিয়াকে প্রধান অভিযুক্তসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে পুরুশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। ফলে গ্রামে মহিলা ও শিশুদের মনে বিরাজ করছে এক অজানা আতংঙ্ক। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় অজ্ঞাতনামা যুবকদের মোটর সাইকেল মহড়াও বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অটোরিক্সা সিএনজি চুরির শালিস বিচারের জের ধরে ব্যবসায়ী বেলাল মিয়া গংদের অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করা করেছে একটি পক্ষ। মামলায় বেলাল মিয়াকে গ্রেফার করতে (২৪ মে) রোববার দুপুরে তার (বেলাল মিয়ার) বাড়িতে সাদা পোষাকে তরুণ ২ র‌্যাব সদস্য যান। ওই দিন বলাল মিয়ার বাড়িতে একটি শিন্নির জন্য একটি গরু জবাই করা হয় এবং সেখানে ৪০/৫০ জন লোকের সাথে তিনিও বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। এসময় বেলাল মিয়াকে গ্রেফতার করতে গেলে শুরু হয় ধস্তাাধস্তি। তখনও র‌্যাবের সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দেন নি। এর পূর্বের দিন (শনিবার) একদল বহিরাগত মোটর সাইকেলে মহড়া দিয়েছেন। আর তাই বেলাল মিয়ার সাথে র‌্যাব সদস্যদের ধস্তাধস্তির ফলে বাড়িতে থাকা লোকজন ওই দুই র‌্যাব সদস্যকে পূর্বের দিনের বহিরাগত মনে করে ধাওয়া করেন। গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে র‌্যাবের ওই দুই সদস্য বেলাল মিয়ার বাড়ির দক্ষিণের খালে পাড়ি দিয়ে গ্রামের দক্ষিণ দিকে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় একই গ্রামের জুনেদ মিয়া ও আরিফ আলী এর সম্মুখিন হয়ে তারা নিজেদেরকে র‌্যাবের সদস্য বলে পরিচয় দেন। র‌্যাবের পরিচয় পাওয়ার পর পরই তাদের দুজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখেন গ্রামবাসী। বিষয়টি সিলেট র‌্যাব-৯ এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে সিলেট থেকে র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দু‘জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই সাথে বেলাল মিয়ার বাড়ির দক্ষিনের খাল থেকে তাদের ফেলে যাওয়া একটি পিস্থলও উদ্ধার করেন র‌্যাব সদস্যরা। এসময় ব্যবসায়ী বেলাল ও তার আতœীয়-স্বজনদের বসত ঘরে মোট ৩টি থাকা মোটর সাইকেল, আসবাবপত্র ব্যাপক হারে ভাংচুর এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংঙ্কার লুটপাঠ হওয়া ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাংবাদিক আব্দুস সালাম। এসময় ভাংচুরের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক আব্দুস সালাম র‌্যাব সদস্যের হাতে লাঞ্চিত হন। এসময় র‌্যাবের লাঠির আঘাতে ভেঙ্গে যায় তার ক্যামেরা।
এব্যাপারে ব্যবসায়ী হাজী বেলাল মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম অভিযোগ করেন, রোববার বিকেলে দুজন অজ্ঞাতানা ব্যক্তি আমার স্বামীকে খোঁজে বাড়িতে এলে তিনি (বেলাল) ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই তাকে মারধর শুরু করেন তারা। এরপর শনিবারের মোটর সাইকেলের বহিরাগত মনে করে বাড়িতে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর বিকেলে মাতায় হেলমেট পরিহিত ২০/৩০ জন লোক আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে বসত ঘরে থাকা মোটর সাইকেল ও আসবাবপত্র ব্যাপকহারে ভাংচুর করে আমার স্ট্রীল আলমিরাতে থাকা ৩/৪ ভরি স্বর্ণালংঙ্কার ও নগদ ৩/৪ হাজার টাকা লুটকরে নিয়ে যায়। এরপর জানতে পারে প্রথমে আসা দুজন র‌্যবের সদস্য ছিলেন। তবে ভাংচুর ও লুটপাঠকারীদের তিনি ছিনতে পারেন নি।
একই সময়ে ব্যবসায়ী হাজী বেলাল মিয়ার দক্ষিণ পার্শ্বের ঘরের সাজ্জাদ আলী মুতায়াল্লির ঘর ও সামনের বাড়ির লিলু মিয়ার বসত ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। তবে সাজ্জাদ আলী মুতায়াল্লির ঘরে শুধু ভাংচুরের অভিযোগ থাকলেও লিলু মিয়ার ঘরে ভাংচুরের পাশাপাশি তার ঘরে থাকা নগদ ১ লাখ টাকা লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৬০)। তবে মাতায় হেলমেট থাকায় অজ্ঞাতনামা হামলাকারীদের তারা ছিনতে পারেন নি বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় মেম্বার রিয়াজ আলী বলেন, পরিচয় পাওয়া সাথে সাথেই দুই র‌্যাব সদস্যকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখেন গ্রামবাসী। এরপর গ্রামের লোকজনের মোবাইলের মাধ্যমেই উনারা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। শনিবার একদল বহিরাগতের মোটর সাইকেল মহড়ার আতংঙ্ক এবং প্রথমেই নিজেদের পরিচয় না দেওয়ায় ওই দিন আসলে র‌্যাব সদস্যদের সাথে দুঃখজনক ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে।
অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন রুহেল বলেন, প্রথমেই নিজেদের পরিচয় না দেওয়ায় দুই র‌্যাব সদস্যের সাথে যা হয়েছে তা অনাকাঙ্খিত। আমরা এর জন্য লজ্জিত। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে র‌্যাবের যাহারা পরবর্তিতে তাদের বসত ঘরে ভাংচুর ও লুটপাঠের করেছে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এর সাথে জড়িতদের বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা। এদিকে বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এমপি মোকাব্বির খান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া। অন্যদিকে র‌্যাবের হাতে লাঞ্চিত হওয়া ও লাঠির আঘাতে ক্যামেরা ভেঙ্গে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন সাংবাদিক আব্দুস সালাম।
সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে সিলেট র‌্যাব-৯’র অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আবু মুসা মোঃ শরীফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভাংচুর-লুটপাটের ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই। এখানে ওই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। আর সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন